মাদক, স্বর্ণ চোরাচালান আর মুদ্রা পাচারের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। দুর্বল গোয়েন্দা নজরদারীর কারণে ডগ স্কোয়াডই চোরাচালান বন্ধের প্রধান উপায় বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ছয়মাসে বিমান বন্দর পুলিশ ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রায় ৪৫ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য আটক করেছে। এর মধ্যে স্বর্ণের বার, হীরা ও বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও রয়েছে কোকেনের মত মাদক। বিমান বন্দরের একাধিক সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর।
র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান কর্নেল জিয়াউল আহসানের মতে, শাহজালালে যাত্রীদের ব্যাগেজ ডগস্কোয়াড দিয়ে সুইপিং(পরীক্ষা) করালে চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ও মাদক দ্রব্য চিহ্নিত করার জন্য ডগস্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করানো হয়। আর যেসব দেশের বিমান বন্দরে ডগ স্কোয়াড আছে সেসব দেশের বিমান বন্দর চোরাচালানীরা ব্যবহার করেন না বলে তিনি জানান।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে সর্বশেষ ৬ জুলাই দুপুরে কুয়েত থেকে আসা বিজি-০৪৪ ফ্লাইটের টয়লেট থেকে ২৫ কেজি ৩১০ গ্রাম ওজনের ২১৭ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার মূল্য প্রায় ৯ কোটি টাকা।এরপর ১১ জুন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের লা ভিঞ্চি হোটেল থেকে তিন কেজির বেশী কোকেনসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গোয়েন্দার হাতে ধরা পড়েন পেরুর নাগরিক পাবলো। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দীতে চোরাচালান নেপথ্যের কাহিনী বর্ণনা দেন।
জবানবন্দীতে তিনি বলেন, পেরুর রাজধানী লিমার একটি ডিস্কোতে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করতেন। সেখানেই এক নারী তাকে মাদক পাচারের প্রস্তাব দেন। রাজি হলে তার ব্যাগে বিশেষভাবে পুড়ে দেওয়া হয় মাদক। সেই ব্যাগ নিয়ে তিনি প্রথমে পাশের দেশ ইকুয়েডর যান। সেখান থেকে কোপা এয়ারলাইন্সের বিমানে করে যান পানামায়। পানামা থেকে একই সংস্থার বিমানে চড়ে যান ব্রাজিল। এরপর সেখান থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সে করে দুবাইয়ে, সেখান থেকে একই এয়ারলাইন্সে ঢাকায় আসেন তিনি।
পাবলো তার জবানবন্দিতে আরো জানান, লিমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাদকদ্রব্য শনাক্ত করতে ব্যবহূত হয় কুকুর, আর কুকুরগুলো খুবই দক্ষ।তাই ওই বিমানবন্দর এড়াতে তিনি ইকুয়েডর বিমান থেকে যাত্রা শুরু করেন।তার ব্যাগটি ইকুয়েডর থেকেই ঢাকার জন্য বুকিং করা হয়। ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া ছিল তার কাজ।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহম্মাদ ইকবাল বলেন,বাংলাদেশের জন্য নয়, ইউরোপে পাচারের জন্যই এই মাদক বাংলাদেশে আনা হয়। কারণ এ দেশের বিমান বন্দর চোরাকারবারীদের জন্য নিরাপদ রুট।তিনি আরো বলেন, এ দেশের প্রচুর মানুষ লন্ডনে থাকেন, তারা প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন। এ ছাড়া বিশ্বে মাদক প্রস্তুত ও পাচারকারী দেশ হিসেবে সন্দেহের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। তাই বহুজাতিক মাদক মাফিয়া চক্র ঢাকাকে মাদক পাচারের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।
ওই ঘটনার কয়েক দিনের ব্যবধানে অর্থাৎ ১৯ জুন আন্তর্জাতিক কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান ‘ডিএইচএল’র রাজধানীর রামপুরা শাখায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে এককেজি তিনশ’ গ্রাম হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের একটি চালান আটক করা হয়।
জানা যায়, ৪৩টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আন্ডারওয়্যারের প্যাকেটে বিশেষ কায়দায় মোড়ানো অবস্থায় এসব হেরোইন চীনে পাচারের জন্য আনা হয়। এ ঘটনায় উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাসা থেকে গডসন বামালো নামে এক নাইজেরিয়ার নাগরিককে আটক করা হয়। তার কাছে পাওয়া যায় হেরোইন প্যাকেটজাতের জন্য ব্যবহূত শিল পাটা ও ফেভিকল আঁঠা।শুধু মাদক নয় মুদ্রা পাচারেও নিরাপদ রুট শাহজালাল। গত ২২ জুন এমিরেটস এয়ারওয়েজের বিমানে আসা এক পাকিস্থানী নাগরিককে ৮৯ লাখ ভারতীয় রুপীসহ আটক করে বিমান বন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বিশেষ কায়দায় পাকিস্তানী ওই নাগরিক তার ব্যাগে মুদ্রাগুলো নিয়ে আসেন।
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতে “এখানে ক্লিক করুণ” তুলে ধরুন নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। ]] আর আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে রয়েছে অনেক মজার মজার সব ভিডিও সহ আরো অনেক মজার মজার টিপস তাই এগুলো থেকে বঞ্চিত হতে না চাইলে এক্ষনি আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে লাইক দিয়ে আসুন। আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে যেতে এখানে ক্লিক করুন।