• Fri. Nov ২২, ২০২৪

আমিওপারি ডট কম

ইতালি,ইউরোপের ভিসা,ইম্মিগ্রেসন,স্টুডেন্ট ভিসা,ইউরোপে উচ্চ শিক্ষা

মেক্সিকোতে পরিচিতি পাচ্ছে বাংলাদেশ, আছে সহনীয় ইমিগ্রেশন আইন!

ByLesar

Jun 30, 2014

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : MEXICO’86 আটাশ বছর আগের বিশ্বকাপ ফুটবলের সেই জমজমাট আসর আজো যাদের স্মৃতির পাতায়, তাদের কাছে মেক্সিকোকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার প্রয়োজন নেই। তবে হাঁ, লাতিন আমেরিকান এই দেশটিতে বসবাসরত হাতে গোনা দু’শ বাংলাদেশির বৈচিত্রময় জীবনধারার সাথে আজ আমরা পরিচিত হবো, জানবো দেশটিতে ইমিগ্রেশনের সর্বশেষ পরিস্থিতি।[sociallocker]

সহনীয় ইমিগ্রেশন আইন ও বহুমুখী ব্যবসা বানিজ্যের সুযোগ বরাবরই থাকলেও মেক্সিকোতে কেন মাত্র ২০০ বাংলাদেশির বসবাস, এই প্রশ্ন যৌক্তিকভাবে স্বাভাবিক। উত্তরে এক কথায় বলা যায়, একসময়ের ‘স্বপ্নের দেশ’ আমেরিকা তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘ল্যান্ড বর্ডার’ থাকার সুবাদে বিগত দিনে বহু বাংলাদেশির পদচিহ্ন মেক্সিকোর মাটিতে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু বসতি গড়া আর হয়ে ওঠেনি তাদের।

সীমান্ত পাড়ি দেবার ঝুঁকির তোয়াক্কা না করে তাদের অধিকাংশই গুডবাই জানিয়েছেন মেক্সিকোকে। বর্ডার এরিয়াতে মেক্সিকান ফোর্সের ব্যাপক নজরদারি এমনকি সশস্র হেলিকপ্টার টহল উপেক্ষা করে আজো চলে দেশান্তরী হবার মরণখেলা, নেপথ্যে লাখ ডলারের বানিজ্য। আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালোনের লোভনীয় রুট হিসেবেও দিনরাত সবই চলে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে।

সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আমেরিকা যাবার স্বপ্নে বিভোর হননি এমন বাংলাদেশিরাই মেক্সিকোর মায়ার বাঁধনে আবদ্ধ হয়েছেন, থেকে গেছেন দেশটিতে। ১২ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত গোল্ড-সিলভার-পেট্রোলিয়াম-গ্যাস সমৃদ্ধ দেশ মেক্সিকোতে বাংলাদেশিদের বসবাস শুরু হয় মূলতঃ ২০০০ সালের পর থেকে। টাঙ্গাইলের আজাদ হোসাইন ও আতিক হোসাইন সহোদর আজ মেক্সিকো সিটিতে প্রতিষ্ঠিতি বাংলাদেশি ব্যবসায়ি।

‘তাজমহল’ ও ‘কাজা এলেফান্তে’ নামে দু’টি চালু রেস্টুরেন্টের মালিকানা তাদের। মেক্সিকো সিটির মাত্র ৫ টি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের মাঝে এই দু’টিও বেশ কয়েক বছর আগে যথারীতি ‘ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে মালিকপক্ষের দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার সুবাদে ইতিমধ্যে তা ‘বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট’ হিসেবে পরিচিত পেতে শুরু করেছে স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে।

দক্ষিণাঞ্চলীয় ওহাকা প্রদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রজেক্ট থাকায় নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনুস মেক্সিকোতে নিয়মিত আসা-যাওয়ার সুবাদে প্রায়ই তাদের রেস্টুরেন্টে এসে থাকেন। দেশটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্রিটিশ নাগরিকদের বসবাস থাকায় এবং চিকেন টিক্কা-কারির আন্তর্জাতিক মান শতভাগ অক্ষুন্ন রেখে স্পেশাল কাস্টমার সার্ভিস নিশ্চিত করায় ভালো ব্যবসা হচ্ছে বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন আজাদ হোসাইন। আজ থেকে ৫ বছর আগেও মেক্সিকানরা বাংলাদেশ বলতে কিছু চিনতো না, জানতো না।

দু’বছর আগে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিষ্ঠার আগ অবধি তাদের রেস্টুরেন্টকে ঘিরেই মেক্সিকোর রাজধানীতে মেলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশকে। ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ মিশন থেকে তখন দেখা হতো মেক্সিকো। ২০১২ সালের জুলাইতে দূতাবাসের কার্যক্রম চালু হবার পর তাদের সহযোগী শক্তি হিসেবে বছরের বিভিন্ন সময় বহুজাতিক মেলায় লাল-সবুজ পতাকায় সাজানো গোছানো স্টল দিয়ে ইতিমধ্যে স্থানীয় জনগণের প্রশংসাভাজন হয়েছেন আজাদ হোসাইন ও আতিক হোসাইন ভাতৃদ্বয়। তাদের পরিবারের সদস্যরাও স্বতঃস্ফুর্ত অংশ নিয়ে থাকেন বাংলাদেশের ব্যানারে প্রতিটি ইভেন্টে।

রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে বসবাস করেন প্রায় ৬০ জন বাংলাদেশি, যাদের অর্ধেকের বেশি শহরের বিভিন্ন স্পটে ভ্রাম্যমান জামা-কাপড়ের ব্যবসার সাথে জড়িত। ভারত থেকে আসা মালামাল তাদেরকে কিনতে হয় ডাউনটাউনের পাইকারি বাজার থেকে। আইনগতভাবে তাদের এই ধরণের ব্যবসা বৈধ না হলেও ইউএস ডলারের হিসেবে গড়ে হাজার ডলার আয় করেন অনেকেই। চোখ-কান একটু বেশি খোলা রেখে বাড়তি পরিশ্রম করে ২ থেকে আড়াই হাজার ডলারও মাসান্তে নিশ্চিত করছেন কেউ কেউ।

মেক্সিকো সিটির প্রাইভেট ফার্মে আইটি স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন ২ জন মেধাবী বাংলাদেশি, যারা পড়াশোনা শেষ করে আসেন ঢাকার বুয়েট থেকে। রাজধানীর বাইরে ওহাকা প্রদেশে ড. ইউনুসের প্রজেক্টে কর্মরত আছেন কিছু বাংলাদেশি। দক্ষিণাঞ্চলীয় আরেক প্রদেশ কাম্পেচে, যেখানে বিভিন্ন গার্মেন্টসেও কাজ করছেন বাংলাদেশিরা। পুরো দেশ জুড়ে বাংলাদেশি পরিবার সর্বসাকুল্যে ১০ টি। বেশ কয়েকজন বিয়ে করেছেন মেক্সিকান মেয়েদের, লিভ টুগেদারও করছেন কেউ কেউ। যে যেখানে যেভাবে আছেন, সাংসারিকভাবেও সুখে আছেন অর্থনৈতিকভাবে ভালো থাকার পাশাপাশি।

সীমান্ত এলাকায় সবসময় ব্যাপক কড়াকড়ি থাকলেও দেশের অভ্যন্তরে রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালায় গাঁথা বিশেষ ইমিগ্রেশন আইন। চলতি আইনে দেশটিতে মাত্র ৬ বছর বৈধভাবে থাকার পরই নাগরিকত্ব তথা পাসপার্টের জন্য আবেদন করা যায়। বৈধভাবে অবস্থানের ক্ষেত্রে যে কোন ইমিগ্রান্টকে দুই ধরণের স্তর পাড়ি দিতে হয়। প্রথমে টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিট FM-3, যা দেয়া হয় শুধুমাত্র তাদেরকেই যারা জব ভিসা নিয়ে বৈধভাবে মেক্সিকো এসে থাকেন।

প্রথমে ১ বছরের স্টে পারমিট এবং প্রতি বছর তা নবায়ন করা সাপেক্ষে ৪ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর FM-3 কার্ডধারী যে কেউ আবেদন করতে পারেন পারমামেন্ট রেসিডেন্স পারমিটের। এযাত্রায় আরো দু’বছর পার করতে পারলেই সময় এসে যায় পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিট FM-3 পাবার কোন সুযোগ নেই, যদিও কর্তৃপক্ষ চাইলে বিশেষ বিবেচনায় খুবই সীমিত ক্ষেত্রে কাউকে তা ইস্যু করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে থাকে।

অবৈধ অনুপ্রবেশকারী যারা মেক্সিকোকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার না করে দেশটিতে থাকতে চান, তাদের জন্য একমাত্র পথ হিসেবে খোলা থাকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার। মেক্সিকান প্রশাসন কর্তৃক এক্ষেত্রে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে আগন্তুকদের আবেদন। ভূমিকম্প প্রবণ হলেও নান্দনিক সৌন্দর্য আর চমৎকার আবহাওয়ার দেশ মেক্সিকোতে আগামী দিনে বাংলাদেশ কমিউনিটি সম্প্রসারিত হবে, সবকিছু বিবেচনায় তা এখনি অনুমিত হচ্ছে। [/sociallocker]

Lesar

আমিওপারি নিয়ে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত একজন সাধারণ মানুষ। যদি কোন বিশেষ প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে ফেসবুকে পাবেন এই লিঙ্কে https://www.facebook.com/lesar.hm

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version