শিরোনাম পড়ে হাসছেন নিশ্চয়ই? ভাবছেন ফেসবুকে লাইক নিয়ে আবার কথা বলার কি আছে? আসলে কিন্তু আছে। একটা লাইককে যতখানি সস্তা বা সহজ বিষয় বলে মনে করছেন আপনি, ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও সেরকম নয়। বরং একটা লাইক আপনার ব্যক্তিত্ব আর রুচিশীলতার মাত্রাকে এক মুহূর্তে নিচে নামিয়ে দিতে পারে। মুহূর্তের মাঝে নষ্ট করে দিতে পারে একটি সম্পর্ক। শুধু তাই না, আপনাকে উপস্থাপন করতে পারে একজন রুচিহীন বা কুরুচিপূর্ণ মানুষ হিসাবেও। কিভাবে? আসুন জেনে নেয়া যাক
- সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট গুলো, বিশেষ করে ফেসবুক এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, তাই না? একটি খারাপ সংবাদ বা মনের দুঃখ আমরা এখন স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ভাগ করে নেই সকল বন্ধুদের সাথে। ব্যাপারটা মোটেও খারাপ কিছু নয়, তবে কখনও কখনও বিব্রতকর বৈকি। ধরুন কারো বাসায় একজন মানুষ মারা গিয়েছে, আর আপনি সেই স্ট্যাটাসে লাইক দিলেন! হ্যাঁ, আপনারা অনেকেই এমনটা করে থাকেন। আপনি হয়তো লাইক দিলেন এটা বোঝানোর জন্য যে আপনি স্ট্যাটাসটি দেখেছেন। কিন্তু কারো মৃত্যু সংবাদে লাইক দেয়ার অর্থ কি দাঁড়ালো, সেটা কি একবার ভেবে দেখেছেন কি? সুতরাং মৃত্যু সংবাদ বা দুঃসংবাদে লাইক না দিয়ে একটি কমেন্ট করুন বা সহানুভূতি জানান। কিন্তু লাইক কোনভাবেই নয়।
- আবার অনেকেই হয়তো জানেন না যে ফেসবুকের নতুন আপগ্রেডিঙ গুলোর ফলে ক্রমশ স্বচ্ছতা বাড়ছে। অর্থাৎ একজন মানুষ তার নিউজ ফিডে না চাইলেও দেখতে পাচ্ছে তার কোন বন্ধু কি করছেন ফেসবুকে। যেমন ধরুন আপনি কোন পেজ বা ছবিতে লাইক দিলেন, সেটা কিন্তু আরেক বন্ধু অনায়াসে দেখতে পায়। আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা ১৮+ পেজ গুলো বা পর্ণগ্রাফি সম্পর্কিত পেজ বা পোস্ট গুলোতে লাইক কমেন্ট করে থাকেন। কখনও ভেবে দেখেছেন কি আপনার এই অভ্যাস অন্য বন্ধুদের সামনে আপনাকে কি ভীষণ রুচিহীনভাবে উপস্থাপন করছে?
- আবার অনেকেই দেখা যাচ্ছে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে গিয়ে না বুঝেই লাইক দিয়ে আসেন। যেমন ধরুন কেউ “ইন এ রিলেশনশিপ” থেকে স্ট্যাটাস “সিঙ্গেল” করে ফেললো। তার মানে এই যে মানুষটির সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে। তিনি রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস বদলে ফেলেছেন মানেই আপনাকে লাইক দিতে হবে, এমন কোনও কথা নেই।
- অনেকেই আছেন অন্যের কুৎসা করে স্ট্যাটাস দেন। যাকে বলে রীতিমতন কাদা ছোঁড়াছুড়ি অবস্থা। এতে করে সেই মানুষটির নিজের সম্মান তো হানি হয়য়ই, সাথে যারা সেই স্ট্যাটাসে লাইক দেন তাদেরকেও মানুষ গীবতকারী বা কুৎসা রটনাকারীই মনে করে।
- এছাড়াও অনেকেই আছেন কেবল লাইক দেয়ার জন্য লাইক দিয়ে থাকেন। হয়তো যে ছবি, পোস্ট বা স্ট্যাটাস দেখছেন, সেটা তার মোটেও পছন্দ হয়নি। কিন্তু নিজেকে “অ্যাকটিভ” প্রমাণের জন্য বা “দেখেছি” প্রমাণের জন্য লাইক দিয়ে দিলেন। কাজটা কি ঠিক হলো, একবার ভাবুন তো! এতে আপনি “অ্যাকটিভ” প্রমাণিত হন না মোটেই,বরং এই লাইকে আপনার ব্যক্তিত্বহীনতাই প্রকাশ পায়।
একটা জিনিশ ভুলে যাবেন না যে ‘লাইক’ হচ্ছে এক রকম ভোট। কিছু একতায় আপনি লাইক দিলেন অর্থ আপনি জিনিশটা পছন্দ করছেন। একটি মৃত্যু সংবাদ পছন্দ করার ব্যাপারটা কি রকম হৃদয়হীন, একটি পর্ণ ছবি বা আপনার কোনও বন্ধুর নামে কুৎসায় লাইক দেয়াটা যে কি রকম রুচিহীন- আশা করি বুঝতে পারছেন এবার!
অনেক ফেসবুক ইউজার এখনও জানেনা Cyber Crime Act 4 (A) – For social media communication sites অনুযায়ী প্রতিটি লাইক বা কমেন্ট ঐ পোস্টের ধরনের সাথে আইনের আওতাধীন হয়ে উক্ত ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় বহন করে। তাই লাইক বা কমেন্ট করার সময়ে ভালোভাবে পড়ে বুঝে শুনে দেখতে হবে, যাতে নিজের দৃষ্টিভঙ্গির কোনরূপ অমর্যাদা না ঘটে।
লিখেছেনঃ ফজলুল করিম রনি
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতে “এখানে ক্লিক করুণ” তুলে ধরুন নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। ]]