• u. Nov ২১, ২০২৪

আমিওপারি ডট কম

ইতালি,ইউরোপের ভিসা,ইম্মিগ্রেসন,স্টুডেন্ট ভিসা,ইউরোপে উচ্চ শিক্ষা

জাহাজ নির্মাণ শিল্পে পোল্যান্ড-বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনা

ByLesar

May 22, 2016

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বাংলাদেশে পোলিশ বিনিয়োগ বর্তমানে খুব সীমিত আকারে থাকলেও আসছে দিনগুলোতে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে পোল্যান্ড-বাংলাদেশ একসাথে কাজ করার ব্যাপারে দারুন আশাবাদী ওয়ারশতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান। দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যুতে সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমি খুব আশার আলো দেখছি আমাদের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে, যেখানে পোলিশ বিনিয়োগের বিশাল একটা সম্ভাবনা আছে। ইউরোপের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে পোল্যান্ড যেহেতু একসময় বড় একটা শক্তি ছিলো, তাই তাদের বাজারজাত করার ঐ সক্ষমতাটা এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু তারা উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ, চায়না, কোরিয়া, জাপানের মতো দেশের সঙ্গে এখন কুলিয়ে উঠতে পারছে না“।

রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান জানান, “পোলিশ জাহাজ নির্মাণ শিল্পে যারা নিয়োজিত আছেন, তাঁদের সবাইকে আমি বোঝাতে চেষ্টা করছি, তাঁরা যদি তাঁদের প্রযুক্তি নিয়ে বাংলাদেশে যান এবং প্রয়োজনে সেখানে কিছু বিনিয়োগও করেন, তাহলে প্রস্তুতকৃত সেই জাহাজটা বাজারজাত করার ক্ষেত্রে তাদের যে এডভান্টেজ বা অভিজ্ঞতা আগে থেকেই আছে, সেটা তারা সহজেই কাজে লাগাতে পারবেন। আর যদি সেটা তারা না করেন, সেক্ষেত্রে তারা ইউরোপের মধ্যে স্ট্রাগল করেই যাবেন কীভাবে প্রোডাকশন খরচ কমানো যায় এবং সেটা করতে গিয়ে দেখা যাবে যে, বাজার যেটা তাদের ছিল বা আছে সেটাও তারা হারাতে বসেছেন”। ঢাকায় শিল্প মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সহ ব্যক্তিমালিকানায় যাঁরা জাহাজ নির্মাণ করছেন, সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের সাথেও এই ব্যাপারে যোগাযোগ করেছেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত।

পেশাদার কূটনীতিক মাহফুজুর রহমান বলেন, “শিপ বিল্ডিংয়ের সাথে বাংলাদেশে যারা জড়িত তাঁদের উদ্দেশে আমি বলবো, বিদেশী বিনিয়োগের প্রতি আপনাদের নজরটা বেশি দেওয়া উচিত। যেহেতু এটা একদিকে শ্রমঘন এবং অপরদিকে যথেষ্ট পুঁজিও এখানে বিনিয়োগ করতে হয়, তাই অনেকে ব্যাংকের সহায়তা নেন এবং পরবর্তিতে দেখা যায়, বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়া কিংবা ব্যাংকের লোন ফেরত দেওয়ার প্রশ্ন যেহেতু আছে, সেক্ষেত্রে অনেক সময় ডিফল্টার হয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। এই জায়গায় তাঁরা যদি বিদেশী বিনিয়োগের বিষয়ে একটু বেশি আগ্রহী হতেন, তাহলে বিদেশী ইনভেস্টমেন্টের সঙ্গে সঙ্গে বাইরের ম্যানেজমেন্ট এবং টেকনোলজিটাও বাংলাদেশে যেতো। একই সঙ্গে বিদেশীদের তথা পোলিশদের যে মার্কেটিং স্কিল আছে সেটাও বাংলাদেশে তাঁরা কাজে লাগাতে পারতেন”।

বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিদেশী বিনিয়োগমূখী হওয়ার আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “কেবলমাত্র দেশে জাহাজ তৈরী করে সেটা বাইরে বাজারজাত করার জন্যই নয়, তৈরীর প্রক্রিয়ার মধ্যেও বিদেশীদের সম্পৃক্ত করা আবশ্যক। আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, পোল্যান্ড আমাদেরকে গত কয়েক বছরে বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমান ঋণ দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমরা খুব একটা আগ্রহ দেখাইনি। আগ্রহ না দেখানো হয়তোবা ঠিকই ছিল, তবে একইসঙ্গে যদি আমরা পোল্যান্ডকে বলতে পারি যে, ঋণ না দিয়ে বরং বাংলাদেশে আপনারা বিনিয়োগ করুন, তাহলে হয়তো কিছু কিছু পোলিশ ইনভেস্টার বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হতে পারেন। এখানকার বিভিন্ন চেম্বারে আমি যখন যাই এবং তাঁদের সাথে কথা বলি, আমি দেখি যে, বিনিয়োগের জন্য তারা তৈরী আছেন। প্রিভিলেজ পেলে পোলিশ বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হতে পারেন বাংলাদেশে বিনিয়োগে”।

বাংলাদেশ থেকে যাঁরা বিদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, তাঁরাও চাইলে পোল্যান্ডে বিনিয়োগের চিন্তা করতে পারেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান। উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, “বড় ধরনের কিছু না করে ছোট ধরনের বিনিয়োগও যদি এখানে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা করেন, তাহলে বেশ কিছু সুবিধা এখানে পাওয়া যেতে পারে এবং সেটার জন্য এখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা বাড়তি নেগোসিয়েশনে যেতে পারবো। বাংলাদেশের ১০-১২ জন ইনভেস্টারও যদি পোল্যান্ডে বিনিয়োগ করেন, তবে সেটাও দু’দেশের সম্পর্ক জোরদার করা এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে পাজিটিভ ইমেজ তৈরীর ক্ষেত্রে একটা বড় ভিত্তি হবে। পোল্যান্ড যেহেতু দ্বিপাক্ষিক বানিজ্যে বেশ আগ্রহী ছিলো বরাবরই, গত এক বছরে এরই মধ্যে এখান থেকে ২ জন ডেপুটি মিনিস্টার বাংলাদেশ সফর করেছেন। ঢাকা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা দু’বার এসেছেন এখানে, যদিও আমাদের বানিজ্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে কেউ আসেননি পোলান্ডে এই সময়টাতে”।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী পোল্যান্ড-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বানিজ্য বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ভারসাম্যটা এখনো বাংলাদেশের অনুকুলে। রাষ্ট্রদূত জানান, “আমরা ৮৫% বা তারও বেশি এক্সপোর্ট করি পোল্যান্ডে, তাদের শেয়ার হয়তো প্রায় ১৫% হবে। এটা আসলে মেজর ফেক্টর নয়। পোল্যান্ডের শেয়ার যদি বাড়েও, আমি মনে করি এটা অবশ্যই দুই দেশেরই অর্থনৈতিক উন্নতির কারণেই সম্ভব হবে। বাংলাদেশের রপ্তানীর প্রায় ৯০% প্রোডাক্ট হচ্ছে যথারীতি তৈরী পোশাক শিল্প বা আরএমজি। বাকি ১০% হচ্ছে বিভিন্ন ট্রেডিশনাল আইটেম যেমন পাট ও পাটজাত পন্য, চামড়া ও চামড়াজাত পন্য, সিরামিক সামগ্রী এবং চা। নতুন সম্ভাবনা হিসেবে আমরা তাই গুরুত্ব দিচ্ছি বাংলাদেশ মেইড জাহাজকে। পোল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে যাচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য। খনিজ কয়লা যেতে পারে আগামীতে। বিগত দিনে পোলিশরা চেষ্টাও করেছিল বাংলাদেশে কয়লা পাঠাতে। এর বাইরে তারা ইদানিং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বাংলাদেশে রপ্তানী করতে আগ্রহ প্রকাশ করে যাচ্ছে”।

Lesar

আমিওপারি নিয়ে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত একজন সাধারণ মানুষ। যদি কোন বিশেষ প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে ফেসবুকে পাবেন এই লিঙ্কে https://www.facebook.com/lesar.hm

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version