পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম এফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান রিয়ার এডমিরাল (অব) খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে তদন্তদলে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক আবদুস সবুর মন্ডল এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এডমিনিস্ট্রেশন উইংয়ের পরিচালক কাজী আনারকলি। ১০ জুলাই রবিবার দূতাবাসের অভ্যন্তরে আয়োজিত গনশুনানির মধ্য দিয়ে গ্রীসে কাজ শুরু করে তদন্তদল। এথেন্সের সর্বস্তরের বাংলাদেশিরা স্বতঃস্ফূর্তভাব যোগ দেয় শুনানিতে।
২০০৯ সালে দূতাবাস প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৩ সালের শুরু অবধি কাউন্সিলরের দায়িত্বে থাকা বি এম জামাল হোসেনের দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র প্রথম দিনেই পরিষ্কার হয়ে যায় তদন্ত টিমের কাছে। বি এম জামালের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে এবং কনস্যুলার এসিস্টেন্ট রাজিব আহমেদের সহায়তায় দুই শীর্ষ দালাল শেখ কামরুল ইসলাম ও মিজানুর রহমানের ‘সুপার সিন্ডিকেট’ কিভাবে বছরের পর বছর জিম্মি করে রেখেছিলো গ্রীসের খেটে খাওয়া হাজার হাজার বাংলাদেশিদের, তার নানান ‘এভিডেন্স’ জমা দেয়া হয় তদন্তদলের নিকট।
গণশুনানিতে সশরীরে উপস্থিত বহু ভুক্তভোগীর মাঝে রাজস্বাক্ষীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এথেন্সের সফল গার্মেন্টস ব্যবসায়ী নুরুল আমিন, স্বাক্ষ্য দেন আরো অনেকে। সোম, মঙ্গল ও বুধবার দলে দলে লোকজন আসে দূতাবাসে, সবার সাথে খোলামেলা কথা হয় তদন্ত টিমের। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দেন তদন্তদলের সবাই। এথেন্সের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক মতামত গ্রহণ করা হয়। গ্রীসের মুখচেনা দালালরাও বিভিন্ন সংগঠনের পরিচয়ে প্রবেশ করে দূতাবাসে।
ছলে বলে কৌশলে তারা তদন্তদলের নিকট দাবি জানায় রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদকে অপসারণের, তবে কী তাঁর অপরাধ – এই প্রশ্নের প্রামাণিক জবাব দিতে না পারলেও ঘুরেফিরে সেই একই প্রলাপ ছিল তাদের। একাধিক সংগঠনের পরিচয়ে আসা দালাল গ্রুপের হাতে গোনা সদস্যরা যখন তদন্ত টিমের জেরার মুখে কুলিয়ে উঠতে পারছিলো না, তখন মাদারীপুর জেলার এক দালাল আঞ্চলিকতার সূত্রে সরাসরি ফোন করে বসে মন্ত্রী শাজাহান খানের মোবাইলে। গ্রীসের দালালদের চিনে হোক বা না চিনে হোক, সরকারি তদন্ত টিমকে বিব্রত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নৌমন্ত্রী বিতর্কিত হলেন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও।
বিশ্বস্ত সূত্র এই প্রতিবেদককে আরো নিশ্চিত করছে, রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে যৌন কেলেংকারির অভিযোগ আনা আইওএম-এর ‘পার্টটাইম’ দোভাষী লায়লা এন্টিপাসকেও দূতাবাসে হাজির করে দালাল চক্র। তদন্তটিমের মুখোমুখি হয়ে লায়লা খেই হারিয়ে ফেলে। তার অসামঞ্জস্যপূর্ণ কথাবার্তায় অনেকটা ‘টেবিল রিজেক্ট’-এর পর্যায়ে চলে যায় আনীত অভিযোগনামা। এদিকে রাজস্বাক্ষী নুরুল আমিনের দুঃসাহসী ভূমিকায় দ্রুত পাল্টে গেছে দালাল সিন্ডিকেটের সব হিসেব নিকেশ।
জামাল, রাজিব, কামরুল ও মিজানের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দেয়ার অপরাধে ব্যবসায়ী নুরুল আমিনকে বিভিন্নভাবে দেয়া হচ্ছে হুমকি, বলা হচ্ছে ঢাকায় গেলে আর গ্রীসে ফেরা হবে না তাঁর। গ্রীসের কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ অবাক বিস্ময়ে জানতে চেয়েছেন, সাড়ে ৩ বছরে কয়েক লাখ ইউরো হাতিয়ে নিয়ে যওয়া কাউন্সিলর বি এম জামাল কী করে এখন বহাল তবিয়তে আছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ? একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের সততার মূল্যায়ন করার পাশাপাশি দালাল সিন্ডিকেটের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ।
[youtube x-OmJZuAEVs?modestbranding=1&rel=0 nolink]