নাজমুল হোসেন……
২০১২ সাল থেকে চালু হওয়া ব্রিটেনের ফ্যামিলি ভিসার নীতিমালা বৈষম্যমূলক ও অন্যায্য বলে রুল জারি করেছে ব্রিটিশ হাইকোর্ট। এমএম আবুল জাজিদ ও শাবানা জাবেদ বনাম হোম সেক্রেটারি মামলার দীর্ঘ শুনানী শেষে হাইকোর্টের বিচারক ব্লেক হোম অফিসের বিরুদ্ধে এ রুল জারি করেন।২০১২ সালে জুলাই মাসে চালু হওয়া হোম অফিসের এই কঠোর ভিসা নিয়মকে এম এম আবুল জাজিদ ও শাবানা জাবেদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়। গত ৫ জুলাই জারিকৃত রুলে বিচারক ব্লেক বলেন, হোম অফিসের এই ফ্যামিলি ভিসা নিয়ম আইন বহির্ভূত না হলেও এটি বৈষম্যমূলক এবং পরিবার ও শিশুদের প্রতি অন্যায্য। বৈষম্যমূলক এই আইন বাতিলের এখতিয়ার হাইকোর্টের নেই উল্লেখ করলেও ভিসা আবেদনকারীর আয়সীমা ১৮ হাজার ৬শ পাউন্ড থেকে নামিয়ে ১৩ হাজারে নিয়ে আসতে হোম সেক্রেটারির প্রতি সুপারিশ করা হয়।ব্লেক তার রুলে আরো বলেন, হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টের আর্টিকেল-৮ এ একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অধিকার সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে।
আবেদনকারীর আয়ের নূন্যতম সীমাকে ভিসা আবেদনের শর্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় মন্তব্য করে বিচারক আগের নিয়মে থাকা আবেদনকারীর আয়সীমা ১৩ হাজার পাউন্ডে ফিরে যাওয়ার সুপারিশ করেন হোম সেক্রেটারিকে। এ সুপারিশ রাখা না রাখা হোম সেক্রেটারির এখতিয়ার উল্লেখ করে বিচারক বলেন, আয়সীমা ১৩ হাজারে ফিরে যাওয়াই যৌক্তিক বলে আদালত মনে করে।রুলে হোম সেক্রেটারিকে আপিলের সুযোগ দেওয়া হলেও হোম অফিসের পক্ষ থেকে আপিল করা হবে কি না তা এখনও জানা যায়নি। তবে হোম অফিসের একজন মুখপাত্র রায়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, জনগণের উপর থেকে ট্যাক্সের বোঝা কমাতেই যে হোম অফিস ফ্যামিলি ভিসা আবেদনকারীর নূন্যতম আয়সীমা ১৮ হাজার ৬শ পাউন্ড করেছিল, হাইকোর্টের রায়ে তা ফুটে উঠেছে। মুখপাত্র আরো জানান, নূন্যতম আয়ের সীমা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেই হোম অফিসের পক্ষ থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।উল্লেখ্য, গত বছর ফ্যামিলি ভিসার ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী আনতে হলে স্পন্সরের নূন্যতম ১৮ হাজার ৬০০ পাউন্ডের বার্ষিক আয় থাকতে হবে, এমন নিয়ম চালু করে হোম অফিস। যদি কোনো দম্পতির এক সন্তান থাকে তবে এই অংক ২২ হাজার ৪শ পাউন্ডে দাঁড়াবে। পরবর্তী প্রতি সন্তানের ক্ষেত্রে ২ হাজার ৪শ’ পাউন্ড করে যুক্ত হবে মূল আয়ের সঙ্গে।এ নিয়ম চালু হওয়ার পর প্রতিবাদের ঝড় উঠে সবখানে। অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কর্মরত ব্রিটেনের সর্ববৃহৎ সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অব ইমিগ্রেন্টস (জেসিডব্লিউআই) এ নিয়মকে অমানবিক আখ্যায়িত করে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। অলপার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ফ্যামিলি ভিসার ক্ষেত্রে এ নিয়মের পুনর্বিবেচনা দাবি করলেও হোম অফিস এ বিষয়ে নিশ্চুপ ছিলো।
নিয়মটি চালু হওয়ায় প্রায় ১৭৫টি পরিবার নতুন এর কারণে ভোগান্তির শিকার হয়েছে বলে রিপোর্ট প্রকাশ করে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। আয়ের কঠিন শর্ত পূরণ করতে না পারায় এ পরিবারগুলোর সদস্যরা বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন দেশে বাস করছেন বলে জানায় ঐ প্রতিষ্ঠান। হাউস অব লর্ডসের লিবডেম দলীয় সদস্য ব্যারোনেস হ্যামওয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওই পরিসংখ্যানকে আঁতকে উঠার মত বলে মন্তব্য করে বলেন, বৈষম্যমূলক নীতির ফলে অনেক পরিবারের সদস্য আজ বিচ্ছিন্ন, যা খুবই অমানবিক।