মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বছরের পর বছর রমরমা অবৈধ বানিজ্যের আখড়ায় পরিণত হওয়া সুইডেনের বাংলাদেশ দূতাবাসের আলোচিত ৪টি এপার্টমেন্টকে দ্রুত জঞ্জালমুক্ত করতে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শতভাগ বাংলাদেশ সরকারের অর্থে পরিচালিত ঐ চারটি বাসার অবৈধ বানিজ্যের নিয়ন্ত্রক ফারুক, শাহিদা, কামাল ও মজিবুরকে চলতি মাসের মধ্যেই যার যার বাসা থেকে অবৈধ লোকজন উঠিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত গোলাম সারওয়ার।
নির্দেশ অমান্য করলে বাংলাদেশে ফেরত যেতে হবে এইমর্মে সতর্কও করে দেয়া হয়েছে অপকর্মের সাথে সংশ্লিষ্টদের। ‘‘সুইডেনে বাংলাদেশ দূতাবাসের ৪টি বাসায় জমজমাট অবৈধ বানিজ্য, যে কোন মুহূর্তে অঘটন’’ শীর্ষক একটি সংবাদ সম্প্রতি প্রকাশিত হবার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয় ১০ হাজার বাংলাদেশি অধ্যুষিত গোটা সুইডেনে। দূতাবাসের সরকারী বাসাবাড়ির স্ক্যান্ডাল নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় দেশে-বিদেশে। তারই প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত গোলাম সারওয়ারের সক্রিয় ভূমিকায় অবশেষে কলংকমুক্ত হবার পথ প্রশস্ত হচ্ছে এখন সুইডেনে।
উল্লেখ্য, দূতাবাসের একাউন্টটেন্ট ফারুক হোসেন, এডমিনিস্ট্রেটিভ এসিস্টেন্ট শাহিদা আক্তার, রাষ্ট্রদূতের পিও কামাল হোসেন এবং কনস্যুলার এসিস্টেন্ট মজিবুর রহমান নিজস্ব পৃথক পৃথক সরকারী বাসায় সুইডিশ আইন অমান্য করে একাধিক ফ্যামিলি ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যাচেলার লোকজন দিয়ে ভরে জমিয়ে ওঠান অবৈধ কারবার। ৩ থেকে ৪ রুমের বিশাল বিশাল প্রতিটি এপার্টমেন্টের পেছনে যাবতীয় বিলসহ প্রতিমাসে বাংলাদেশ সরকারের ১ হাজার থেকে ১৫শ’ ইউএস ডলার করে গুণতে হলেও ফারুক শাহিদা কামাল ও মজিবুররা সমপরিমান অর্থ এক্সট্রা কামাতেন যার যার এই বানিজ্যকেন্দ্রগুলো থেকে।
সাবলেট ব্যাচেলরসহ অবৈধভাবে বসবাস করা লোকজনের কাছ থেকে মাসান্তে ভাড়া আদায় সহ নানান বিদঘুটে বিষয়াদি নিয়ে দিনরাত ঝগড়াঝাটি চলায় তিক্ত-বিরক্ত আশপাশের সুইডিশ অধিবাসীরা একাধিকবার অভিযোগ করেন স্থানীয় পৌর প্রশাসনের কাছে। তাদের কাছ থেকে অপকর্মের খবর পৌঁছে যায় খোদ সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ শাখায়। সাবেক রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকারের স্ত্রী সাদিয়া আযম গতবছর সরকারী বাসায় গৃহকর্মী তৈয়বাকে নিয়মিত টর্চার করার জেরে সুইডেন থেকে বহিষ্কৃত হবার পর তখন থেকেই সুইডিশ গোয়েন্দা বিভাগেরও নজরদারিতে ছিল দূতাবাসের বাসাবাড়ি সমূহে আসাযাওয়া করা লোকজনের গতিবিধি।
ঠিক এমনি একটি সময় অবৈধ বানিজ্য কেলেংকারির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হন পেশাদার কূটনীতিক রাষ্ট্রদূত গোলাম সারওয়ার। অপকর্মের হোতা ফারুক শাহিদা কামাল ও মজিবুরের ওপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কলংকিত ঐ ৪টি এপার্টমেন্টে মোটা অংকের অর্থে অবৈধভাবে বসবাসকারী লোকজন, যারা বাসা ছাড়ার স্বল্পসময়ের নোটিশ পেয়ে এখন অনেকটাই দিশেহারা। শুধু বাংলাদেশিই নন, ভিনদেশিদেরও রীতিমতো ‘গিনিপিগ’ বানিয়ে রাখা হতো দূতাবাস কর্তৃক ভাড়া নেয়া এই সরকারী এপার্টমেন্টগুলোতে।
অবস্থা এতোটাই নেক্কারজনক হয়ে উঠে যে, যে কোন মুহূর্তে তা সুইডিশ মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচারিত হবারও সময় ঘনিয়ে আসছিল। বাংলা মিডিয়ার আগাম সংবাদে তাই কিছুটা হলেও কুল রক্ষা হয় এ যাত্রায়। এদিকে দেরিতে হলেও দূতাবাসকে কলংকমুক্ত করতে উদ্যোগী হবার জন্য রাষ্ট্রদূত গোলাম সারওয়ারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন স্টকহল্মের শীর্ষ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ। ঘটনার পুনরাবৃত্তি ভবিষ্যতে আর ঘটবে না, এমনটাই আশাবাদ তাঁদের।