১৯৪৮ সালের ১৬ আগস্ট বগুড়ায় জন্ম আতাউর রহমানের। আসছে রোববার তাঁর ৬৭তম জন্মদিন। অর্ধশতাব্দী আগের স্মৃতি রোমন্থন তাই জন্মদিনের প্রাক্কালে। বাবা হাবিবুর রহমান ভান্ডারি ছিলেন বগুড়ার স্বনামধন্য শিল্পপতি এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য। মাত্র ৯ বছর বয়সে ১৯৫৭ সালে পারিবারিক সূত্রে বগুড়া ছেড়ে বিলেতে পাড়ি জমাবার পর সেখানেই কাটে তাঁর ২০টি বছর। পড়াশোনা শেষ করে হন চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। এরই মধ্যে ভালোবেসে বিয়ে করেন নিউজিল্যান্ডের মেয়ে ক্যারোলিনকে, যদিও বিয়েতে আপত্তি ছিল দুই পরিবারের তরফ থেকেই। ৪ বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন ক্যারোলিন। ১৯৭৬ সালে দু’বার বাবার হার্ট অ্যাটাকের খবর শুনে দেশে যাবার জন্য স্বামীকে রাজী করান এই কিউই-কন্যা। লন্ডন-টু-অকল্যান্ড শুরুটা এভাবেই।
স্ত্রী ক্যারোলিনের আবদার রক্ষাই শুধু করেননি তখন আতাউর রহমান, কন্ডিশন দিয়ে বলেছিলেন “চলো আমরা দু’বছরের জন্য ঘুরে আসি”। যেমন কথা তেমন কাজ। ১৯৭৭ সালের সেই মাহেন্দ্রক্ষণে আতাউর দম্পতি লন্ডন থেকে উড়ে এলেন অকল্যান্ডে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নিউজিল্যান্ড ভালো লেগে গেলো তাঁর, মাত্র ৭ দিনের মধ্যে ভালো একটি জবও পেয়ে গেলেন। ১৯৭৭ থেকে টানা ৯ বছর চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হিসেবেই বিভিন্ন নামীদামী কোম্পানিতে কাজ করার পর ১৯৮৬ সালে আতাউর রহমান অকল্যান্ডে প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর নিজের কনসাল্টিং কোম্পানি ‘রহমান ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড’। এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, “আসলে ঐ সময় এদেশে ইমিগ্রেশন পলিসি বলতে কিছুই ছিল না। জব প্রায়োরিটি পলিসিতে তখন এরা ইউকে থেকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের মতো প্রফেশনালদের নিতো। ইউকে কোয়ালিফাইডদের বিরাট ডিমান্ড ছিল তখন এখানে। ১৯৯০ সালে পয়েন্ট সিস্টেম স্কিল্ড ক্যাটাগরি প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে ইমিগ্রেশন পলিসি ঢেলে সাজাবার পর বিভিন্ন দেশের লোকজন নিউজিল্যান্ডে আসতে শুরু করে”।
অনারারি কনসাল জেনারেল আতাউর রহমান আরো বলেন, “১৯৭৭ সালে আমি যখন অকল্যান্ডে আসি তখন এখানে কোন বাঙালী ছিল না। শুধুমাত্র একজন ভদ্রলোক যিনি একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন তিনি কর্মসূত্রে রাজধানী ওয়েলিংটনে আগে থেকেই বসবাস করতেন। তাঁর সাথে তখন আমার পরিচয় হয়েছিল কিন্তু অল্প কিছুদিন পরই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। আসলে ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে বৈধ কোন বাংলাদেশী ছিল না। অনেকে ভিজিটর ভিসায় এসে কাজ করতেন এবং ধরা পড়ার পর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তাদেরকে ‘ইকোনমিক রিফিউজি’ হিসেবে দেখা হতো তখন”। বৈধভাবে বাংলাদেশীদের আগমন তথা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াররা ১৯৯২-৯৩ সাল থেকে এদেশে আসতে শুরু করে বলে জানান অনারারি কনসাল জেনারেল।
অকল্যান্ডে বাংলাদেশ কমিউনিটির গোড়াপত্তনেও নেতৃত্ব দেন আতাউর রহমান। দুই দুইটি এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। এক সময় এখানকার ইমিগ্রেশন, এমপ্লয়মেন্ট, রিফিউজি এন্ড মাইগ্রেন্ট সার্ভিসেও ভলান্টিয়ার অফিসার হিসেবেন কাজ করেছেন এই গুণীজন। নিউজিল্যান্ডে যেহেতু বাংলাদেশ দূতাবাস নেই এবং সবকিছু দেখা হয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী থেকে, তাই দেশটিতে তিনিই রিপ্রেজেন্ট করছেন বাংলাদেশকে। রাজধানী ওয়েলিংটনে আরেকজন অনারারি কনসাল জেনারেল দায়িত্বে থাকলেও অকল্যান্ডকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ কমিউনিটি। বিগত দিনে বাংলাদেশের স্বার্থে ভালো যা কিছু করেছেন বা করার চেষ্টা করে সফল হননি, তা নিয়েও কথা বলবেন আতাউর রহমান। তার আলোকে চলতি সপ্তাহেই তুলে ধরা হবে নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বানিজ্যিক সম্পর্কের প্রাসঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি।