প্রিয় আমিওপারির সম্মানিত পাঠক বৃন্দ আশাকরি মহান সৃষ্টি কর্তার অশেষ রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন।যাই হোক বরাবরের মতো আজকে আমরা ইতালিতে বসবাসরত সকল নারীদের হক ও অধিকার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। কেননা সমগ্র ইতালি জুড়ে বর্তমানে ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসি পরিবারবর্গ নিয়ে বসবাস করছেন। তার মধ্যে অধিকাংশ নারীরাই ভাষাগত সমস্যা ও সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে নির্যাতিত হওয়া এবং সর্বোপরি তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর তাই আমিওপারি টিম ইতালির নাম করা বড় বড় নারী নির্যাতন কেন্দ্র গুলোর সাথে মিলিত হয়ে একত্রে কাজ করার মাধ্যমে আপনাদের কাছে ইতালির নারী নির্যাতন সংক্রান্ত আইন কানুন ও বিভিন্ন নিয়মনীতি গুলো বাংলায় তুলে ধরার চেষ্টা করবে, এবং কিভাবে ও কোথায় গিয়ে আপনি আপনার উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে পাড়বেন? সেই সকল দিক নির্দেশনা, নারী নির্যাতন কেন্দ্র গুলোর ঠিকানা সহ ইত্যাদি বিষয় গুলো খুব সুন্দর করে তুলে ধরা হবে। যার মাধ্যমে আপনারা সকলেই ইতালিতে আপনার স্বামী, পরিবার অথবা পাড়াপ্রতিবেশী দ্বারা নির্যাতিত হলে, আমিওপারির মাধ্যমে নিজে নিজেই এই ধরনের অন্যায়ের বীরুধে প্রতিবাদ করতে পারবেন, এবং আপনার হক ও অধিকার আদায় করে নিতে পারবেন।
তবে হ্যাঁ আজকে আমরা যে বিষয় নিয়ে লিখছি? এটা ধারাবাহিক ভাবে কয়েকটি পর্বে বিস্তারিত সকল বিষয় গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবো। কাজেই আপনাদের এই লেখার সব গুলো পর্ব সময় দিয়ে এবং মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। তাহলেই আপনি ইতালিতে নির্যাতিত হওয়া থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন এবং অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে ও শিখতে পারবেন। যা ইতালিতে আপনার উন্নত জীবন ও অধিকার রক্ষায় ব্যাপক ভুমিকা পালন করবে।
তাহলে খুব ভালো করে নিন্মের বিষয় গুলো পড়ুনঃ
I DIRITTI DI CUI LE DONNE POSSONO AVVALERSI”
(7 Maggio 2013)
“ইতালিতে নারীদের অধিকার ও হক”
(৭ মে ২০১৩)
একটি অনুকূল নিয়ন্ত্রণ কাঠামো:
গত ৩ বছরে ইতালিতে সহিংসতা বা নারী নির্যাতন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা গুলোর কাছে অনেক ধরণের ঘটনা ফুটে উঠেছে। তার পরিপেক্ষিতে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের সদস্য বৃন্দ পারিবারিক সহিংসতা বা নারী নির্যাতন এর উপর একটি আইন উপস্থাপন করেন। যেটি ২০১১ সালের মে মাসের ১১ তারিখে “ইস্তানবুলে” স্বাক্ষরিত হয়।যেটি ইতালিতে তার দুই বছর পর ইতালিয়ান আইনের ৭৭ ধারায় ২৭ জুলাই ২০১৩ তে অনুমোদন পায়।
তবে এই সময়ের মধ্যে ইতালির নগরী Ginevra তে ২৫ জুন ২০১২ তে নারী নির্যাতনের উপর কাজ করা জাতিসংঘের বিশেষ দূত এর একটি গ্রুপ নারী নির্যাতন এর কারন ও ফলাফল নিয়ে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন। এবং জাতিসংঘের বিশেষ দূত এর মধ্যে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দক্ষিণ আফ্রিকার অধ্যাপিকা এবং মহিলা উকিল Rashida Manjoo ১৫ থেকে ২৬ জানুয়ারি ২০১২ ইতালি প্রদর্শন করেন এবং ইতালিতে নারী নির্যাতন এর উপর স্থানীও নারী নির্যাতন কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন তথ্য ও প্রমান সংগ্রহ করেন।এবং এই কয়দিনে তার কাছে বিভিন্ন তথ্য ফুটে উঠে। এর মধ্যে বিশেষ তথ্য গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, তার এই অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে, যে ইতালিতে প্রতি তিনদিন অন্তর অন্তর একটি নারী খুন হচ্ছে তার স্বামী অথবা এক্স ভালোবাসার মানুষ দ্বারা।
এবং এই অনুসন্ধানে নারী নির্যাতন নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্টার এর বিশেষ কিছু রিপোর্ট এর উপর ভিত্তি করে ইতালিয়ান সরকার ও সংসদ জ্ঞাপন ইতালিয়ান নারী নির্যাতন আইন আন্তর্জাতিক আইনের সাথে এক মত হয়ে চুক্তিবদ্ধ হন নারীদের অধিকার আদায়ে।
এবং জাতিসংঘের সেই বিশেষ দূত দক্ষিণ আফ্রিকার অধ্যাপিকা এবং মহিলা উকিল Rashida Manjoo-র এই অনুসন্ধানের ১ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ইতালিতে নতুন সরকার ও সংসদ পুনর্গঠিত হয়।এবং নতুন সরকার ও সংসদ এসে নারী নির্যাতন নিয়ে আরও ব্যাপক ভাবে কিছু কার্যক্রম শুরু করে এবং সরকারী ভাবে ১৬ই মার্চ ২০১৩ তে ঘোষণা করেন “ যে আজ থেকে ইতালিতে সকল ধরণের “ছদ্মবেশে প্রেমে” প্রতারিত নারী ও নারী নির্যাতন নিয়ে ইতালিয়ান সরকার, রাজনীতিবিদ ও সংসদ!! ইত্যাদি এর প্রতিবাদে এগিয়ে আসবে” এই ঘোষণাটি করার কিছু দিনের মধ্যে ইতালির নগরী ভেনিস কমুনের নারী নির্যাতন সংস্থা- এই ডাকে সাড়া দেন এবং নারীদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।এবং নির্যাতিত নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে ও বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করার জন্যে ভেনিস কমুনি থেকে সেই সরকারের দায়িত্ববান মন্ত্রিবর্গের কাছে আর্থিক সাহায্য সংক্রান্ত, নির্যাতিত নারীদের থাকার ব্যবস্থা করা, কাজের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি বিষয় উপস্থাপন করেন এবং সেই সুবাদে নির্যাতিত নারীদের সার্বিক সাহায্য সহযোগীতা ও বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সেই ২০১৩ সালেই নারী নির্যাতনের উপর আইনের ধারা ৯৩ তে প্রতিস্থাপন করা হয়। এবং ভেনিস কমুনের সাথে সাথে ২০১৩-এর এপ্রিল মাসে ইতালির Veneto অঞ্চলের কমুনিও এগিয়ে আসেন।এবং এরপর থেকে ইতালির বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠে নারী নির্যাতন কেন্দ্র। আমরা নিন্মে জানবো ইতালিতে গড়ে উঠা এসকল নারী নির্যাতন কেন্দ্রগুলো কিভাবে আপনাকে সাহায্য করবে? এবং নারি নির্যাতন সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়।
A cura della dr.a Patrizia Marcuzzo
তবে এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায়!! যে, নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে নারীরা কি কি ধরণের অধিকার বা অগ্রাধিকার পেতে পারে এসকল নির্যাতন কেন্দ্রগুলো থেকে?
উত্তরঃ নির্যাতিত নারীরা একজন সাধারণ নারীদের মতো সকল ধরণের অধিকার তাদের রয়েছে এবং এটা সব ধরণের নারীদের ক্ষেত্রেই সমান।
ক- যেমন নির্যাতিত সকল নারীর আর্থিক সাহায্য সহযোগীটা নারী নির্যাতন কেন্দ্র থেকে সমান ভাবে করে দেয়া।
খ- নির্যাতিত সকল নারীর আইনগত বিষয় গুলো নারী নির্যাতন কেন্দ্র থেকে যথাযথ ভাবে পর্যালোচনা করা।
গ- এবং সর্বোপরি নির্যাতিত সকল নারীর কাজের বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়াও নারী নির্যাতন কেন্দ্র থেকে যথাযথ ভাবে পর্যালোচনা করা।
তবে একটি বিষয় বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে যে, নির্যাতিত নারীদের আইনি লড়াই বা প্রোটোকল বিষয় গুলো অভিজ্ঞ উকিল বা নারী নির্যাতন কেন্দ্রের মাধ্যমেই পরিচালনা করাতে হবে। যাতে করে সবাই তার ন্যায্য হক পেতে পারে।কারন একটি সুফল প্রোটোকল বা আইনি লড়াই একটি নির্যাতিত নারীর প্রকৃত হক আদায়ে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে।
A cura dell’avv. Chiara Santi
“LA VIOLENZA DOMESTICA”
(24 Settembre 2013)
“পারিবারিক নারী নির্যাতন”
(২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩)
সাধারণত একজন নারী যে সকল নির্যাতন এর শিকার হয় বা সহ্য করে তার মধ্যে অনেক ধরণের নির্যাতন লক্ষ্য করা যায়। যেমন হতে পারে পারিবারিক বা স্বামী দ্বারা। তবে সাধারণ যেগুলো বেশি লক্ষ্য করা যায় তার মদ্ধে রয়েছে ( শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, নৈতিক নির্যাতন সহ যৌন নির্যাতন উল্লেখ যোগ্য) এবং অনেক সময় নারীদের সাথে সাথে তার সন্তান্দের উপর নানা রকম নির্যাতন ও লক্ষ্য করা যায়।
তবে পারিবারিক নারী নির্যাতন বা violenza domestica সম্পর্কে ইউরোপিয়ান কাউন্সিল এর ৭৭/২০১৩ তম আইনে বলা হয়েছে যে, তাদের মতে পারিবারিক নারী নির্যাতন এর মধ্যে রয়েছে শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন এবং আর্থনৈতিক নির্যাতন যা একজন নারীর সাথে ঘটে থাকে তার স্বামীর পরিবারের লোক দ্বারা বা পরিবারের মধ্যে যাদের সাথে সে বসবাস করে তাদের দ্বারা।এবং এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় পরিবারের ইচ্ছার উপর একজন নারীকে বিয়ের মাধ্যমে সপে দেওয়া হয় কোন একটি পরিবারের কাছে।
ইতালির আর একটি আইনের ধারা ১৫৪/২০০১ এ বলা হয়েছেঃ পারিবারিক নারী নির্যাতন দেওয়ানি ও ফৌজদারি এই দুই ধরণের আইনের মদ্ধেই পরে।এবং এই ক্ষেত্রে নির্যাতিত নারীকে নির্যাতনের বিষয়টি প্রমান করাতে পারলেই তার পক্ষ হয়ে তার স্বামী বা তার উপর নির্যাতন কারীদের উপর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।আবার 282 bis c.p.p.* (nota 1) এই আর্টিকেলে উল্লেখ রয়েছে যে পরিবার থেকে দূরে থাকা এবং 282 bis c.c. তম আর্টিকেলে বলা হয়েছে যে নির্যাতিত নারিকে পরিবার থেকে দ্রুত দূরে সরিয়ে নেওয়া তার জীবন,স্বাস্থ্য এবং স্বাধীনতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া সহ এমনকি তার স্বামীর কাছ থেকে বা পরিবারের কাছ থেকে জরিমানা স্বরূপ চেক দ্বারা ভরণ পোষণ এর ব্যবস্থা করা হবে ইত্যাদি উল্লেখ রয়েছে এই আর্টিকেলটিতে।
আবার ১১/০৫/২০১১ সালে ইউরোপিয়ান কাউন্সিল দ্বারা “ইস্তানবুলে” নারী নির্যাতন এর উপর যে আইনটি স্বাক্ষরিত হয়েছে তার 384 bis c.p.p. তম আর্টিকেলে বলা হয়েছে যদি কোন নারীর উপর পারিবারিক নির্যাতন করা হয় এবং সেই নারীর তার পরিবারের সাথে বসবাস করায় জীবনের ঝুঁকি থাকে? সেই ক্ষেত্রে নির্যাতিত নারীকে পুলিশি সহযোগীটায় দ্রুত সেই পরিবার থেকে আলাদা করে ফেলা হবে এবং তার হক আদায়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।এবং ইউরোপিয়ান কাউন্সিল দ্বারা সর্বশেষ আইন এর n. 172/2012 তম ধারা তে শিশু নির্যাতন বা শিশুদের উপর যৌন হয়রানী নিয়ে কিছু আইন থাকলেও ইতালিতে সেই আইনটি আরও কঠোর ভাবে তৈরি করা হয় যেমন 572 c.p.p তম আর্টিকেলে স্পট করে বলা হয়েছে যে, পরিবার দ্বারা শিশু নির্যাতন বা শিশুদের উপর যৌন হয়রানী সংক্রান্ত বিষয়ে আপরাধীকে সরাসরি গ্রেপ্তার করে হাজতে ভরা হবে সহ ইত্যাদি কিছু বিষয় রয়েছে যেটি তম n. 119/2013 আইনের ধারায় রয়েছে।
A cura dell’avv. Annamaria Marin
আজ এ পর্যন্তই। আমাদের পরবর্তী পর্বে আরও বিস্তারিত থাকবে যেখানে সম্পূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা দেওয়া হবে। সেই পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন আমাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে। আর হ্যাঁ এই লিখাটি বেশি বেশি করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন যাতে করে সকল নির্যাতিত নারীরা আপনার মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে।আর যেকোনো বিষয়ে আমিওপারি টিম এর সাথে যোগাযোগ করে আপনার মনের প্রশ্নের উত্তর ও সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
আমাদের সাথে যোগাযোগের বিস্তারিতঃ স্ক্যাইপ- amiopari টেলঃ +৩৯ ০৬২৪৪০৫২১৭ মোবাইল +৩৯ ৩৩৮১৪০৮৯১৭ (WIND)মোবাইলঃ +৩৯ ৩২০০৪১২৫৪০ (WIND) মোবাইলঃ +৩৯ ৩৪২৭৯৭৩২৮০ (WIND) ইমেইলঃ info@amiopari.com
ঠিকানাঃ Via Delle Albizzie-27, 00172 Rome (Centocelle), Italy.
আর যারা আপনাদের ফেসবুকে আমাদের সাইটের প্রতিটি লেখা পেতে চান তারা এখানে ক্লিক করে আমাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে আমিওপারিতে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা আপনার ফেসবুক নিউজ ফিডে পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।