প্রিয় বন্ধু মারিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি জাভেরায় (ত্রেভিজোর একটি উপশহর) অভিবাসী মেলা হচ্ছে। আমরা দুজন হাত ধরাধরি করে মেলা দেখি, আর গলা ছেড়ে গাই- ‘তোমার বাড়ির রঙ্গের মেলায় দেখেছিলাম বায়োস্কোপ, বায়োস্কোপের নেশা আমায় ছাড়েনা…’। মেলায় নানা রকমের স্টল আর বিজ্ঞাপনের ভীড়ে হঠাৎ চোখ আটকে যায় একটা প্যানাপ্লেক্স ডিজিটাল সাইনবোর্ডে। বড় বড় অক্ষরে লেখা- ভেনিস বাংলা স্কুল। চমকে যাই, থমকে দাড়াই, প্রানটা আকুলি বিকুলি করে উঠে। অভিভুত হই, হই আবেগে আপ্লুত। আমার মায়ের ভাষার চর্চা এই প্রবাসেও? কে বা কারা এর পেছনে? কারাই বা পৃষ্ঠপোষকতা করছে? তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন প্রাণ দুলে ওঠে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ভেনিসের বাংলাদেশি কমিউনিটির পৃষ্ঠপোষকতা ও সৈয়দ কামরুল নামের একজন সজ্জন প্রবাসীর তত্বাবধানে চলছে ‘ভেনিস বাংলা স্কুল’ প্রত্রিকায় একটু আধটু লিখালিখির অভ্যাস আমার আছে। আর তাই ভেনিসের বাংলা স্কুল নিয়ে লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না।
ভেনিস বাংলা স্কুলের কথা লিখতে গেলে যার প্রসঙ্গ চলে আসে সবার আগে তিনি হলেন, ভেনিস বাংলা স্কুলের প্রতিষ্ঠতা এবং বর্তমানের সভাপতি সৈয়দ কামরুল। বরিশালের মুলাদিতে জন্ম। গ্রামে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ঢাকার তিতুমীর কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় পাড়ি জমান প্রাচ্যের দেশে। ১৯৮৫ সালে জার্মানিতে আসেন। জানাযায় সেখানে তিনি দাউদ নামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে পাড়ি জমান সুইজারল্যান্ডে। কঠোর অভিবাসন নীতির কারনে ৬ মাস পরেই বাধ্য হন সুইজারল্যান্ড ত্যাগ করতে। চলে আসেন ইতালিতে। এখানে পরিচিত হন সরোয়ার নামে। রোমে শুরু করেন সোনার বাংলা নামে একটি বাংলা হোটেল। দুই বছর পরে মত পাল্টে চলে যান পেরুজায়, কাজ করেন তামাক ক্ষেতে। সেখানেও বেশি দিন মন টেকাতে না পেরে চলে যান বোলজানোয়। সেখানে টানা ১০ বছর ওয়েটার এবং শেফের কাজ করেন। ২০০১ সালে চলে আসেন ভেনিসে। এর মধ্যে ইতালিয় ললনা লোপেজ লিদিয়ার প্রেমে পড়েন। ২০০৩ সালে তারা বিয়েও করেন। এখন তারা তিন সন্তানের সুখি দম্পতি।
সৈয়দ কামরুলের বড় ছেলে সৈয়দ কারিম যখন আধো আধো কথা বলতে শেখে তখন তিনি লক্ষ্য করেন যে, সে শুধু “বাবা দোকানে যাব” এই বাক্যটি বলতে পারে। উল্লেখ্য, ভেনিসের ম্যাস্ত্রেতে কামরুলের একটি টেলিফোন ও ইন্টারনেটের দোকান আছে। ছেলের মুখে বাংলা শুনে তার মাথায় আসে একটি স্কুল করার কথা যেখানে প্রবাসী বাংলাদেশী ছেলে মেয়েরা বাংলা ভাষায় পড়তে ও লিখতে পারবে। তার এই চিন্তার সফল রুপ দিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন ভেনিসের বাংলাদেশি কমিউনিটির গন্যমান্য অনেকেই। অবশেষে ২০০৬ সালে মাত্র ৩৫ জন ছাত্র ছাত্রী এবং ৬ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করে ভেনিস বাংলা স্কুল। অনেক বন্ধুর পথ মাড়িয়ে ইতালির ভেনিসে মাথা উচু করে নিজের উপস্থিতি জানান দেয় বাংলা স্কুল। বর্তমানে এর ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৩০ জন। শিক্ষক আছেন ৩ জন। ভেনিস বাংলা স্কুল পড়া-শুনার পাশাপাশি নানা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের আয়োজন করে থাকে। যেমন নাচ, গান, আবৃত্তি, আভিনয়, ছবি আঁকা ইত্যাদি। বিভিন্ন মেলায় স্টল বসিয়ে উপস্থাপন করে বাংলাদেশী কৃষ্টি ও কালচার। ইউরোপীয় সভ্যতায় তুলে ধরে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ সংস্কৃতিকে। সৈয়দ কামরুল ভেনিস বাংলা স্কুল পরিচালনার পাশাপাশি মেস্ত্রে জামে মসজিদ কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সৈয়দ কামরুলের আজকের এই সামাজিক ও সাংগঠকিন অবস্থানের নেপথ্যে আছেন অন্য একজন গুনি মানুষ। তিনি একাধারে লেখক, উপস্থাপক এবং সাংবাদিক। ব্যক্তিগত ভাবে তার লেখার প্রতি রয়েছে আমার ভীষণ রকম মুগ্ধতা। যা হয়তো তিনি নিজেও জানেন না। এই বহুগুনে গুনান্বিত মানুষটির নাম পলাশ রহমান। এক সময় তার হাত ধরেই ভেনিসে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘যুগান্তর পরবাস সমাবেশ’ নামের একটি পত্রিকার পাঠক ফোরাম। এবং এই ফোরামের প্রথম সভাপতি হিসাবেই ভেনিসের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে সাংগঠকিন পরিচিতি পান সৈয়দ কামরুল। সে সময়ই তারা ভেনিসের বাংলাদেশি শিশু কিশোরদের জন্য বাংলা স্কুল করা পরিকল্পনা করেন। খোজ নিয়ে জানাযায়, পলাশ রহমান আগেও কোথাও ফ্রন্টলাইনে ছিলেন না, এখনো নেই। তবে নেপথ্য থেকে সৈয়দ কামরুল ও বাংলা স্কুলের প্রতি তার সহযোগিতা রয়েছে ঘনিষ্ট ভাবে।
আমরা যারা নানা ভাবে নানা উপায়ে জীবন এবং জীবিকার প্রয়োজনে এই বিদেশ বিভুঁইয়ে আসি বৈধ অবৈধ যা-ই হই না কেন আমরা ভাবি সাফল্যের সোনার হরিন বুঝি এই ধরা দিলো। আর যখন এসে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হই তখন সে অমোঘ মোহ ভঙ্গ হতে খুব বেশী সময় পার করতে হয়না। যতই দিন যাচ্ছে ততই ইউরোপীয় অভিবাসন নীতি কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। দোভাষী হিসাবে কাজ করার সুবাদে বিষয়টা খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, সাথে জুটেছে কিছু অভিজ্ঞতা। সে আলোকেই ভেনিস বাংলা স্কুল নিয়ে আমার কিছু প্রত্যাশা আছে। বাংলা স্কুলের সাফল্যের ধারাবাহিকতা যেন অব্যহত থাকে অনাদি কাল। আর সে সাথে খেয়াল রাখতে হবে বিশেষ করে বাংলা বর্নমালার প্রমিত উচ্চারন যেনো সঠিক ভাবে শেখে ছাত্র/ছাত্রীরা। গর্বের সাথে মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি। আমদের শহীদ দিবস ২১ ফেব্রুয়ারী আজ আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস। নিজে ভালো থাকুন অন্য কে ভালো রাখুন এই প্রত্যাশা হৃদয়ের গহীনে যতœ করে ধারন করছি। আবারও কথা হবে নতুন কোন বিষয়ে।
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে এই লেখায় ক্লিক করে জানুন এবং তুলে ধরুন। নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। আর আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে রয়েছে অনেক মজার মজার সব ভিডিও সহ আরো অনেক মজার মজার টিপস তাই এগুলো থেকে বঞ্চিত হতে না চাইলে এক্ষনি আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে লাইক দিয়ে আসুন। এবং আপনি এখন থেকে প্রবাস জীবনে আমাদের সাইটের মাধ্যমে আপনার যেকোনো বেক্তিগত জিনিসের ক্রয়/বিক্রয় সহ সকল ধরনের বিজ্ঞাপন ফ্রিতে দিতে পাড়বেন। ]]