১৪ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা হয় অতি সম্প্রতি। একইদিন অনুষ্ঠিত সুইডিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়লাভকারী বিরোধী জোটভুক্ত বামপন্থী দল ‘ভ্যানস্টার’ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে লিও আহমেদ এই বিজয় অর্জন করলেন। ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, “সুইডেন সহ বিশ্বের যে কোন প্রান্তে বর্ণবাদের শিকার ভাই-বোনদের জন্য উৎসর্গ করছি আমার এই সামান্য অর্জন”।
‘ভ্যানস্টার’ পার্টির স্টকহল্ম অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিও আহমেদ আরো বলেন, “জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভের পর আমাদের দল এখন কোয়ালিশনে যেহেতু সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, তাই নির্বাচিত সিটি কাউন্সিলর হিসেবে এখন আমার জন্য সহজ হবে এন্টি-র্যা সিস্ট মুভমেন্টে নিজেকে আরো মেলে ধরতে”। উল্লেখ্য, এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বর্ণবাদী দল ‘সুইডিশ ডেমোক্রেটস’-এর অভাবনীয় উত্থান ঘটে দেশটিতে।
২০১০ সালে ৫.৭% ভোট পেয়ে পার্লামেন্টে ২০টি আসন দখল করলেও এবার ২০১৪ সালে এসে তারা ভোট পেয়েছে ১২.৮৬%। ইমিগ্রান্ট বিরোধী ‘সুইডিশ ডেমোক্রেটস’ ৪৯ টি আসন নিশ্চিত করে চলতি সেপ্টেম্বরে রীতিমতো এক অশনি সংতেক দিয়েছে সুইডেনে। চার বছর আগে র্যা সিস্টদের ঐ সময়কার উত্থানই লিও আহমেদকে তখন উদ্বুদ্ধ করেছিল সুইডেনের মূলধারার রাজনীতিতে মিশে যেতে। ‘ভ্যানস্টার’ পার্টির সাথে তাঁর সম্পৃক্ততা অবশ্য আট বছর আগে থেকেই। পড়াশোনার পাশাপাশি দলটির স্টুডেন্ট ফ্রন্টের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন মেধাবী এই সুইডিশ-বাংলাদেশি।
সক্রিয় ছাত্র রাজনীতির অভিজ্ঞতাকে সুনিপুনভাবে কাজে লাগিয়ে লিও আহমেদকে তখন থেকেই আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘ভ্যানস্টার’ পার্টির স্টকহল্মের ‘সিস্তা’ অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। এই দায়িত্বের পাশাপশি পার্টির স্টকহল্ম এক্সিকিউটিভ কমিটির মেম্বার হিসেবে তিন বছর অত্যন্ত সাফল্যের সাথে কাজ করার পর চলতি বছরের শুরুতেই এসে যায় তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। মেধা-যোগ্যতার মূল্যায়ন করতে ভুল করেনি বামপন্থী দল ‘ভ্যানস্টার’, পুরো স্টকহল্মের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয় লিও আহমেদকে।
সফলতার সাথে জনপ্রিয়তা আর খ্যাতি যখন আজ মিলেমিশে একাকার, সেই লিও আহমেদের হৃদয়ে যথারীতি লাল-সবুজের বাংলাদেশ। লিও আহমেদের জন্ম ১৯৮১ সালে ঢাকায়। পারিবারিক সূত্রে সুইডিশ রাজধানীতে স্থায়ীভাবে বসবাস ১৯৯৭ সাল থেকে। শিক্ষকতা করেন স্টকহল্মের একটি কিন্ডার গার্টেনে। শিক্ষকতা আর রাজনীতির পাশাপশি সুইডিশ ইমিগ্রেশান ও স্যোশাল সেক্টরের সাথেও যুক্ত আছেন লিও আহমেদ। স্টকহল্মে কোন বাংলাদেশি ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত কোন সমস্যায় পড়লে তিনি এগিয়ে এসেছেন সবার আগে।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি পরবর্তী ‘ভ্যানস্টার’ পার্টি কর্তৃক সংগৃহীত তহবিল ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নিজেই পৌঁছে দেন লিও আহমেদ। মেধা প্রজ্ঞা আন্তরিকতা আর একাগ্রতায় এই মেধাবী বাংলাদেশি আজ সুইডিশ রাজনীতির এক অতি পরিচিত মুখ, একাধারে স্টকহল্ম প্রশাসনের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ব্যক্তিত্ব। সময়ের পরিক্রমায় মেইনস্ট্রিম রাজনীতিতে তাঁর সম্পৃক্ততা আজ এতোটাই গভীর যে, রীতিমতো একজন ক্যারিয়ার পলিটিশিয়ানের পথেই হেঁটে চলেছেন তিনি। প্রবাসে বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতি চর্চার ঘোর বিরোধী স্টকহল্ম সিটি কাউন্সিলর লিও আহমেদ।