এর আগে গ্রীক পুলিশের বিশেষ অপরাধ দমন ইউনিট এবং গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ টিম গত ৭ অক্টোবর মিজানুর রহমানের ফটো স্টুডিওর দোকানে যৌথ সাঁড়াষি অভিযান চালিয়ে তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। দালাল মিজানের কাছ থেকে এসময় ৮টি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, ২টি পাকিস্তানি পাসপোর্ট এবং ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত গ্রীক সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিপুল সংখ্যক জাল সার্টিফিকেট ও ভূয়া কাগজপত্র এবং ক্যাশ কয়েক হাজার ইউরো উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযান চলাকালীন আরো অন্ততঃ ডজনখানেক পাসপোর্ট কৌশলে দোকান থেকে সরিয়ে নেয় ফটো মিজানের লোকজন।
অবৈধ মানি লন্ডারিং এবং পাসপোর্টে স্টিকার (রেসিডেন্ট পারমিট) জালিয়াতি, কেনা-বেচা এবং ফটো-ডকুমেন্ট এদিক-সেদিক করে আন্তর্জাতিক চক্রের সাথে প্রত্যক্ষ যোগসাজশে গ্রীস থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচার করে আসছিল ফটো মিজান, এমন বহু প্রমাণাদি নথিভুক্ত করে শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয় তার একাধিক স্টে পারমিট। গ্রীক পেনাল কোড অনুসারে মিজানুর রহমান দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগও তাকে কালো তালিকাভুক্ত (ব্ল্যাক লিস্টেড) করার পাশাপাশি দ্রুত ডিপোর্টেশন নিশ্চিত করে।
ফটো মিজান বিভিন্ন সময়ে একাধিক নামে আত্মপ্রকাশ করেছিল এথেন্সে। আলফা মিজান, চাবি মিজান, স্টুডিও মিজান – সবই ছিল তার বিভিন্ন ছদ্মনাম। উল্লেখ্য, চিহ্নিত দালাল এই মিজানুর রহমানই তার সহযোগী শেখ কামরুল ইসলামকে নিয়ে ২০০৯ থেকে ২০১২ টানা সাড়ে ৩ বছর এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাসকে ঘিরে গড়ে তুলেছিল লক্ষ লক্ষ ইউরোর পাসপোর্ট বানিজ্য। ঐ সময় দায়িত্বে থাকা কাউন্সিলর বিএম জামাল হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও সহযোগিতায় লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় দূতাবাস।
২০১৩ সালের শুরুতে রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ দায়িত্ব নেয়ার পরই পাল্টে যায় দূতাবাসের চিত্র। তাঁর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে ছন্দপতন ঘটে দালাল সিন্ডিকেটে, বন্ধ হয়ে যায় পাসপোর্ট বানিজ্য। দুর্নীতিবাজ কাউন্সিলর বি এম জামাল হোসেন চেয়েছিলেন আরো কিছুদিন এথেন্সে থাকতে। কিন্তু রাষ্ট্রদূতকে ম্যানেজ করতে না পেরে ঢাকায় ফিরতে বাধ্য হন কাউন্সিলর। তিন বছরে কয়েক কোটি টাকা কামানোর ধারাবাহিকতা ক্ষুন্ন হওয়ায় খোদ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে বসেই প্রতিশোধের নেশায় মেতে উঠেন বি এম জামাল।
এথেন্সের আত্মস্বীকৃত দুই দালাল মিজানুর রহমান ও শেখ কামরুল ইসলামের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে সেগুনবাগিচা থেকেই অপারেট করতে থাকেন একের পর এক ষড়যন্ত্রের ‘গেম’। চলতি বছরের শুরুতে প্রথমে মাস্টার এডিটিংয়ের মাধ্যমে একটি হোমমেড অডিও ক্লিপ বাজারে ছেড়ে দেয় এথেন্সের দালাল সিন্ডিকেট, যার জবাব দিতে গত মে মাসে ঢাকায় যেতে হয় রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তদন্তে ঐ অডিও টেপটি বানোয়াট প্রমাণিত হবার প্রেক্ষিতে পুনরায় কর্মস্থলে যোগ দেন পূর্ণ সচিব মর্যাদার পেশাদার কূটনীতিক গোলাম মোহাম্মদ।
সর্বশেষ আইওএম দোভাষী লায়লাকে দিয়ে তথাকথিত যৌন কেলেংকারির অভিযোগ এনে আরেক তুলকালাম ঘটায় মিজান-কামরুল গং। যৌন কেলেংকারির সস্তা অভিযোগ অনুসন্ধানে ঢাকা থেকে আসে তদন্ত টিম। এথেন্সের সাধারন জনগন দালাল সিন্ডিকেটের আমলনামা তদন্ত টিমের হাতে তুলে দিলেও বিএম জামাল ও মিজান-কামরুলের স্বার্থরক্ষায় উঠেপড়ে লাগে ঢাকার বিশেষ একটি মহল। সফলতার সাথে দিনকে রাত বানিয়ে দেয়া হয় তদন্ত প্রতিবেদনে, ঢাকায় ফিরতে নির্দেশ দেয়া হয় একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদকে।
সরকারী নির্দেশ মেনে তিনি যখন ঢাকায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিক তখনই কুচক্রীদের থলের বেড়াল বেরিয়ে গেল নাটকীয়ভাবে। দালাল সিন্ডিকেটের কাছ থেকে বিশাল অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে আইওএম থেকে সম্প্রতি বহিষ্কৃত হলেন পার্টটাইম দোভাষি লায়লা এন্টিপাস। কাছাকাছি সময়ে গোয়েন্দা জালে আটকে গিয়ে গ্রেফতার হয় দালাল সর্দার মিজানুর রহমান।
সব মিলিয়ে আইওএম থেকে লায়লার অপসারন এবং গ্রীক প্রশাসন কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত ফটো মিজানের বাধ্যতামূলক ডিপোর্টেশন পাল্টে দিয়েছে ঢাকার এবং এথেন্সের কুচক্রিদের সব হিসেব নিকেশ। সত্য সমাগত এবং মিথ্যা দূরীভূত হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস এখন এথেন্সের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কমিউনিটির তরফ থেকে সরকারের কাছে জোর দাবী জানানো হয়েছে সামগ্রিক পরিস্থিতির সঠিক পুনঃতদন্তের জন্য। এক্ষেত্রে বিজ্ঞ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন গ্রীসের সর্বস্তরের বাংলাদেশিরা।
Vai Italy te ki tax niye new kono law pass hoyece?
ji