পাসপোর্ট ইস্যুতে পুলিশি ভেরিফিকেশন থাকছে না। হয়রানি বন্ধে ও সময়ক্ষেপণের কারণে এ শর্ত বাতিল করা হচ্ছে। এর পরিবর্তে এলাকার মেম্বার বা পৌর কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা পৌরসভার মেয়রের প্রত্যয়নপত্র গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে- সঠিক ঠিকানা বা নাগরিকদের প্রত্যয়নের জন্য আবেদন ফরমে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টিআইএন নম্বর সংযুক্ত করতে হয়। আবেদন ফরমটি সরকার নির্ধারিত দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা কর্মকর্তা দ্বারা ছবিসহ প্রত্যয়ন করতে হয়। এসব তথ্য দেয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশনের কোনও প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে না। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সংসদে জানানো হয়, পাসপোর্টের জন্য ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। এটা শেষ হলে পুলিশি যাচাইয়ের দরকার হবে না। এদিকে ৩রা ফেব্রুয়ারি পুলিশি যাচাইয়ের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করতে সংসদ অধিবেশনে জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উত্থাপন করা হয়। এমপি রফিকুল ইসলাম সংসদে নোটিস দেন। এতে বলা হয়, পুলিশ প্রতিবেদনের বাধ্যবাধকতা থাকায় চাকরি চিকিৎসা, পড়ালেখা ইত্যাদিসহ বিভিন্ন উদ্দেশে বিদেশে গমনেচ্ছুক পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের হয়রানির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অভিযোগ আছে- সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা উপজেলা হেডকোয়ার্টারের বসেই ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তৈরি করেন। এ ক্ষেত্রে কিছু অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগও আছে। বিশেষ করে গুরুতর অসুস্থ রোগী বা বিদেশে চাকরি নিয়ে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ও লেখাপড়ার জন্য দ্রুত বিদেশে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীদের অনেকেই চরম ভোগান্তির শিকার হন। বহু মানুষ অপূরণীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। প্রতি উপজেলায় একজন মাত্র পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে সত্যিকার ভেরিফিকেশন অসম্ভব হয়ে পড়ে।
মন্ত্রণালয়-কমিটি চিঠি চালাচালি: এর আগে বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচলি হয়। উপস্থাপন করা হয় যুক্তি-পাল্টা যুক্তি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটি পুলিশি যাচাইয়ে আপত্তি জানিয়ে বলে, পুলিশের তদন্তর চেয়ে স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধির অঙ্গীকারনামা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও শ্রেয়। বর্তমানে অনেক অবৈধ পাসপোর্ট রয়েছে। প্রচলিত ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণেই এমনটি সম্ভব হয়েছে। সংসদীয় কমিটির সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন দেয়। এতে বলা হয়, পাসপোর্ট সংক্রান্তে পুলিশের ভেরিফিকেশন পদ্ধতি বাতিল করা হলে অবৈধভাবে পাসপোর্ট নেয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষণ্ন হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিধি অনুযায়ী সরজমিন অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাসপোর্ট আবেদনকারীর জন্ম তারিখ, পেশা, পিতামাতা সংক্রান্ত তথ্য, বৈবাহিক অবস্থা, আবেদনকারী কালো তালিকাভুক্ত কি না, তার আগের পাসপোর্ট সংক্রান্তে তথ্য গোপন করেছেন কি না ইত্যাদি। এসব তথ্য যাচাই করে আবেদনকারীর অনুকূলে প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট অফিসে পাঠানো হয়। এতে আরও বলা হয়েছে, প্রচলিত বিধি অনুযায়ী প্রথমবার একজন নাগরিক পাসপোর্ট আবেদন করলে পুলিশ ভেরিফিকেশন করে। কিন্তু সমর্পণ বা সারেন্ডার পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয় না। এতে প্রথমবার পাসপোর্ট ইস্যু করার সময় ভেরিফিকেশন না করা হলে একজন আবেদনকারী ভুয়া তথ্য সরবরাহ করে বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট গ্রহণ করলে এ নিয়ে যাচাই-বাছাই করার সুযোগ থাকে না। পরে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। মন্ত্রণালয় তাদের সুপারিশে জানিয়েছে, সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রচলিত ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা যেতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের ওই যুক্তি ধোপে টিকছে না।
সুত্রঃ মানজমিন
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতে “এখানে ক্লিক করুণ” তুলে ধরুন নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। ]]