শিল্পী সেলিম মূলত রাজস্বিক প্রকৃতির বিমূর্ততা নিয়ে কাজ করেন। তিনি প্রকৃতির ক্ষুদাতিক্ষুদ্র বিষয়াদির মধ্যে খোঁজেন তাঁর কর্মের প্রেরণা; যেমন বৃষ্টির ফোঁটা, শরতের ঝরা পাতা বা নীল আকাশে সাদা মেঘ ইত্যাদি অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিমূর্ত হয়ছে তাঁর চিত্রকর্মে। তিনি সচেতন ভাবে প্রকৃতির উজ্জ্বলতাকে ব্যবহার করে তৈরী করেন নতুন সুর, নতুন গান আর নতুন গল্প। তাঁর আবছায়া রজনবৈচিত্রে শোনা যায় মানবতার গান।
চিত্র প্রদর্শনী উপলক্ষে ১৯ মে অপরাহ্নে দূতাবাস একটি সংবর্ধনার আয়োজন করে যেখানে উপস্থিত দর্শনার্থীদের মধ্যে ছিলেন নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত ক্রোয়েশিয়া, ভারত ও ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতবৃন্দ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ও.পি.সি.ডব্লিউ তে নেদারল্যান্ডের প্রতিনিধি, আই.ও.এম প্রতিনিধি প্রমূখ। দর্শনার্থীদের মাঝে আরও ছিলেন কূটনীতিক কোরের সদস্যবৃন্দ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আর স্থানীয় বাংলাদেশী কম্যুনিটির সদস্যবৃন্দ।
নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে উপস্থিত দর্শনার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। বাংলাদেশকে তিনি অভিহিত করেন বিভিন্ন জাতির মিলনক্ষেত্র হিসেবে এবং বাংলাদেশের স্থাপত্য, সাহিত্য, নৃত্য-গীত, নাটক আর চিত্রকলায় কিভাবে সুপ্রাচীন ঐতিহ্য প্রতিফলিত হয়েছে তা বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরেন – ” যেমনি সম্পুর্ণ পূর্ণাঙ্গ বাংলাদেশের সংস্কৃতি এর ঐতিহ্যে আর রূপে, তেমনি বৈচিত্রে অনন্য কিন্তু এক ও অনন্য”।
শিল্পী খুরশীদ সেলিম বাংলাদেশ দূতাবাসের এই প্রয়াসের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বাংলাদেশের চিত্র কলার বিবর্তন এবং আধুনিক যুগে যাত্রার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন “আমার জন্য প্রকৃতি নিজেই চিত্রকলা, অনুপ্রেরণার উৎস – এই অভিনবত্ব ক্যানভাসে তুলে ধরার মাধ্যমে আমি দর্শকদের আহ্বান করি উল্লাস আর প্রতিশ্রুতির অভিজ্ঞতায় অবগাহনের।”
বিমূর্ত শিল্পী হিসেবে পরিচিত খুরশীদ সেলিম শুধু যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বাংলাদেশী ফ্রি-ল্যান্স শিল্পীই নন, তাঁর সৃজনশীল চিত্র কর্ম ২০০৮ সালে তাঁকে নিয়ে যায় চীনের “নিষিদ্ধ শহর” তথা চীনের রাজপ্রাসাদে। ২০০৮ এর বেইজিং অলিম্পিক চিত্র প্রদর্শনীতে তিনি একাধারে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন যেখানে সারা বিশ্বের ৮০ টি দেশের ৩০০ জন শিল্পীকে দেওয়া হয় “বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শিল্পী”র খেতাব; প্রত্যেক শিল্পীকে ভূষিত করা হয় অলিম্পিক মশাল স্মারক স্বর্ণপদকে। শিল্পীর “নিষিদ্ধ শহরের রং আর অলিম্পিক” সেরা চিত্রকর্ম গুলোর অন্যতম হিসেবে মনোনীত হয়।
গত বছর ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিন কর্তৃক আয়োজিত “দূতাবাস চিত্র প্রদর্শনী”তে অংশগ্রহণের ধারাবাহিকতায় এবার বাংলাদেশ দূতাবাস একক ভাবে আয়োজন করল বাংলাদেশী শিল্পীর চিত্রপ্রদর্শনী যা চলবে ২৩ মে পর্যন্ত যেখানে প্রবেশ সকল দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত। ভবিষ্যতে নেদারল্যান্ডের নেতৃস্থানীয় গ্যালারীর সঙ্গে যৌথভাবে নেদারল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশী শিল্পীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজনের জন্য দূতাবাস প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।