প্রিয় ভাই ও বোনেরা প্রথমেই আমার সালাম নিবেন আশা করি আপনারা সাবাই ভালো আছেন। আমি আমার জীবনে কখনো কোন ব্লগ বা ওয়েব সাইটে লেখা লেখি করিনি, তাই আমার লেখায় কোন ভুল থাকলে ক্ষমা করে দিবেন। আমি ইতালির রোমে থাকি রোমের সেন্টার টারমিনির কাছে এক আবাসিক হোটেলে রিসিপসনিস্ত এর কাজ করি। তাই আমার দেখা কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরবো আপনাদের কাছে যাতে আপনারা এই ধরনের ঘটনা থেকে নিজে ও অন্যকে সাবধান করতে পারেন। প্রথমে আমি এই আমিওপারি ডট কম সাইটের পরিচালনা কারিদের আমার পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাতে চাই কেননা তাদের এই সাইটটি বেক্তিগত ভাবে আমার কাছে খুব ভালো লাগে এবং এটি আমরা যারা প্রবাসে থাকি তাদের জন্য খুবী উপকারি একটি সাইট বলে আমার মনে হয়। কেননা আমার সাথে ঘটা ও আমার দেখা এরকম অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে এই ইতালির রোম টারমিনি ঘিরে কিন্তু কখনো এই অভিজ্ঞতা গুলো অন্নের সাথে শেয়ার করার মাধ্যম পাইনি। তবে আজ এই সাইট এর মাধ্যমে তা করতে পাড়ছি,আমি চেষ্টা করবো আমার জানা সব গুলো অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে এবং এভাবে আপনারাও তুলে ধরবেন আপনাদের অভিজ্ঞতা তাহলে আমরা এক সময় অনেক কিছুই জানতে পারবো। যাই হোক এবার কাজের কথায় আসি, আমি প্রথমে আমার সাথে হোটেলে কাজ করা অবস্থায় ঘটা একটা মজার ও দুঃখের ঘটনা শেয়ার করবো। ঘটনাটি ঘটে আজ থেকে প্রায় ৬ বছর আগে, আমি তখন একটি ৩ স্টার হোটেলে রাত্রের শিফটে কাজ করতাম।
রাত ১১ থেকে সকাল ৭ তা পর্যন্ত। আমি রাতে ঠিক ১০:৪০ মিনিতে হোটেলে প্রবেশ করতাম ১০ মিনিট সময় লাগতো আমার ড্রেস পালটাতে আর বাকি ১০ মিনিট আমার কলিকের কাছ থেকে কাজের দায়িত্ব বুঝে নিতাম এবং পড়ে কিছু সময় নিজেরা গল্প করে কাটাতাম, যেমন ও আমাকে হোটেলে কে কি করেছে বা মজার কিছু ঘটলে তা নিয়ে হাসিঠাট্টা করতাম। এভাবেই চলতে থাকে। একদিন আমাদের হোটেলে অ্যামেরিকা থেকে একটি পরিবার আসে গরমের ছুটিতে, যেহেতু আমি সকাল ৭ তা পর্যন্ত কাজ করতাম তাই অনেক সময় আমাদের হোটেলে ক্লাইন্তরা সকাল সকাল চলে আসতো, যদিও আমাদের হোটেলের নিয়ম ছিল দুপুর ২ টার পর থেকে চেক ইন করা কিন্তু অনেক টুরিস্ট সকাল সকাল হোটেলে এসে তাদের লাগেজ রেখে ঘুরতে চলে যেতো পড়ে সন্ধায় বা ২ টার পর এসে চেক ইন করে রুমে প্রবেশ করতো।
তো যাই হোক সেই অ্যামেরিকান পরিবারের ওরা ছিল চার জন বৃদ্ধ বাবা-মা ও সাথে ছেলে ও ছেলেও স্ত্রি। ওরা যেহেতু সকাল সকাল চলে আসে তাই আমি ওদের রুম নাম্বার দিয়ে দেই এবং ওদের লাগেজ গুলো ডিপোজিটে রেখে বলি তোমরা ২ টার পড়ে এসো তখন তোমাদের রুম তৈরি থাকবে। যেমন কথা তেমন কাজ ওরাও চলে যায় লাগেজ রেখে বাইরে ঘুরতে আর আমি সেই দিনের মতো আমার কাজ শেষ করে বেরিয়ে যাই আমার পরের শিফটটে যে কলিক রয়েছে তাকে সব দায়িত্ব বুঝিয়ে।
পড়ে রাত্রে যখন আবার কাজে আসি সব কিছু নিয়ম মতো কলিকের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজে মনোযোগ দেই। সেই সময় দেখি সেই অ্যামেরিকান পরিবারের ছেলেতি নিচে নেমে আমার কাছে এসে গল্প করতে চাইলো তখন আমিও ফ্রি ছিলাম তাই ওর সাথে গল্প করা শুরু করলাম। ওর বয়স ছিল ৪০ এর কাছাকাছি আর বাবার বয়স ছিল ৯০ আপ, ওর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ওর বাবা জন্মগত একজন ইতালিয়ান আর ওর মা ও ওর স্ত্রি অ্যামেরিকান এবং ওর বাবার বয়স অনেক হয়ে গিয়েছে এবং শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ও বললো ওর বাবার নাকি শেষ ইচ্ছা মরার আগে নিজের দেশ থেকে একবার ঘুরে যাওয়া আর সেই উদ্দেশেই ওদের ইতালি আসা। যাই হোক এভাবে ওর সাথে কথা বলতে বলতে অনেক কিছু জানা হোল এবং আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে গেলো, এক পর্যায়ে রাত অনেক হয়ে যাওয়ায় ও চলে যায় ওর রুমে আর আমি আমার মতো কাজে মনোযোগ দেই। সেদিনেই কাজ শেষ করে আবার বেরিয়ে যাই।
পরের দিন যখন আবার কাজে যাই তখন গিয়ে দেখি আমার কলিক রিসিপসন ডেস্কে নেই হোটেলের দরজা ভিতর থেকে লক করা, কি আর করা আমি চিন্তা করলাম হয়তো বাথরুমে গিয়েছে তাই অপেক্ষা করতে থাকলাম, কিছুক্ষন পর দেখি ও দৌড়ীয়ে হোটেলের সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে হোটেল গেট কাঁচের হওয়ায় বাইরে থেকে ভিতরের সব কিছু দেখা যায়। তখন ও আমাকে দেখতে পেয়ে দরজা খুলে দিলে আমি ওকে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে তুমি এভাবে দৌড়ীয়ে নেমে আসলে আর তোমাকে এতো নারভাজ দেখাচ্ছে কেন, ও আমাকে বললো ২২২ নাম্বার রুমের একজনের অবস্থা খুব থারাপ এক্ষনি এম্বুলান্স কল করতে হবে, ২২২ নাম্বার রুম বলতে সেই অ্যামেরিকান পরিবাররের স্তিভ এর বাবা যার সাথে আমি গতকাল অনেকক্ষণ সময় কাটিয়েছি। তখন আমি সাথে সাথে ওর রুমে চলে চাই ঘটনা সম্পর্কে জানার জন্য আর ততোক্ষণে আমার কলিক এম্বুলান্স কল করতে থাকে, গিয়ে দেখি বুড়োর অবস্থা খুবী করুন যায় যায় অবস্থা, তখন আমি আবার নিচে নেমে আসি এসে এম্বুলান্স এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকি, কিছুক্ষনের মধ্যে এম্বুলান্স চলে আসে, এদেশের নিয়ম অনুযায়ী আবাসিক হোটেল থেকে এম্বুলান্স কল করলে এম্বুলান্স এর সাথে একজন ডাক্টার ও থাকে। তো এম্বুলান্স আসলে ডাক্টার আমাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে এবং রোগী কোন দেশি তখন আমি ওকে বললাম কি হয়েছে তা জানি না তবে রোগী অ্যামেরিকান। তখন আমি ওকে বললাম আপনি ইংরেজি পারেন ডাক্টার আমাকে বললো নো প্রবলেম নো প্রবলেম তুমি আছনা। তখনি আমার বুঝ হয়ে গেলো ডাক্টার ইংলিশ পারে না। উল্লেখ্য এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো ইতালিতে ৯০% ইতালিয়ান ইংরেজি বলতে পারে না। যাই হোক আমি ওকে নিয়ে উপরে ২২২ নাম্বার রুমে রোগীর কাছে গেলাম গিয়ে দেখি বুড়ো শেষ মানে মাড়া গিয়েছে। তখন ডাক্টার রোগীকে দেখে আমাকে বলে আমি ওদের অনুবাদ করে বলি, আবার ওরা আমাকে বলে সেটা আবার ডাক্টার কে অনুবাদ করে বলি।
কিন্তু এখানে দুঃখের হলেও একটি মজার ব্যাপার হোল ডাক্টার সালার ব্যাটা ওদের বাবা মারা গিয়েছে সেখানে ও একটাই ইংলিশ ওয়ার্ড জানে আর তাহলো ‘’নো প্রবলেম’’ ইটস ওকে। স্তিভ ওর বাবার জন্য কান্না করছে বাবা বাবা করে চিল্লাচ্ছে সেখানে ডাক্টার ওদের সান্তনা দিচ্ছে মাই ফ্রেন্ড no problem, no problem it’s ok ,it’s ok তখন সেই সময়টাতে স্তিভ ও তার পরিবারের ডাক্টাররে প্রতি চাহনি দেখে আমি আর আমার হাসি আটকিয়ে রাখতে পারিনি,আমি সেখান থকে দৌড়ে একটু দূরে গিয়ে হেঁসে ফেলি ডাক্টারের কর্ম কাণ্ড দেখে। চিন্তা করেন একটা মানুষ মারা গিয়েছে সেখানে ও বলে no problem,no problem it’s ok … পড়ে আমি স্তিভকে অন্নভাবে সান্তনা দিলাম। যাই হোক এটি ছিল আমার হোটেল লাইফের প্রথম বাস্তব অভিজ্ঞতা এরকম আরো অনেক মজার মজার প্রয়োজনীয় ও শিক্ষণীয় ঘটনা রয়েছে যা আমি চেষ্টা করবো ধীরে ধীরে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে। আজ এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন ধন্যবাদ। আর আমার লেখায় কোন ভুল থাকলে ক্ষমা করে দিবেন ছোট ভাই মনে করে।
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতে “এখানে ক্লিক করুণ” তুলে ধরুন নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। ]] আর আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে রয়েছে অনেক মজার মজার সব ভিডিও সহ আরো অনেক মজার মজার টিপস তাই এগুলো থেকে বঞ্চিত হতে না চাইলে এক্ষনি আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে লাইক দিয়ে আসুন। আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে যেতে এখানে ক্লিক করুন।