(১) প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্সে সচল থাকে দেশের অর্থনীতির চাকা অথচ প্রাপ্তবয়স্ক লক্ষ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশীরা আজো বঞ্চিত তাঁদের জন্মগত এবং সাংবিধানিক অধিকার ‘ভোটাধিকার’ থেকে। পৃথিবীর সব দেশের প্রবাসীরা যার যোর দেশে বসে ভোট দিতে পারেলেও পারে না শুধু বাংলাদেশীরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবেন এমন প্রতিশ্রুতি আপনি নিজে বিদেশে এসে বহুবার দিয়েছেন কিন্তু ফলাফল যথারীতি ‘শূন্য’।
(২) দূর প্রবাসে বাংলাদেশ দূতাবাস হবে খেটে খাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের সুখ-দুঃখের সাথী, বিশেষ করে ‘বিপদের বন্ধু’। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, অধিকাংশ বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতেই রয়েছে নেক্কারজনক বৈপরিত্ব। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা দেশী ভাইদের সাথে ভালো ব্যবহারের ‘পারফেক্ট ট্রেনিং’ ঢাকা থেকেই নিয়ে আসা প্রয়োজন দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে দেয়ার মতো অসংখ্য নালিশ আছে দেশে দেশে ভুক্তভোগী প্রবাসী বাংলাদেশীদের।
(৩) বিদেশে বছরজুড়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশে ফেরার সময় বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে জীবনের সবচাইতে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় বহু প্রবাসীকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সিংহভাগ রেমিটেন্স এলেও সেই মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের দিকেই লোলুপ দৃষ্টি থাকে বিমানবন্দরে দায়িত্বে থাকা নাদান-লোভী লোকজনের। সবকিছু দেখেও না দেখার ভূমিকায় উপরমহল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি চাইলেই দূর করতে পারেন সব অনিয়ম।
(৪) প্রবাসীদের করা বিনিয়োগের নিরাপত্তা দেবার কথা সরকার মুখে বললেও বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি এবং হচ্ছেও না। উল্টো ঘটছে জঘন্য সব কারবার। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বহু প্রবাসী বাংলাদেশী অনেক আশা-ভরসা করে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এলেও প্রতিটি সেক্টরে বাধ্যতামূলক ‘কমিশন’ বানিজ্যের সাথে তাল মেলাতে না পেরে হতাশ হয়ে যাঁর যাঁর দেশে ফিরে গেছেন এবং যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, খোঁজ নিয়ে দেখুন সবই সত্য।
(৫) আর্থসামাজিক বহুবিধ যৌক্তিক কারণে প্রবাসীরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সবচাইতে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘প্রমোট’ করার পরিণতিতে স্বল্প সময়ের জন্য দেশে আসা প্রবাসী বাংলাদেশীরা কে কোথায় বিপদে পড়লো তা মনিটর করার মতো ফলদায়ক কোন ‘সেল’ নেই কোথাও। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রবাসীদের পাশে থাকলে আপনার হারাবার কিছু নেই।
(৬) জাতির ‘সোনার সন্তান’ তথা প্রবাসী বাংলাদেশীদের পরিবার পরিজন যাঁরা দেশেই বসবাস করেন, তাদের স্বার্থ রক্ষায়ও অতীতের কোন সরকারই কিছু করা দূরে থাক, কোন পরিকল্পনাও গ্রহণ করেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি সবই জানেন বোঝেন এবং চাইলে অনেক কিছুই করতে পারেন।
(৭) প্রবাসী বাংলাদেশীরা যখন দেশে অবস্থান করেন তখন রাষ্ট্র ও সমাজের কোথাও কোন ‘প্রায়োরিটি’ পান না, যেমনটা পেয়ে থাকেন আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের অনাবাসী ভারতীয়রা। উচ্চশিক্ষার সুযোগ সহ চাকরি পাবার ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সন্তানদের ‘কোটা’ ভিত্তিক সুবিধা নিশ্চিত করলে এগিয়ে যাবে দেশ, ক্ষতিগ্রস্ত হবে না কেউই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি অবশ্যই এক্ষেত্রে একমত প্রকাশ করবেন।
(৮) জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের হয়ে কথা বলার জন্য কোন প্রতিনিধি অতীতে যেমন ছিল না, এখনও নেই। দেশের মোট জনসংখ্যার ১৬ বা ১৭ ভাগের এক ভাগ যদি প্রবাসী হয়ে থাকেন, তবে তাদের স্বার্থরক্ষায় জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে জাতীয় সংসদে ‘কোটাভিত্তিক’ আসন বরাদ্দের ন্যায্য দাবীটি বহুবার উচ্চারিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আন্তরিক হলেই নীতিনির্ধারকদের কানে পানি যাওয়া সম্ভব।
(৯) বিদেশে নতুন নতুন শ্রমবাজার সন্ধান করতে এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের সম্ভব সব ধরণের কল্যান নিশ্চিত করতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়। প্রতিষ্ঠাকালীণ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নিরহংকারী এমন একজন যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে যাঁর অভিজ্ঞতা রয়েছে প্রবাসে সাধারণ মানুষের সাথে ওঠাবসা করার। প্রবাসীদের দুঃখ-কষ্ট বোঝেন না এমন লোকরাই বিগত দিনে মন্ত্রীত্ব ‘এনজয়’ করেছেন এখানটায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অনেক কিছুই আপনার ওপর নির্ভর করছে।
(১০) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি খুব ভালো করেই জানেন আপনার বিদেশ সফরের সময় গনসংবর্ধনাকে ঘিরে কারা কেন কিভাবে করে সব তুলকালাম। আপনার সফরসঙ্গী নেতা-মন্ত্রীদের তোষামোদী করতেই তাদের সময় শেষ, প্রবাসীদের ন্যায্য দাবী-দাওয়া ও সমস্যা-সম্ভাবনার কথা আপনার কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরার হিম্মত তাদের অনেকেরই নেই। বিদেশে বসে দেশের রাজনীতির নোংরা চর্চার পাশাপাশি পাল্টাপাল্টি কমিটি করে ভিলেজ পলিটিক্সের মাধ্যমে তারা দেশের ইমেজ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে, সেটাও আপনার অজানা নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সব তথ্যই যেহেতু রয়েছে আপনার কাছে তাই আমরা এখনো আশাবাদী।