মো: রিয়াজ হোসেন, ইতালি প্রতিনিধি ঃ
ইউরোপ জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দায় ভালো নেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রতিদিনই কেউ না কেউ চাকরি হারাচ্ছেন, ব্যবসায়ও দেখা দিয়েছে মন্দা। এ অবস্থায় ইতালিতেও টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের।একদিকে ইতালিতে কৃষি ভিসায় শত শত বাংলাদেশি আসতে থাকে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক মন্দায় বন্ধ হতে থাকে দেশটির কয়েকটি কলকারখানা। প্রবাসীদের যেটুকু কাজ আছে সেগুলোতেও ইতালিয়ানরা সুযোগ বুঝে বেতন কমিয়ে দিচ্ছেন।
রোম প্রবাসী কবির হোসেন কাজ করেন রেস্টুরেন্টে। তিনি বলেন, “আমি আগে রেস্টুরেন্টে কাজ করতাম ১৫০০ ইউরোতে, অর্থনৈতিক মন্দা আর কম বেতনে প্রচুর লোক পাওয়ায় আমাকে এখন ৯০০ টাকা বেতন দিতে চায়। আর না হলে কাজ ছাড়তে বলে। সব মিলিয়ে ভালো নেই আমরা।”
ব্যাংকার ব্যবসায়ী জালাল মোহাম্মদ মফিজ বলেন, “ইতালিতে বাঙ্গালিদের দিন শেষ। এখন ব্যবসা বলেন আর কাজ বলেন, কোথাও শান্তি নাই।”
পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “৭ থেকে ৮ বছর আগেও যে দোকানে ৩০০০-৪০০০ ইউরো বিক্রি হতো, সেই দোকানে এখন ১০০ ইউরো বিক্রি হচ্ছে। মনে হচ্ছে বাঙ্গালিদের দিন শেষ হয়ে এসেছে ইতালিতে।”
ইতালিতে ১০ বছর ধরে আছেন পটুয়াখালি জেলার চয়ন। নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, “চাকরি হারিয়ে পথে পথে ঘুরতে হচ্ছে। সিট ভাড়া ১৫০ ইউরো না দিতে পারায় রাস্তাতেই থাকতে হচ্ছে। অন্যদিকে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে না পারায় সেটিও বাতিল হয়ে গেছে।”
ইতালিতে অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির পরও এক শ্রেনীর দালাল নানা প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে মানুষ নিয়ে আসছেন।
মো: নাদিম আগে সৌদি আরবে ছিলেন ৭ বছর। জমানো পুরো টাকা দিয়ে ঢাকায় একটা জুতার দোকান দিয়েছিলেন তিনি। এরপর তার পরিচয় হয় ইতালি প্রবাসী এক ব্যক্তির সাথে। সে ব্যক্তির প্রলোভনে সৌদি আরব থেকে পাড়ি জমান ইতালিতে। কিন্তু ইতালিতে এসে নাদিম দেখেন সম্পূর্ন ভিন্ন চিত্র। প্রতি মাসে খরচ ৫০০ ইউরো, কিন্তু আয় তুলনামূলক অনেক কম।
নাদিম রাস্তার পাশে নানা সামগ্রী বিক্রি করতে শুরু করলেও পুলিশসহ নানা ঝামেলায় তেমন সুবিধে করতে পারেন নি।
কৃষি ভিসায় এসে কাজ শেষে ফেরত না যাওয়ায় ইতালি সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে জনশক্তি আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে পুরোনো ইতালি প্রবাসী বাঙ্গালিরা ছেলে মেয়ে নিয়ে ভালোই দিন যাপন করছেন। বরিশালের আতাউর রহমান বাবু ইতালিতে এসেছিলেন প্রায় ১২ বছর আগে। শুরুতে নাইট ক্লাবে চাকরি নিয়েছিলেন বাবু। বর্তমানে বাবু সেই নাইট ক্লাবের ১০ জন মালিকের একজন।
তিনি বলেন, “ছেলে মেয়ে এ দেশে স্কুলে পড়াশুনা করছে। আমি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। সব মিলিয়ে ভালোই আছি।”
অন্যদিকে ইতালির পার্সপোর্ট নিয়ে অনেকে যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।
১৯৭২ সালে ইতালিতে আসেন ঝালকাঠি জেলার মো: লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, “এক সময় ইতালি ছিল বাঙ্গালিদের জন্য সোনার হরিন। তবে বর্তমানে এখানে কিছুই নেই। আমি অনুরোধ করব বাংলাদেশের যুবকদের আর কেউ যেন কারো কথায় ইতালিতে আসার চিন্তা না করে।”
বাংলা কমিউনিটির নানা সমস্যা ও হয়রানির চিত্র সম্পর্কে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন নুরুল আলম সিদ্দিকী।
নতুন আগতদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আসার আগে ভাবুন। দালালের কথায় কান দেবেন না। লাখ লাখ টাকার স্বপ্ন তারা দেখায়, কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন।”
পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “ইতালিতে বাঙ্গালিরা আসে নূন্যতম ৭ লাখ থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করে। যদি কাজ না পান তবে দেশ থেকে সর্বনিম্ন ৪০ হাজার টাকা আনতে হবে। আবার যদি কাজ পানও, সেক্ষেত্রে মাসে হয়ত ৭০০ -৮০০ ইউরোর কাজ আপনি পাবেন। সব খরচ বাদে আপনি হয়তো মাসে ২০ হাজার টাকা দেশে পাঠাতে পারবেন।”
তিনি আরো বলেন, “সে হিসাবে আপনি যে টাকা খরচ করে এসেছেন তা তুলে আনতে আপনাকে ৭-৮ বছর ইতালিতেই থাকতে হবে। ব্যাপারটি বেশ কঠিন।”
“দালালের মাধ্যমে না এসে, কোন আত্মীয়ের মাধ্যমে যদি আসতে পারেন তবে সেটা অনেক ভালো। তাছাড়া আসার আগে কাজের ব্যপারটি স্পষ্ট করে জেনে নিন,” যোগ করেন নুরুল আলম।
কেন তাহলে বাংলাদেশ থেকে সরকার কোনো বেবস্থা নেয়না?