আরব আমিরাতে বাংলাদেশীদের ভিসা কবে থেকে চালু হচ্ছে এ নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। দেশটিতে সরকারী হিসাব মতে প্রায় ১০ লক্ষ বাংলাদেশী অবস্থান করছে। যদিও বা কেউ কেউ তা বাড়িয়ে ১২-১৪ লাখ ( যার যা মনে আসে ) বলে ফেলেন। তম্মধ্যে ভিসা নেই, কর্ম নেই অথবা কর্মস্থলে কম বেতন বলে কর্মস্থান ত্যাগ করে অন্যত্র কর্মরত প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। দেশ থেকে দেনা-দায়েক হয়ে আসা অনেক বাংলাদেশীই এখানে অর্থ সংকটে পড়ে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ কাজে লিপ্ত রয়েছেন। কেউ বা করছে সমস্যায় পড়ে; আবার কেউ বা এখন অল্প কষ্টে অতি উপার্জনে অভ্যস্ত হয়ে শুরু করা ব্যবসা আর চাইলেও বন্ধ করতে পারছেনা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোবাইল ব্যালেন্স বিক্রি করা, মদ-গাঁজা ও ইয়াবা-আফিম বিক্রি করা, রাস্তার পাশের গলিতে দাঁড়িয়ে জুয়া খেলা, ভি.ও.আই.পি মোবাইল ব্যবসা, সল্প আলোকিত স্থানে দাঁড়িয়ে ম্যাসাজ সেন্টার এর কার্ড বিতরণ করা, রাস্তায় দাঁড়িয়ে নারী ব্যবসার মত জঘন্য কর্মের জন্য খদ্দের ডাকা, ছোট খাট তর্ক-বিতর্কে মারামারি ও ছুরিকাঘাত, এমনকি খুন ও হত্যা পর্যন্ত করতে দ্বিধা না করা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশীরা এখানে নিয়ন্ত্রাধীন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে তাদের গোয়েন্দা সহযোগিতায় হামলা চালিয়ে এদেরকে আটক করে জেল জরিমানা করে দেশেও পাঠিয়ে দেয়; কিন্তু সপ্তাহ-মাস ঘুরতে না ঘুরতেই তারা আবার ওমান হয়ে গোপন পথে আমিরাতে পাড়ি জমায়। এরা এতোই ধূর্ত যে, এ দেশের কঠোর আইনকেও যেন এরা সহজেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে চায়। এতে করে স্থানীয় প্রশাসন এখন বাংলাদেশীদের দিয়ে এ দেশের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন বলে মনে করছে। আমিরাত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশীদের ভিসা বন্ধ করা হয়েছে বলে এখনো কোন মন্তব্য না করলেও ২০১২ সালের জুলাই থেকে দেশটি বাংলাদেশী সাধারণ শ্রমিকদের ভিসা বন্ধ রেখেছে। তা ছাড়া গৃহকর্মী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সহ বিশেষ পেশা সমূহ, বিণিয়োগকারী, ব্যবসায়ীদের জন্য ভিজিট ও পর্যটন ভিসা যথাযথ চালু রয়েছে।
সাধারণ শ্রমিকদের ভিসা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে হাজার হাজার বাংলাদেশী তথা ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। কম বেতনে মনযোগ দিয়ে কাজ করা, অতি আগ্রহে মালিকের আনুগত্য স্বীকার করা, অল্প সময়ে ভাষা ও টেকনিক্যাল কাজ শিখে ফেলা ও চালেঞ্জের মোকাবিলায় কাজ করতে বাংলাদেশী শ্রমিকের তুলনা নেই। তাই সবাই অপেক্ষার দিন গুনছে ‘কবে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা চালু হবে।” ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কুটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে যথেষ্ট জোরচেষ্টা চালানো হলেও এ পর্যন্ত কোন সুফল আসেনি। অনেকেই এ সমস্যাকে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিচার করছেন, তম্মধ্যে এক্সপো ২০২০ কেও টেনে আনা হয়েছে; তবে তা নিছক ভুল ধারণা। আমরা জানি যে, দুবাই এক্সপো ২০২০ এর আয়োজক হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে ২৭ নভেম্বর ২০১৩ সালে; কিন্তু এর প্রায় বছরাধিক পূর্বের থেকেই ভিসা বন্ধ রয়েছে। তাহলে সহজেই অনুমেয় যে, এর ইস্যু অন্য কিছু।
সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তাগণ উপরোক্ত সমস্যা গুলোকেই বিশেষভাবে দায়ী করেছেন। বাংলাদেশের কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সীর বক্তব্যে আমিরাতের ভিসা বন্ধের যে রিপোর্ট এসেছে তা সম্পূর্ণ সত্য নয়। এ ব্যাপারে বাংলা এক্সপ্রেস অফিসে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ ও আমিরাতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ডজন খানেক টেলিফোন আসে, সবারই একই জিজ্ঞাসা ” আমাদের ভিসা চালু হবার কোন সম্ভাবনা আছে কিনা”? অনেকের ভিসা ইস্যু হবার পরেও দেশ থেকে আসতে পারে নাই, কেউ বা এখানে ভাল চাকুরী পেয়েও ভিসা ট্রান্সফার করতে পারছেন না, আবার কেউ হয়তো ভিজিট ভিসায় এসে চাকুরী পেয়েও ভিসা লাগাতে অক্ষম হয়ে অবৈধভাবেই এ দেশে রয়ে গেছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ মিশনের দেয়া তথ্যানুসারে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা চালু হবার কোন সবুজ সংকেত দেখা যাচ্ছে না।