জার্মানির সমাজে অভিবাসীদের নানা ক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার হতে হয়৷ এমনকি তাদের বাড়িঘরগুলিকেও সুখকর বা স্বাস্থ্যকর বলা যায় না৷ অন্তত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই৷সম্প্রতি একটি বাড়িতে আগুন লেগে এক তুর্কি পরিবারের ৮ সদস্য মারা যান৷ যার ফলে নতুন করে অভিবাসীদের বাসস্থান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ চলুন, এক তুর্কি পরিবারে গিয়ে দেখা যাক তারা কীভাবে বসবাস করছেন৷ঘর তো গরম হয় নাপরিবারের প্রধান আদেল খালিফি তাঁর বসার ঘর তিন জোড়া মোজা পরে বসে আছেন৷ পেছনের দিকে জানালাটা ভাল করে বন্ধ হয় না৷ শীতল বাতাস ভেতরে ঢোকে৷ রেডিয়েটরের কাঁটা সবটা ঘুরিয়েও গরম হয় না ঘরটি৷ ‘‘এখানকার বাড়িগুলি ৩০ বছরের পুরানো৷ কোনো কোনোটি স্যাঁতস্যাঁতে, ছত্রাক আক্রান্ত৷” জানান আদেল খালিফির পুত্রবধূ সোনিয়া খালিফি৷ অভিযোগ করলে বাড়ির মালিকের পক্ষ থেকে লোক পাঠানো হয়৷ তিনি দেখে বলেন, ‘‘এটা তো এমন কিছু নয়, একটু মুছে ফেললেই ঠিক হয়ে যাবে৷”মেঝেতে অ্যাসবেস্টাসের মত ক্যানসার উদ্দীপক মারাত্মক পদার্থও পাওয়া গেছে৷ খালিফি পরিবারের ভাগ্য ভাল বলতে হবে, কিছুদিন আগে বদলানো হয়েছে মেঝেটি৷বাবা আহমেদ খালিফির সঙ্গে ছেলে আদেল খালিফিএখানকার প্রায় সব বাড়িই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে৷
কিন্তু মেরামতের নাম নিচ্ছেন না মালিক কর্তৃপক্ষ৷সমস্যা একই ধরনেরমেঝেটি মেরামতের সময় চার সদস্যের পরিবারটিকে আশ্রয় নিতে হয় আদেল খালিফির বাবা আহমেদ খালিফির বাড়িতে৷ ১৯৬৫ সালে টিউনিশিয়া থেকে জার্মানিতে এসেছেন তিনি৷ গড়ে তুলেছেন পরিবার৷ তিনিও ছেলের মত একই কোম্পানির বাড়িতে ভাড়া থাকেন৷ সমস্যাগুলিও একই ধরনের৷ ছেলের সাথে একটি চিঠিকে ঘিরে আশা নিয়ে বসে আছেন তিনি৷ ভাড়াটে সমিতির পক্ষ থেকে এই পত্রটি তাঁদের জন্য লেখা হয়েছে৷ কয়েক বছর ধরে বাড়িঘরের দুরবস্থা নিয়ে মালিকের কাছে অভিযোগ করে আসছেন তাঁরা৷ কিন্তু অরণ্যে রোদন৷ মালিক কোম্পানি তাঁদের অভিযোগগুলি এখন শুধু খুঁটিয়ে দেখতে চায়৷জরাজীর্ণ বাড়িতে দুর্ঘটনাবাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গের বাকনাং শহরে ঘটা মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডটিও বাড়িটির দুরবস্থার কারণে হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ বাড়িটিতে আগুন লেগে এক তুর্কি পরিবারের এক নারী তাঁর সাত সন্তানসহ মারা যান৷
পুরানো বৈদ্যুতিক লাইন বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল৷ বাড়িওয়ালাকে বার বার বলা সত্ত্বেও মাথা ঘামাননি বিষয়টি নিয়ে৷ ঘর গরম করার একমাত্র উপায় ছিল কাঠের চুল্লিটি৷ গরম পানির কোনো ব্যবস্থাও ছিল না বাড়িতে৷এই দুর্ঘটনা অভিবাসীদের বাসস্থান সমস্যাটিকে আবার স্পষ্ট করে তুলেছে৷ ৭০-এর দশকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল৷ ইদানীং বিষয়টি কিছুটা স্তিমিত হয়ে গিয়েছে৷ এই প্রসঙ্গে ডার্মস্টাট ইউনিভার্সিটির অভিবাসন ও বাসস্থান সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ সিবিলে ম্যুন্শ ব্যাখ্যা দিয়ে জানান, ‘‘এর কারণ গত কয়েক বছরে আসবাবপত্রও সাজসজ্জার দিকে দিয়ে জার্মানদের সঙ্গে অভিবাসীদের পার্থ্যকটা অনেকটাই কমে এসেছে৷ তবে বাড়িঘরের অবস্থা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে অভিবাসীরা এখনও বৈষম্যের শিকার৷ এছাড়া একই ধরনের বাড়ির জন্য জার্মানদের তুলনায় তাঁদের গুনতে হয় বেশি ভাড়া৷”বড় বাসা দুরাশাপাঁচ সদস্যের খালিফি পরিবার ৭৮ বর্গমিটারের একটি বাড়িতে বসবাস করেন৷ দুবছর আগে মালিকপক্ষকে একটি বড় বাড়ির জন্য অনুরোধ করে পরিবারটি৷ কিন্তু কোনো বড় বাড়ি খালি নেই বলে জানায় মালিক কোম্পানি৷অভিবাসীদের বাড়িঘরগুলিকে স্বাস্থ্যকর বলা যায় নাখালিফি পরিবার মনে করে, বাসা খালি থাকলেও তা তাদের জানানো হয় না৷ তবে খোঁজ করলে বড়সড় বাড়ি যে পাওয়া যায় না, তা নয়৷ কিন্তু যে ভাড়া চাওয়া হয়,তা দেওয়ার মত আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই৷
তাদের কোম্পানিটি সস্তায় বাড়ি ভাড়া দেয় বলেই অনেক অভিবাসী কষ্ট করে হলেও তাদের কাছে রয়ে গেছেন৷অভিবাসীদের বাসস্থানের এই রকম করুণ দশার আর একটি কারণ হল যে, তারা সাধারণত বড়বড় শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করেন৷ আর তাই বাড়ির বাজারে প্রতিযোগিতাটাও কঠিন৷ সিবিলে ম্যুন্শ আরো জানান, ‘‘জার্মানদের তুলনায় অভিবাসীরা সাধারণত কম উপার্জন করেন, তাদের পরিবারগুলোও বড়৷ এছাড়া লক্ষ্য করা গেছে বাড়ি পেতে তাদের অসুবিধাও হয়৷”‘নামেই তোমার পরিচয়’এক সমীক্ষায় কয়েক ব্যক্তিকে দিয়ে বাড়ি ভাড়ার জন্য আবেদন করানো হয়েছিল৷ কয়েকজনকে সাজানো হয়েছিল জার্মান, কয়েকজনকে অভিবাসী৷ দেখা গেছে কথিত জার্মানরা এ ব্যাপারে অনেক বেশি সাড়া পেয়েছেন৷টিউনিশিয়ান শেকড়ের জন্য তাঁদের এই ভোগান্তি হচ্ছে কিনা, তা অবশ্য স্পষ্ট করে বলতে পারবে না খালিফি পরিবার৷ তবে আদেল খালিফি মনে করেন, ‘‘বৈষম্য থাকলেও তা খুব সুপ্ত৷ কিন্তু আমার নাম ম্যুলার না হয়ে খালিফি হওয়ায় এটার একটা প্রভাব তো আছেই৷”
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতে “এখানে ক্লিক করুণ” তুলে ধরুন নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। ]]