মাঈনুল ইসলাম নাসিম : রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের গ্রীসে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে দালাল সিন্ডিকেটের জঘন্য অপকর্মের শতভাগ সত্যতা আবারো নিশ্চিত হয়েছে। উন্মোচিত হয়ে গেছে তাদের মুখোশ। ঢাকায় প্রেরিত বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগনামায় সজ্ঞানে স্বাক্ষরিত শেখ কামরুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান মিজানই ছিলেন ভূয়া-বানোয়াট অডিও টেপের নেপথ্যে, তা তাদের ঔদ্ধত্বপূর্ণ কথায় ও আচরণে আরো পরিষ্কার হয়ে গেল। এই প্রতিবেদককে ‘দেখে নেয়ার’ও হুমকি দিয়েছেন তারা। ‘মাস্টার এডিটিং’র সহায়তায় শতভাগ ভূয়া অডিও টেপ প্রোডাকশনে গিয়ে দিনকে রাত বানানো চক্রান্তকরীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে গ্রীস সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ কমিউনিটি থেকে। ভূয়া অডিও সিডির সাথে চিহ্নিত দালালদের স্বাক্ষরিত বানোয়াট অভিযোগনামার ভিত্তিতেই গত ক’দিনে দেশে-বিদেশে ঘটলো এতো তুলকালাম। আনীত অভিযোগের জবাব দিতে রাষ্ট্রদূতকে ২ সপ্তাহ ঢাকায় অবস্থান করতে হয়, তবে পররাষ্ট্র দফতরের সুচিন্তিত সিদ্ধান্তে স্বপদে বহাল থাকেন রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ, বৃদ্ধি পায় সরকারের ইমেজ।
শেখ কামরুল ও মিজানের নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রীসের সর্বনাশা দালাল সিন্ডিকেটের হাতেই বছরের পর বছর জিম্মি ছিল হাজার হাজার নিরীহ বাংলাদেশি। তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন প্রায় চার বছর এথেন্সে কাউন্সিলরের দায়িত্বে থাকা বিএম জামাল হোসেন, যিনি বর্তমানে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (এমআরপি) হিসেবে কর্মরত আছেন। এথেন্সে থাকা অবস্থায় বিএম জামাল সকাল-সন্ধ্যা দালাল পরিবেষ্টিত থাকতেন খোদ দূতাবাসের ভেতরেই। অভিযোগ আছে, পুলিশের চাকরি ছেড়ে পররাষ্ট্র দফতরে যোগ দেয়া এই কর্মকর্তা গ্রীসের রাজধানীতে মুখচেনা দালালদের সহায়তায় হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ ইউরো। স্থানীয় এই দুই দালালও একই সময় কোটি টাকার মালিক বনে যান। তাদের অপকর্মের শতশত প্রমাণ সযত্নে সংরক্ষতি আছে এথেন্সের সাধারণ জনগণের কাছেও।
ঐ সময় এথেন্সে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে থাকা অভিজ্ঞ কূটনীতিবিদ মুহম্মদ আজিজুল হক আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেও বিএম জামালকে নিবৃত রাখতে পারেননি। ২০১২ সালের শেষ দিকে রাষ্ট্রদূত আজিজুল হক এথেন্স থেকে বেইজিং বদলি হলে জাকার্তা থেকে এসে যোগ দেন পূর্ণ সচিব পদমর্যাদার সিনিয়র কূটনীতিবিদ গোলাম মোহাম্মদ। সিন্ডিকেট ভিত্তিক পাসপোর্ট বানিজ্য তখন জমজমাট। কাউন্সিলর বিএম জামাল ‘টাকার ম্যাশিন’ ছেড়ে এথেন্সকে বিদায় জানাতে না চাইলেও একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোহাম্মদের জিরো টলারেন্সে কয়েক মাসের মধ্যে ঢাকায় ফিরতে বাধ্য হন। রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের উপর বিএম জামালের ক্ষোভের শুরুটা এখানেই। সুচতুর এই অফিসার ঢাকায় বসেই এথেন্সে গুটি চালতে থাকেন। অপেক্ষা সুযোগের, যা এসে যায় এক বছরের মাথায়। দুই শীর্ষ দালাল শেখ কামরুল ও মিজানকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে অডিও টেপ কেলেংকারির ফাঁদ পাতা হয়। সরকার ও সরকারের মন্ত্রীদের কঠোর সমালোচক রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ, অডিও টেপের ‘হোমমেড’ কারুকাজে এমনটাই বোঝানো হলে নড়েচড়ে বসে ঢাকার পররাষ্ট্র দফতর।
মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের ঢাকায় যাওয়ার পথ প্রশস্ত করতে তথা এর ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরীর পেছনে এথেন্সের দুই শীর্ষ দালালকে বিএম জামালই গাইড করেছেন সুনিপুনভাবে, নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র ইতিমধ্যে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে ১৭ মে শনিবার ঢাকা থেকে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। সিন্ডিকেট বানিজ্য দূরের কথা, চার বছর এথেন্সে কাউন্সিলর থাকাকালীন কোন দালাল নাকি দূতাবাসে ঢোকারই সুযোগ পায়নি, এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের এমনটাই জবাব দেন বিএম জামাল। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ‘ডাহা মিথ্যা’ বলে জানান তিনি।
রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে মিথ্য অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরকারী শেখ কামরুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান মিজানের সাথেও শনিবার যোগাযোগ হয় এই প্রতিবেদকের। এথেন্সে একাধিক নামে পরিচিত মিজান কোন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বরং কেন তাকে ফোন দেয়া হলো পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে ফোন রেখে দেন। শেখ কামরুল অকথ্য ভাষায় শাসিয়ে দেন এই প্রতিবেদককে এবং ‘দেখে নেয়া হবে’ বলে হুমকি দেন। গ্রীস আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে পরিচয়দানকারী শেখ কামরুলের উপর অনেক আগ থেকেই আস্থা নেই নেতা-কর্মী কারোই। রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় গ্রীস আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহের একজন নেতা-কর্মীকেও কাছে টানতে পারেননি শেখ কামরুল বরং নেক্কারজনক এই ইস্যুতে আজ সাধারণ জনগনের রোষানলের মুখে তিনি। বাংলাদেশ-গ্রীস চেম্বারের সেক্রেটারি হিসেবে মিজানুর রহমান মিজানের একটি ‘সাইনবোর্ড সর্বস্ব’ পরিচয় থাকলেও শেখ কামরুলের মতো তারও মূল ব্যবসা অবৈধ হুন্ডি ও দুই নম্বর ডকুমেন্টের এবং এসবের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ঠকবাজির ধান্ধা। রাষ্ট্রদূত পহেলা মে এথেন্স ত্যাগ করার বেশ ক’দিন আগ থেকেই মিজান ঢাকায় অবস্থান করে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন বিএম জামালের সাথে।
গ্রীসে বিএম জামালের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রত্যক্ষ মদদে গড়ে ওঠা সর্বনাশা দালাল চক্রকে জঘন্য সিন্ডিকেটবাজি থেকে নিবৃত করতে তখন এথেন্সের কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ কতটা আন্তরিক ছিলেন তা নিয়েও বিভিন্ন দেশে কথা উঠছে আজ। পাসপোর্ট বানিজ্যের ‘সুপার সিন্ডিকেট’ নিষ্ক্রিয় করতে তথা তাদের অপকর্ম ঠেকাতে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের ভূমিকা আরো ইতিবাচক হতে পারতো বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিএম জামাল সহ এথেন্সের চিহ্নিত দালালদের বিরুদ্ধে চরম ক্ষুব্ধ আজ গ্রীসের শোষিত-নির্যাতিত হাজার হাজার বাংলাদেশি। সবার একই কথা, দালাল সিন্ডিকেটের নোংরামির শেষ কোথায় ? সমাজবিরোধীদের অপকর্ম আর কতকাল ?
[[ আপনি জানেন কি? আমিওপারি ওয়েব সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা প্রকাশ করার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে এই লেখায় ক্লিক করে জানুন এবং তুলে ধরুন। নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। আর আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে রয়েছে অনেক মজার মজার সব ভিডিও সহ আরো অনেক মজার মজার টিপস তাই এগুলো থেকেবঞ্চিত হতে না চাইলে এক্ষনি আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে লাইক দিয়ে আসুন এখানে ক্লিক করে। এবং আপনি এখন থেকে প্রবাস জীবনে আমাদের সাইটের মাধ্যমে আপনার যেকোনো বেক্তিগত জিনিসের ক্রয়/বিক্রয় সহ সকল ধরনের বিজ্ঞাপন ফ্রিতে দিতে পাড়বেন বিস্তারিতু জানতে এখানে ক্লিক করুণ। ]]
সম্পর্কিত আরো কিছু পোস্ট দেখতে পারেন...
গতকাল ইউরোপীয় পুলিশ সংস্থা একযোগে জটিকা অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন দেশে জাল ভিসা, ডকুমেন্টস,পাসপোর্ট, ড্র...
গ্রীসের শীর্ষ দালাল ফটো মিজানকে হাতেনাতে ধরে বাংলাদেশে ডিপোর্ট
সাবধান!!সাবধান!! প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে অভিনব প্রতারণা
অবৈধ ইমিগ্র্যান্টকে কাজ দিলে ২০ হাজার এবং বাড়ী ভাড়া দিলে ৩ হাজার পাউন্ড জরিমানা
ছয় সন্তানের জনক বেকার ব্রিটিশ দম্পতির চার রুমের বাড়ির দাবি
সুইজারল্যান্ডের ডব্লিউ.ছি.ছি তে বাংলাদেশে মানবাধিকার ও মানব নিরাপত্তা বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক