• Fri. Nov ২২, ২০২৪

আমিওপারি ডট কম

ইতালি,ইউরোপের ভিসা,ইম্মিগ্রেসন,স্টুডেন্ট ভিসা,ইউরোপে উচ্চ শিক্ষা

প্রাগ প্রবাসী বাংলাদেশী নাদিরা মজুমদারের নতুন দু’টি বই

ByLesar

Feb 25, 2016

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : প্রবাসের খ্যাতিমান লেখিকা নাদিরা মজুমদারের নতুন দু’টি মূল্যবান বই প্রকাশিত হয়েছে অতি সম্প্রতি। ‘আইনস্টাইন সুপারস্টার’ প্রকাশ করেছে ঢাকার বাংলা একাডেমি, অন্যদিকে ‘একমেরু বনাম বহুমেরু’ (চার দেশের কাহিনী) বইয়ের প্রকাশক ঢাকা থেকেই মাওলা ব্রাদার্স। বিজ্ঞান লেখার পাশাপাশি নাদিরা মজুমদার একাধারে একজন গবেষক, সাংবাদিক, মাইগ্রেশন এন্ড ইন্টিগ্রেশন কনসালটেন্ট। চেক প্রজাতন্ত্রে বসবাস করছেন ৩৫ বছর ধরে। ১৯৮১ সালে রাজধানী প্রাগে স্থায়ীভাবে চলে আসার আগে তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং লেখাপড়া সবই ঢাকায়। বিএসসি অনার্স ও এমএসসি পাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে পাকাপোক্ত চাকরিজীবন শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতা দিয়ে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নারী ‘ইনভেস্টিগেটিভ’ স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন তিনি।

সাপ্তাহিক রোববারে নিয়মিত বিজ্ঞান পাতা চালু করেন তখন নাদিরা মজুমদার। বিজ্ঞানকে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার আইটেমে পরিণত করেন, যা নিয়মিত ট্রেন্ডে পরিণত হয়। পদার্থবিদ্যার বাইরে আরো কিছু বিষয় তিনি বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। বিজ্ঞান গণশিক্ষা কেন্দ্র তথা সেন্টার ফর ম্যাস এডুকেশন ইন সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাদিরা মজুমদার। ইউরোপিয়ান রিসার্চ ফোরাম অন মাইগ্রেশন এন্ড এথনিক রিলেশনসের মেরি কুরি স্কলার এই স্বনামধন্য বাংলাদেশী। মাইগ্রেশন এন্ড ইন্টিগ্রেশন চ্যাপ্টারে চেক রিপাবলিক সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে টানা এক দশক সুনামের সাথে কর্মরত ছিলেন তিনি। চেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এসাইলাম এন্ড মাইগ্রেশন পলিসি ডিপার্টমেন্টে ছিল তাঁর সরব পদচারনা।

চেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পর টানা পাঁচ বছর ছিলেন চেক শ্রম মন্ত্রনালয়ে। মাইগ্রেশন ও ইন্টিগ্রেশন ইস্যুতে প্রাগে তাঁর বহু প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সময়ে। চেক প্রজাতন্ত্রের ঐতিহ্যবাহী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজ করেছেন নাদিরা মজুমদার। জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)-এর প্রাগ অফিসে ‘এক্সটার্নাল কনসালটেন্ট’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নাদিরা মজুমদার। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে প্রমোট করার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা) কর্তৃক তিনি সম্মানিত হয়েছেন। নাদিরা মজুমদারের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে আরো রয়েছে শিশু একাডেমি কর্তৃক ‘এই আমাদের পৃথিবী’, ‘আগ্নেয়গিরি’ ও ‘ভূমিকম্পের কাহিনী’ এবং বাংলা একাডেমি কর্তৃক ‘কৃত্রিম উপগ্রহ’, ‘নানারঙের বিজ্ঞান’ ইত্যাদি।

চলতি বছর প্রকাশিত ‘আইনস্টাইন সুপারস্টার’ বইয়ের ভূমিকায় নাদিরা মজুমদার লিখেছেন, “বিংশ শতাব্দি অনেক অনেক নামিদামি বিজ্ঞানীর জন্ম দিয়েছিল। আলবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন তাঁদেরই একজন। তিনিই বোধকরি একমাত্র বিজ্ঞানী যিনি এতো বিপুল সুনাম ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, অনায়াসে পরিণত হন সেলিব্রেটিতে। তাঁর বিশেষ ও সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বদুটো মিডিয়া দ্বিধামুক্তমনে লুফে নেয়, যে যার মতো করে বুঝে নেয়। মিডিয়ার উৎসাহ, আচরণ আইনস্টাইন বিলক্ষণ উপভোগও করতেন। কারণ, তিনি কোনোদিনই মিডিয়া বা সাংবাদিকের পান্ডিত্য নিয়ে অভিযোগ করেননি কিংবা আগ বাড়িয়ে তাদের জ্ঞান বিতরণেরও চেষ্টা করেননি, কোনো সাংবাদিককে অবজ্ঞা করা বা ‘না’ বলে ফিরিয়েও দেননি। ফলে, হয়েছিলেন জননন্দিত বিজ্ঞানী সেলিব্রেটি । সেলিব্রেটি মাত্রই সুপারস্টার হিসেবে গণ্য হয়ে থাকেন। সবকিছু মিলিয়ে আইনস্টাইনও তাই ‘সুপারস্টার’। সুপারস্টার বিজ্ঞানী তিনি। একবিংশ শতাব্দিতে তাঁকে যে ‘মেগাস্টার’ বলা হতো না, কে বলতে পারে! ‘আইনস্টাইন সুপারস্টার’ তাই বইটির নাম”। মাত্র ১৯০ টাকা শুভেচ্ছা মূল্য দিয়ে এটি কেনা যেতে পারে বাংলা একাডেমির যে কোন বিক্রয়কেন্দ্র থেকে।

নাদিরা মজুমদার জানিয়েছেন, ‘একমেরু বনাম বহুমেরু’ (চার দেশের কাহিনী) পাওয়া যাচ্ছে রকমারি ডট কমে। বইটির প্রাসঙ্গিক কথায় প্রফেসর এমিরিটাস ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লিখেছেন, “খুব যে অতীতে তা নয়, নিকটেই একটা সময় ছিল যখন রাজনৈতিক বিশ্ব পরস্পরবিরোধী দু’টি শিবিরে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। একটি পুঁজিবাদী, অপরটি সমাজতান্ত্রিক। সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব যখন পড়ো পড়ো তখন আবির্ভাব ঘটেছিল তিন বিশ্ব তত্ত্বের। চীন দিয়েছিল তত্ত্বটি। চীনের বক্তব্য ছিল এই রকমের দু’টির বাইরে আরো একটি বিশ্ব আছে যেটি অনুন্নত; এই অনুন্নত দেশগুলোর এক সাথে থাকা দরকার, আর তাদের নেতৃত্ব দেবে চীন। সে অবস্থাও এখন আর নেই। এখন দুই বা তিন নয়, দেখা যাচ্ছে বহু মেরু প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক বিশ্বের ঘটনাবলী, বিশেষ করে ইউক্রেন, ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইরানকে কেন্দ্র করে যে সব ঘটনা ঘটছে এবং আগামীতে ঘটবে সেগুলো বলে দিচ্ছে যে এক মেরু ত্যাগ করে বিশ্ব চলেছে বহু মেরুর দিকে।

প্রফেসর এমিরিটাস আরো লিখেছেন, “নাদিরা মজুমদারের বইটি আন্তর্জাতিক বিশ্বের এই পরিবর্তনধারার ওপরই আলোকপাত। নাদিরা লিখেছেন প্রাঞ্জল ভাষায়। এর মূল কারণ তাঁর বক্তব্য। বক্তব্যের ব্যাপারে তাঁর অত্যন্ত পরিষ্কার ধারণা রয়েছে। বক্তব্য তৈরি হয়েছে কৌতূহল, অধ্যয়ন ও ব্যক্তিগত সংযোগ থেকে। নাদিরা দীর্ঘকাল ধরে পূর্ব ইউরোপে থাকেন, কর্মসূত্রে তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ পেয়েছেন। ফলে তিনি জেনে ও বুঝে লিখতে পেরেছেন। বিষয়গুলো একাডেমিক, সেভাবেই তারা প্রবন্ধে এসেছে। যেসব ঘটনা যা ঘটেছে তার পেছনে স্বার্থের টানাপোড়েন, জ্বালানি সম্পদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, আধিপত্য বিস্তারের লোলুপতা ইত্যাদি কি ভাবে কাজ করছে সবই তাঁর কাছে স্পষ্ট। দেশগুলোর ইতিহাস তিনি জানেন, তাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও তিনি পুরোপুরি অবহিত”।

খ্যাতিমান অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, “একাডেমিক বিষয় নিয়ে রচনা সাধারণত নিষ্প্রাণ হয়। নাদিরা মজুমদারের লেখায় সেটা নেই। তাঁর উপস্থাপনা সজীব, ভাষা সতত প্রবহমান। জ্ঞানের বিষয় নিয়ে লিখছেন, কিন্তু ভাবটা শিক্ষাদানের নয়, পুরোপুরি কথোপকথনের। তাঁর আছে প্রসন্ন কৌতুকবোধ, যার দরুন যা বলছেন তা আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এগুলোর গতিবিধি না বুঝতে পারলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে কি ঘটছে ও ঘটতে যাচ্ছে তা টের পাবো না। তাছাড়া ওইসব ঘটনা আমাদেরকেও প্রভাবিত করছে এবং প্রভাবিত করতে থাকবে। আমাদের নিজেদের ভবিষ্যতও সারা বিশ্বের ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত বৈকি। বাংলা ভাষাকে আমরা উচ্চশিক্ষার মাধ্যম করতে চাই। সেজন্য অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপরও আমাদের অনেক অনেক লেখা প্রয়োজন। কিন্তু তেমন লেখা পাওয়া যায় না। যাঁরা লেখেন তাঁরা ইংরেজীতে লেখাই পছন্দ করেন। অন্যদিকে বাংলা ভাষায় যা পাওয়া যায় তা হালকা ধরনের, তাতে তাৎক্ষণিকতা এবং সাংবাদিকতার ধরন ও ছাপ থাকে। নাদিরা বাংলায় লিখেছেন, চমৎকার বাংলায় এবং গভীর ও গম্ভীর বিষয়ে অনায়াসে লিখেছেন”।

Lesar

আমিওপারি নিয়ে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত একজন সাধারণ মানুষ। যদি কোন বিশেষ প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে ফেসবুকে পাবেন এই লিঙ্কে https://www.facebook.com/lesar.hm

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *