অর্থনৈতিক মন্দা যেন কাটছেই না ইউরোপিয় ইউনিয়নভুক্ত (ইউ) দেশগুলোর। একদিকে দেশগুলোর উত্পাদন কমছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে কমছে রপ্তানি। আবার এরই মাঝে ইউরো জোনের ঘাড়ে চেপে বসেছে বেকারত্বের বোঝা। বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় জিনিসপত্রের বিক্রিও বেশ কমে গেছে। গত এপ্রিল মাসে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বেকারত্ব রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। এতদিন আনুষ্ঠানিক হিসেব প্রকাশিত না হলেও মনে করা হচ্ছিলো বেকারত্ব বাড়ছে। কিন্তু সেটি যে এতটা প্রকট তা কেউ অনুমান করতে পারেনি। এখন এ অঞ্চলে বেকারত্বের হার ১২ দশমিক দুই শতাংশ। শুধু এপ্রিল মাসে এ অঞ্চলের ৯৫ হাজার লোক চাকরি হারিয়েছেন। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা স্পেন এবং গ্রিসের। এ দু’টি দেশে কর্মক্ষম লোকের মধ্যে ২৫ শতাংশের বেশি বেকার। তবে অস্ট্রিয়াতে বেকারত্বের হার ৫ শতাংশের নিচে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, জার্মানিতে বেকারের হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আর লুক্সেমবার্গে তা ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে বেকারের সংখ্যা যা ছিলো তাতে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। যেমন ওই সময়ে গ্রিসের বেকারত্বের হার ছিলো ২৭ শতাংশ। স্পেনের বেকারত্ব ছিলো ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ ফ্রান্সেও বেকারত্বের হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে বলে সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে। ক্রেডিট এগ্রিকোলের একজন বিশ্লেষক বলেন, ফ্রান্সে যে মন্দা বিরাজ করছে তা থেকে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের আগে বের হওয়া যাবে না।
ইউরোপের নেতৃবৃন্দ এ মন্দাবস্থা থেকে বের হবার জন্য যতটা না চিন্তা করছেন তার চেয়ে বেশি চিন্তা করছেন বেকারত্ব থেকে তৈরি সামাজিক সমস্যা নিরসনের উপায় নিয়ে। বিশেষ করে যুবকরা বেকার হয়ে যাবার ফলে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যাদের বয়স ২৫ বছরের নিচে তাদের মধ্যে ৩৬ লাখ যুবক এখন বেকার রয়েছেন। ইতালির যুবকদের মধ্যে ৪০ শতাংশেরও বেশি বেকার। ইতালির প্রেসিডেন্ট তো সরাসরিই বলেছেন, তারা একটি সামাজিক সমস্যা নিয়ে দিনাতিপাত করছেন। যুবকদের কাজে ফিরিয়ে আনার জন্য কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইউরোজোনের ক্রমাগত এ পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত তিনি।
তার মতে, ১৯৯৯ সালে যখন মন্দা লাগে তখনও ইউরোজোনের দেশগুলোতে বেকারত্বের হার ছিলো ১১ শতাংশ। বিগত বছরগুলোতে এ হার কখনোই কমেনি। এদিকে ইউরোপের দেশগুলোতে খুচরা বিক্রি কমে যাবার ফলে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। জার্মানিতে এক মাসের ব্যবধানে খুচরা বিক্রি আধা শতাংশ কমেছে। কারস্টেন ব্রাজেস্কি নামের একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, ইউরোপের দেশগুলোতে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে প্রতি বছর অর্থনীতিতে দেড় শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এছাড়া সুদের হার কমিয়ে অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনার কথাও বলেছেন তিনি। ইতিমধ্যে ইউরোপের কয়েকটি ব্যাংক তাদের সুদের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছে। ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, অর্থনীতিতে গতি আনতে দরকার হলে আরো কিছু করা হবে। এ নিয়ে ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসবে বলেও জানা গেছে।
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতে “এখানে ক্লিক করুণ” তুলে ধরুন নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। ]]