মাঈনুল ইসলাম নাসিম : শনিবার রাতে ভূমধ্যসাগরে প্রায় ৯০০ অভিবাসীর সলিলসমাধির বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত হলেও মধ্যসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া এক বাংলাদেশীর দেয়া জবানবন্দীর ওপর ভিত্তি করে বিশেষ তদন্ত শুরু করেছে ইতালীয় পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী ‘ক্যারাবিনিয়েরি’ সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধারের পর উক্ত বাংলাদেশীকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় সিসিলি দ্বীপের কাতানিয়া নগরীর কান্নিৎজারো হাসপাতালে। উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশীর নামধাম তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করছে না ইতালীয় প্রশাসন। এ অবধি লাশ উদ্ধার হয়েছে মাত্র ২৪টি এবং জীবিত উদ্ধার হয়েছেন মাত্র ২৮ জন।
টহল পুলিশ সহ কাতানিয়ার ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে ইতিমধ্যে দেয়া জবানবন্দীতে লোমহর্ষক সব তথ্য দিয়েছেন উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশী নাগরিক, যদিও মেইনস্ট্রিম মিডিয়া এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা সোমবার দিনের শেষ অবধি সুযোগ পাননি তাঁর সাথে সরাসরি কথা বলার। সৌভাগ্যের ওপর ভেসে জানে বেঁচে আসা উক্ত বাংলাদেশী জানান, ইতালীর পথে লিবিয়ার উপকুল ছেড়ে যাবার আগে অন্ততঃ ২০০ নারী এবং ৪০-৫০টি শিশু সহ প্রায় ৯৫০ জনকে গবাদিপশুর মতো গাদাগাদি করে ঢোকানো হয় ইঞ্জিনচালিত মাঝারি সাইজের মাছ ধরার বোটটিতে।
হতাভাগা সাড়ে নয়শ’ অভিবাসী নিয়েই শনিবার মধ্যরাতে ভূমধ্যসাগরে বিলীন হয় মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিটার লম্বা ঐ মরণখেয়া, এমনটাই জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশী। তাঁর ভাষ্যমতে, বিভিন্ন দেশের শতশত নাগরিককে বোটের নিম্নভাগে তালাবদ্ধ করে আটকে রেখেই সাগর পাড়ি দেয়া হচ্ছিল এবং তাদের অধিকাংশই সাঁতার জানা দূরের কথা, অনেকেরই জীবদ্দশায় সেদিনই প্রথম সাগর দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছিল। সলিলসমাধির শিকার হওয়া যাত্রীদের অধিকাংশই আলজেরিয়া, মিশর, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, মালি, গাম্বিয়া ও ঘানার নাগরিক ছিল বলে জানান তিনি।
কাতানিয়ার পুলিশ, ক্যারাবিনিয়েরি ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে আরো অনেক গুরুত্ববহ তথ্য দিয়েছেন উদ্ধার হওয়া এই বাংলাদেশী, তদন্তের স্বার্থে যার সামান্যই প্রকাশ করা হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমে। সোমবার বিকেলে এই প্রতিবেদক কাতানিয়ার আধা সামরিক বাহিনী ‘ক্যারাবিনিয়েরি’র দায়িত্বশীল একজন মুখপাত্রের সঙ্গে কথা বলেন। বাড়তি তথ্য দিতে যে কোন এজেন্সির বিশেষ সীমাবদ্ধতার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। এদিকে রোমে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত শাহদৎ হোসেনের সাথেও সোমবার কথা হয় এই প্রতিবেদকের। উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশীর নাম-পরিচয় জানতে কাতানিয়াস্থ বাংলাদেশের অনারারী কনসাল জেনারেলকে তিনি দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানান।
ডুবে যাওয়া মাছ ধরার বোটটিতে আরো বাংলাদেশীরা ছিলেনে, এই প্রতিবেদককে এমন আশংকার কথাই জানাচ্ছে কাতানিয়া ও ত্রিপলির একাধিক সূত্র। উদ্ধার হওয়া একমাত্র বাংলাদেশী স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কোন তথ্য দিয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি এবং দিলেও তা এখনই প্রকাশ না হবার সম্ভাবনা বেশি বলে অনুমিত হচ্ছে। রাষ্ট্রদূত শাহদৎ হোসেনের মতে, “বাংলাদেশীরা এ ধরণের যাত্রায় যেহেতু একা থাকেন না, তাই আমরা সাধ্যমতো খোঁজখবর নিচ্ছি”। এদিকে ভূমধ্যসাগর যেন রীতিমতো পরিণত হয়েছে অভিবাসীদের সমাধিক্ষেত্রে। ২০ এপ্রিল সোমবার ৩০০ অভিবাসী নিয়ে আরো একটি ট্রলার ডুবে যাবার জরুরী বার্তার প্রেক্ষিতে চলছে উদ্ধার অভিযান।