• u. Nov ২১, ২০২৪

আমিওপারি ডট কম

ইতালি,ইউরোপের ভিসা,ইম্মিগ্রেসন,স্টুডেন্ট ভিসা,ইউরোপে উচ্চ শিক্ষা

সুইডেনে বাংলাদেশ দূতাবাসের ৪টি বাসায় জমজমাট অবৈধ বানিজ্য, যে কেন মুহূর্তে অঘটন

ByLesar

Aug 17, 2014

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে শতভাগ ভাড়া পরিশোধ করা হয়, স্টকহল্মের বাংলাদেশ দূতাবাসের এমন ৪ টি বাসায় জমে উঠেছে অবৈধ বানিজ্য। ৩ থেকে ৪ রুমের বিশাল বিশাল প্রতিটি বাসার পেছনে যাবতীয় বিল সহ হাজার হাজার ডলার দূতাবাসের খরচার খাতায় যোগ হলেও একাধিক ফ্যামেলি ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যাচেলর লোকজন দিয়ে কানায় কানায় ভরে এই অবৈধ বানিজ্য চলছে রীতিমতো ফ্রি স্টাইলে।

বানিজ্যের সীমারেখা বেডরুম পেরিয়ে ড্রয়িং রুম এমনকি করিডোর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। সাবলেট ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া বিদঘুটে নোংরা ঝগড়াঝাটি দিনরাত লেগেই আছে দূতাবাস কর্তৃক অফিসিয়ালি ভাড়া নেয়া এই বাসাগুলোতে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বৃহদাকার ৪টি এপার্টমেন্টের ২টি স্টকহল্মের বাংলাদেশি অধ্যুষিত ‘অলবি’ এরিয়াতে, যার একটি বরাদ্দ আছে রাষ্ট্রদূতের পিও কামাল হোসেনের জন্য, অন্যটিতে থাকেন দূতাবাসের এডমিনিস্ট্রেটিভ এসিস্টেন্ট শাহিদা আক্তার।

বাকি দু’টি এপার্টমেন্ট ‘ফিতিয়া’ এলাকায়, যার একটিতে দূতাবাসের একাউন্টটেন্ট ফারুক হোসেন এবং অন্যটিতে কনস্যুলার এসিস্টেন্ট মজিবুর রহমানের বসবাস। ৪টি বাসাতেই সবাই পরিবার নিয়ে থাকেন, ১ থেকে ২ বাচ্চা সবারই। ব্যবসার নিমিত্তে আয়তনে বিশাল বিশাল প্রতিটি এপার্টমেন্ট, ৩-৪ বেডরুম প্রতিটিতেই। সব ধরনের বিল ভাড়ার মধ্যেই ইনক্লুড থাকায় ইউএস ডলারের হিসেবে প্রতিটি এপার্টমেন্টের জন্য এক হাজার থেকে পনেরশ’ ডলার পর্যন্ত প্রতি মাসে গুণতে হয় বাংলাদেশ সরকারকে।

দূতাবাসের ৪টি বাসার নিয়ন্ত্রক মজিবুর, কামাল, শাহিদা ও ফারুক কারোর বেতনই মাসে ১৫শ’ ইউএস ডলারের নিচে না হলেও কাঁচা পয়সার লোভ সামাল দিতে পারছেন না কেউই। মজার বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি বাসার পেছনে বাংলাদেশ সরকারের যে পরিমান ব্যয় হচ্ছে, মাসান্তে তার চাইতেও বেশি পরিমান অর্থ ‘এক্সট্রা’ কামিয়ে নিচ্ছেন দূতাবাসের উক্ত ৪ সুযোগসন্ধানী। মাসের শেষে ভাড়া আদায় নিয়ে লংকাকান্ড নিত্যনৈমিত্তিক ব্যপার, হাতাহাতিও ঘটেছে দফায় দফায় বহুবার।

সাবলেট ব্যাচেলররা এটা ধরতে পারবে না ওটা ব্যবহার করা যাবে না এভাবে না ওভাবে চলতে হবে এসব নিয়ে ঝগড়াঝাটি চলে গভীর রাত অবধি। উপরে-নিচে আশেপাশে সুইডিশরা যারপরনাই তিক্ত বিরক্ত বহুদিন ধরেই। যদিও ইউরোপের অনেক দেশেই বাংলাদেশ দূতাবাসের বাসায় একই ধরণের বিজনেস নতুন নয়, তবে স্ক্যান্ডিন্যাভিয়ান ক্যাপিটাল সুইডেনের প্রশাসনিক হিসেব-নিকেশ পুরোপুরিই আলাদা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, স্টকহল্মের বাংলাদেশ দূতাবাসের ঐ ৪টি বাসা আজ যেন রীতিমতো একেকটি মাছবাজার।

স্থানীয় মিউনিসিপ্যালিটিতে অভিযোগের পাহাড় জমে আছে দূতাবাসের এই বানিজ্য কেন্দ্রগুলোকে ঘিরে। স্বদেশী ভাড়াটিয়াদের সাথে কেলেংকারির পরিণতিতে কিছুদিন আগে স্ক্যান্ডাল গিয়ে ঠেকে খোদ দূতাবাসের অভ্যন্তরেও। ভিক্টিমদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূত বরাবরে স্মারক লিপি দেয়ার মতো লজ্জ্বাস্কর ঘটনাও ঘটে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ সরকারের মাথায় কাঠাঁল ভেঙ্গে খাওয়া স্টকহল্ম দূতাবাসের এই বাসাগুলোকে ঘিরে ‘হট বিজনেস’ অবশ্য চলে আসছে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই।

বছরের পর বছর ধরে ধান্ধা চলে আসছে জোরেশোরে, একসময় মাদক ও দেহব্যবসারও অভিযোগ ছিলো এই এপার্টমেন্টগুলোকে ঘিরে। সুইডেনের রাজধানীতে বাংলাদেশি কূটনীতিকরা যাঁরাই রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন এ অবধি, তাঁরা প্রথমে বিষয়টি বুঝে উঠতে না পারলেও একপর্যায়ে সবই জানার সুযোগ হতো তাঁদের, কিন্তু অধীনস্তদের অপকর্ম বন্ধের মতো দায়িত্বশীল হতে পারেননি কেউ কোন কালেই। টোটাল ইস্যুটি দিনে দিনে হার মানিয়েছে মগের মুল্লুককেও। ফলশ্রুতিতে ট্র্যাডিশনাল এই বিজনেস এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থে পরিচালিত বাসায় কেন এই অবৈধ বানিজ্য, তা জানতে যোগাযোগ করা হয় স্টকহল্মের বাংলাদেশ দূতাবাসে। ফোন ধরেন রাষ্ট্রদূত গোলাম সারওয়ারের পিও কামাল হোসেন, যিনি নিজেই তার বাসায় চালাচ্ছেন অবৈধ ব্যবসা। পিও কামাল হোসেন এই প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে পেরে আঁচ করেন পরিস্থিতি, ফোন নাম্বার রেখে বলেন, রাষ্ট্রদূতের অফিস থেকে আপনার সাথে পরে যোগাযোগ করা হবে। দশ দিন অতিবাহিত হলেও সেই পরে থেকে যায় পরেই।

এদিকে স্টকহল্ম প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, সুইডিশ আইন-কানুনের বিধিমালা অমান্য করে বাংলাদেশ দূতাবাসের অধীনস্ত এপার্টমেন্টগুলোতে চলমান অবৈধ কারবার ইতিমধ্যে সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কানেও পৌঁছে গেছে। মিউনসিপ্যালিটি থেকে পাঠানো গোপন রিপোর্টের পাশাপাশি এর ভিন্ন কারণও আছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।

বিশেষ করে গত বছর তৎকালীণ রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকারের সরকারি বাসায় তার স্ত্রী সাদিয়া কর্তৃক গৃহকর্মী তৈয়বা নিয়মিত শারীরিক নির্যাতনের স্ক্যান্ডাল ফাঁস হয়ে যাবার পর সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সাদিয়াকে সুইডেন ছাড়ার আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত গওসোলের প্রস্থান, সর্বোপরি তখন থেকেই স্টকহল্মের বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিটি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অনেক কিছুই নজরে রেখে চলেছে সুইডিশ প্রশাসন।

স্থানীয় গোয়েন্দা বিভাগেরও বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে দূতাবাসের প্রতিটি বাসা, এমনটা নিশ্চিত করেই জানানো হয়েছে এই প্রতিবেদককে। ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে থাকা ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট গোলাম সারওয়ার বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব চিহ্নিত ৪টি স্পটে ‘অপারেশন ক্লিন এপার্টমেন্ট’ পরিচালনা করবেন, এমন আশাবাদ সুইডেনের বেশ ক’জন প্রভাবশালী কমিউনিটি নেতৃ্বৃন্দের। চলমান অবৈধ বানিজ্যের পরিণতিতে ‘সাদিয়া আযম স্ক্যান্ডাল’-এর চাইতেও সম্ভাব্য বড় কোন অঘটন তাই কারো কাম্য নয় আজ সুইডেনে।

উল্লেখ্যঃ যারা আপনাদের ফেসবুকে আমাদের সাইটের প্রতিটি লেখা পেতে চান তারা এখানে ক্লিক করে আমাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন।

Lesar

আমিওপারি নিয়ে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত একজন সাধারণ মানুষ। যদি কোন বিশেষ প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে ফেসবুকে পাবেন এই লিঙ্কে https://www.facebook.com/lesar.hm

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *