বিদেশগামী জনশক্তিকে পিয়াঁজ-মরিচের সাথে তুলনা করারও ধৃষ্ঠতা দেখান বয়োবৃদ্ধ মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ। অনুষ্ঠান চলাকালীন তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন একাধিকবার। জনপ্রিয় উপস্থাপিকা মুন্নী সাহার যুক্তির সাথে কুলিয়ে উঠতে না পেরে মন্ত্রী এক পর্যায়ে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠেন, “আপনার সাথে আমি কিন্তু এইখানে কমপিটিশন করতে আসি নাই”। বছরে ১ লাখ লোক যাবে মালয়েশিয়াতে এমনটা সরকারের তরফ থেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে বলা হলেও গত ২ বছরে কেন মাত্র ৫ হাজার লোক গেলো – এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে গোঁজামিলের মাধ্যমে বাঙ্গালকে রীতিমতো হাইকোর্ট দেখিয়ে দেন মন্ত্রী।
মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক সাম্প্রতিককালে কয়েক লাখ লোককে বৈধ করে নেয়ার বিষয়টির ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়া সরকার সম্প্রতি যে ৫ লাখ লোককে তাদের দেশে বৈধ করে নিছে, তাদের মধ্যেই কিন্তু বছরে আমাদের প্রত্যাশিত ঐ ১ লাখ লোক। যাদেরকে তারা বৈধতা দিছে, তাদেরকে তো আর হাওয়ায় দেয় নাই”। গোঁজামিলে ভরপুর এবং জঘন্য এই বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রেক্ষিতে উপস্থাপিকা মন্ত্রীকে বলেন, “এতোদিন আপনারা কিন্তু এভাবে বলেন নাই”। মন্ত্রীর কৌশলী জবাব, ‘‘আমারে সেইভাবে জিজ্ঞাস করা হয়নাই বইলা বলিনাই, আমি হাওয়ায়তো কথা বলতে পারবো না”।
উপস্থাপিকা মুন্নী সাহা মন্ত্রীর সাথে যুক্তিনির্ভর আলোচনার চেষ্টা চালালেও কালো পলিসি জি-টু-জু’র প্রসঙ্গ উঠতেই নার্ভাস হয়ে যান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ। “গভর্নমেন্ট-টু-গভর্নমেন্ট এগ্রিমেন্টের বাধ্যবাধকতার কারণে গত ২ বছরে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি এতোটা স্লো হবে এটা কি আপনারা ভেবেছিলেন”? – প্রশ্নের জবাবে তাচ্ছিল্যের সুরে মন্ত্রীর বালসুলভ জবাব, “এইটা যদি পিয়াঁজ-মরিচ কিংবা কোন কনজিউমেবল আইটেম হতো, তবে সেইভাবে আমরা রপ্তানি করতে পারতাম। মানুষ যাবে, ঐখানে যদি প্রয়োজন না থাকে, ফোর্স করে তো আর সেইখানে পুশ করা যায় না”।
আলোচনার এ পর্যায়ে উপস্থাপিকা অবশ্য মন্ত্রীর কাছে জানতে চাননি, মালয়েশিয়াতে যদি জনশক্তির প্রয়োজনই না থাকতো তবে কেন ঢাকঢোল পিটিয়ে বছরে ১ লাখ লোক পাঠাবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিলো ? কেন সরকারের ৭ কোটি টাকা অপচয় করে গত বছর নিবন্ধনের নামে মালয়েশিয়া যাবার কথা বলে সমগ্র বাংলাদেশ থেকে ১৪ লাখ লোককে তালিকাভুক্ত করা হলো ? টিভি অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর ক্রমবর্ধমান নার্ভাসনেস এবং বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে যাবার প্রবণতা আঁচ করতে পেরে উপস্থাপিকা মন্ত্রীকে বলেন, “কিন্তু আপনারা প্রচারটা যেভাবে করেছেন ….”। মুন্নী সাহাকে থামিয়ে দিয়ে খন্দকার মোশাররফের দম্ভোক্তি, ‘‘প্রচারটাতো আমরা করি নাই, প্রচারটা করেছেন আপনারা”।
‘কানেকটিং বাংলাদেশ’ আলোচনা জমে উঠে এ যাত্রায় এটিএন নিউজের পর্দায়। ঝানু উপস্থাপিকা জায়গামতো ধরে বসেন মন্ত্রীকে – “তাহলে কি আমরা সেটা অপপ্রচার করেছিলাম”? ক্ষমতার দাপটে দিশেহারা মন্ত্রীর জবাব, “আমরা ১ বললে আপনারা ৫ বলেন। আমরা যতটুক সংযতভাবে বলার চেষ্টা করি, আপনারা আরেকটু বাড়াইয়া বইলা আমাদেরকে চাপ সৃষ্টি করেন। ব্যাপকহারে লোক যাবে এইটাতো আমরা বলতেই পারি, বললেই এইটাকে ….”। মন্ত্রীকে উপস্থাপিকার প্রশ্ন, “ওটা কি তাহলে চাপের মুখে বলেছেন তখন”? মন্ত্রীর সোজাসাপ্টা উত্তর, “না, প্রচারের মধ্যে আইসা গেছে যে ব্যাপকহারে লোক যাবে”।
খোলাসা করে মুন্নী সাহা বললেন, ‘‘তাহলে ব্যাপারটা ঠিক ততোটা নয় যতোটা প্রচারে এসেছে। তার মানে এই ৫ হাজারই যাওয়ার কথা ছিল, আমরা এমনিতেই প্রচার করেছি ১ লাখ”। আলোচনার এ যাত্রায় খেই হারালেন বয়সের ভারে ক্লান্ত প্রতাপশালী এই মন্ত্রী। উপস্থাপিকাকে থামিয়ে দেবার পাশাপাশি হাত দিয়ে দৃষ্টিকটু অঙ্গভঙ্গি করে বলে উঠলেন, ‘‘না না, কথাটা বেঁকাভাবে নিয়েননা, আপনার সাথে কিন্তু আমি এখন কমপিটিশনে নাই”। সশব্দে হেসে উঠেন এটিএন নিউজের মুন্নী সাহা। বারবার মন্ত্রীর চোখমুখ লাল হয়ে গেলেও হাল ছাড়েননি উপস্থাপিকা।
অপরপ্রান্তে কুয়ালালামপুরে এটিএন নিউজের অস্থায়ী স্টুডিওতে উপস্থিত বাংলাদেশিরা অবাক বিস্ময়ে শুনেই যাচ্ছিলেন মন্ত্রীর বিভ্রান্তিকর এবং ঔদ্ধত্বপূর্ণ কথাবার্তা, মুখ লুকিয়ে হাসতে দেখা যায় তাদের কয়েকজনকে। সরকারের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের বিশাল দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বাংলাদেশের মাথায় চাপিয়ে দেয়া ভুল পলিসি জি-টু-জি’র ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন যেভাবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা চালালেন, তাতে ইতিমধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়াতে।
[youtube Pkt0hSkKUQo?modestbranding=1&rel=0 nolink]