অনেক দাম দিয়ে ক্রয় করা আমাদের শখের আইফোন বা আইপ্যাড দিয়ে কিন্তু আমরা এমন সব কাজ করতে পারি যা আমাদের অনেকেরই এর সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই। আমরা বাজার থেকে যে আইফোনটি ক্রয় করি তা দিয়ে আমরা তেমন কিছুই করতে পারিনা এবং আমাদের একটি সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকতে হয় কিন্তু যদি আপনি আপনার আইফোন টিকে জেইলব্রেক করান তাহলে আপনি এটি দিয়ে এমন সব কাজ করতে পারবেন যা আপনার একটি স্মার্ট ফোনের সকল চাহিদা পূরণ করতে পারবে এবং আপনার আইফোনটি অনেকটা একটি কম্পিউটার এর সমতুল্য হিসেবে বানিয়ে নিতে পারবেন। তবে যারা এর সম্পর্কে জানেনা তাদের কাছে এসব কথা অবিশ্বাস মনে হবে। যাই হোক আপনাদের এই ধারণা পালটাতে এখানে আমরা তুলে ধরবো আপনার আইফোনটি জেইলব্রেক করলে কি কি করতে পারবেন তার কিছু বিষয়, যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার নরমাল আইফোন ও জেইলব্রেক করা আইফোন এর তফাৎ বুঝতে পারবেন।
সবার আগে জানি এই জেইলব্রেক কিঃ অ্যাপেল কোম্পানি আইফোনে সব সুবিধা দেয় না তাদের ব্যাবসার জন্য। তাই সব সুবিধা পাবার জন্য কয়েকজন মিলে App Store এর মত করে অন্য আরেকটা Store বানিয়েছে যা কিনা Cydia নামে পরিচিত। এই Cydia অ্যাপসটাকেই জেইলব্রেক বলে। এখান থেকে অনেক অ্যাপস ইন্সটল করা যায় যা কিনা আইফোন ব্যাবহারকারীদের খুবই কাজে লাগে।অনেক অতিরিক্ত সেটিং পাওয়া যায় যা কিনা বিভিন্ন অ্যাপসে কাজে লাগে। আইফোনকে সম্পূর্ণ নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করা যায়। এবং এর মাধ্যমে আপনি এমন সব অ্যাপস ব্যবহার করতে পারবেন যা আপনার আইফোন ব্যবহার করার ধারনাই পালটিয়ে দিবে।তাহলে এবার জেনে নেই জেইলব্রেক করা থাকলে যে যে কাজ গুলো করতে পারবো!!
১- নরমাল ভাবে আইফোন রিস্টার্ট বা বন্ধ করতে হলে উপরের পাওয়ার বাটন ১০ সেকেন্ড এর মতো চেপে ধরে রাখতে হয়। কিন্তু জেইলব্রেক করা আইফোনে একটি অ্যাপস এর মাধ্যমে মাত্র এক টাচে এটি করা যায়।সাথে আপনি Wifi, 3G, Bluetooth, Data, Locations সহ আর বিভিন্ন অপশন গুলো টার্ন অন বা অফ করতে পারবেন একটি মাত্র টাচে এবং এর জন্য আপনাকে কষ্ট করে আইফোন এর সেটিংস্ এ যেতে হবে না। এবং এই অ্যাপস এর মাধ্যমে আপনি আপনার আইফোন এর সার্চ অপশন বন্ধ করা সহ, ফোল্ডার বা অ্যাপস ডিলিট করতে না পারা এবং আপনার মোবাইল অপারেটর এর নাম পরিবর্তন করে আপনার নিজের নাম দিয়ে রাখতে পারবেন, এরকম আরো অনেক কিছু করতে পারবেন।
২- নরমাল আইফোনে পার্সোনাল ডকুমেন্টস ফাইল বা অ্যাপস পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা যায় না কিন্তু জেইলব্রেক করা আইফোনে এসব কাজ করা যায়।যেমন আপনার ছবি,নোট বা আইফোন সেটিংস্ কে পাসওয়ার্ড লক করে রাখতে পারবেন।যার ফলে আপনার পার্সোনাল অ্যাপস বা ফোল্ডার আপনি ছাড়া অন্য কেউ অ্যাক্সেস করতে পারবে না।
৩- নরমাল আইফোনে থিম, ফন্ট বা রিংটোনস পরিবর্তন করা যায় না কিন্তু জেইলব্রেক করা আইফোনে এসব কাজ করা যায়। এবং হাজার হাজার চোখ ধাঁধানো থিম রয়েছে যা বলে বুঝানো যাবে না।
৪- নরমাল আইফোনে সাফারি ইন্টারনেট ব্রাউজার দিয়ে কোন কিছু ডাউনলোড করা যায় না। কিন্তু জেইলব্রেক করা আইফোন দিয়ে আপনি আইফোনের সাফারি ইন্টারনেট ব্রাউজার দিয়ে আপনার কম্পিউটার এ যেমন ইন্টারনেট থেকে যেকোনো ফাইল ডাউনলোড করেন, ঠিক তেমন ভাবে ইন্টারনেটর সব ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন আপনার আইফোন দিয়ে। যা সত্যিই খুব মজার একটি বিষয়।
৫- নরমাল আইফোনে আপনি আপনার ডিভাইস এর সিস্টেম ফাইল বা ফোল্ডার অ্যাক্সেস করতে পারবেন না। কিন্তু জেইলব্রেক করা আইফোনে আপনি আই এক্সপ্লোরার নামক অ্যাপস দিয়ে আপনার আইফোনের সকল ডিরেক্টরি সহ সকল সিস্টেম ফাইল ও ফোল্ডার অ্যাক্সেস করতে পারবেন। এটি সম্পূর্ণ আপনার কম্পিউটার এর মতো। কম্পিউটারে যেমন আপনি আপনার c বা d ড্রাইভে আপনার মতো করে বিভিন্ন ফোল্ডার বানিয়ে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে বা লোকাল ফাইল গুলো নিজের মতো করে সাজিয়ে রাখেন এবং কপি, পেস্ট, ডিলিট, রিনেম ইত্যাদি কাজ গুলো করেন। তেমনি এখানেও আপনি সেই কাজ গুলো খুব সহজে করতে পারবেন।
৬- নরমাল আইফোনে কাউকে ইমেইল করার সময় আইফোনে তুলা ডিফল্ট ছবি ও ভিডিও ফাইল ছাড়া অন্য কোন ফাইল এটাচ করা যায় না। কিন্তু জেইলব্রেক করা আইফোনে আপনি যেকোনো ধরণের ফাইল ইমেইলে এটাচ করে পাঠাতে পারবেন।
৭- নরমাল আইফোনে আপনি অডিও গান বা ভিডিও গান নিতে চাইলে অ্যাপেল এর আইটন্স দিয়ে নিতে হয় এবং এটি অনেকের কাছে অনেক ঝামেলার একটি বিষয়। কিন্তু জেইলব্রেক করা আইফোনে আপনি যেকোনো অডিও গান বা ভিডিও গান সরাসরি আইফোন দিয়েই ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে আপনার আইফোনের মিউজিক অ্যাপস এ এড করে নিতে পারবেন। এবং আপনাকে কখনো এই কাজ গুলো করার জন্য কম্পিউটার এর প্রয়োজন হবে না।এবং আপনি চাইলে সেই গান আপনার রিংটোনস হিসেবেও সেট করতে পারবেন।
৮- ইউটিউব থেকে যেকোনো গান বা ছবি ডাউনলোড করে আপনার আইফোনে সেভ করে রাখতে পারবেন এবং পড়ে ইন্টারনেট না থাকলেও অফলাইনে সেই সব গান বা ছবি দেখতে পারবেন।
৯- নরমাল আইফোনে আপনি মনের মতো ই-বুক্স ডাউনলোড করতে পারবেন না। কিন্তু জেইলব্রেক করা আইফোনে আপনি যেকোনো বাংলা, ইংলিশ বা পিডিএফ এর ফাইল কে সরাসরি আইফোন দিয়ে ডাউনলোড করে আপনার আই বুক্স অ্যাপস এ ই-বুক আকারে বানিয়ে নিতে পারবেন। যার মাধ্যমে আপনার আইফোনটি হয়ে যাবে একটি বিশাল বই এর লাইব্রেরী।
১০- আইফোন এর অ্যাপস স্টোরে পাওয়া যত দামী অ্যাপ রয়েছে তা সম্পূর্ণ ফ্রীতে আপনার আইফোনে ব্যাবহার করতে পারবেন।
১১- আপনার আইফোন দিয়ে যেকোনো ফরম্যাট এর ফাইল ওপেন করতে পারবেন যেমন এম এস ওয়ার্ড, এক্সেল, ফটোশপ ইত্যাদি।
১২- যদি কখনো প্রয়োজন হয় তাহলে অ্যাপেল এর আইটন্স এর বিপরীত একটি প্রোগ্রাম আপনার কম্পিউটারে ইন্সটল করে আপনার আইফোন এর সকল ফাইল একটা একটা বা সব একসাথে সিলেক্ট করে কম্পিউটার থেকে আইফোনে বা আইফোন থেকে কম্পিউটারে ট্রান্সফার করতে পারবেন। যেমনটি আমরা এনড্রইড ডিভাইস এ করে থাকি।
আসলে এরকম আরো অনেক মজার মজার জিনিস রয়েছে যা আপনাদের লিখে বা বলে শেষ করা যাবে না। যা আপনারা ব্যাবহার করতে করতে বুঝতে পারবেন। কাজেই যারা তাদের আইফোনটি দিয়ে এসব সুবিধা গুলো পেতে চান তারা আমাদের সাথে পোস্ট গুলো ভালো করে দেখুন ও লক্ষ্য করুণ।এবং আমাদের এই বিষয় গুলো নিয়ে রয়েছে ভিডিও টিউটোরিয়াল যা দেখে আপনারা বাস্তব ধারণা নিতে পারবেন। আমাদের সেই ভিডিও গুলো দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুণ।
আর যারা ইতালির রোমে থাকেন তারা আইফোন সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা,জেইলব্রেক করা বা সাহায্যের জন্য আমাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন আমাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ বা ফোন করার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুণ।