মাঈনুল ইসলাম নাসিম : গ্রীসের প্রবাসী জনতার রক্তচোষা দালাল সিন্ডিকেট তথা প্রতারক লুটেরাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হেরেই গেলেন রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ। এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাসকে দালালমুক্ত করার পুরষ্কার(!)স্বরূপ এখন ঢাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা, পূর্ণ সচিব পদমর্যাদার এই ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাটকে।
পাসপোর্ট দালালদের ‘ভাড়াটে ক্রীড়ানক’ হিসেবে সফলভাবে ব্যবহৃত আইওএম দোভাষী জনৈক নারীর মিথ্যা অভিযোগ আমলে নিয়ে রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদকে ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দিয়েছে সেগুনবাগিচাস্থ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। ১৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ঢাকা থেকে এই প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) আল্লামা সিদ্দিকী। মুঠোফোনে তিনি জানান, “এ বিষয়ে তেমন বিস্তারিত আমার জানা নেই তবে এটুকু জানি যে, ওনাকে রিকল করা হয়েছে ঢাকায়”।
ডিজি এডমিনের সাথে কথা বলার পরপরই শুক্রবার রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের সাথেও কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তুর্কি সীমান্তবর্তী ‘ইক্সান্থি’ এরিয়াতে গ্রীক বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে আটক বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশিদের দেখভাল করতে সপ্তাহান্তে সেখানে অবস্থান করছেন তিনি। বরাবরের মতো আবারো এই প্রতিবেককে তিনি বললেন, “আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। এখনো ঢাকা থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি তবে আজ থেকে পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম যে, আসলেই আমি ষড়যন্ত্রের শিকার”।
রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদকে ঢাকায় ফেরার নির্দেশে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা বেশ ক’জন সিনিয়র কূটনীতিক। শুক্রবারই এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তাঁদের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে কেউ কেউ বিশেষভাবে হতাশও হয়েছেন। সঙ্গত কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন রাষ্ট্রদূত বলেন, “গোলাম মোহাম্মদ সাহেবের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত মূলতঃ দু’মাস আগেই ঢাকায় নির্ধারিত হয়েছিল”।
সিদ্ধান্ত যদি দু’মাস আগেই হবে, সেক্ষেত্রে আগস্টের মাঝামাঝি ৩ সদস্যের ‘তথাকথিত’ তদন্ত টিমের এথেন্স সফর কি তাহলে ‘জাস্ট আইওয়াশ’ ? রাষ্ট্রের লাখ লাখ টাকা অপচয় করে তদন্তের নামে এথেন্সে তাদের প্রমোদভ্রমণের মানে কি ? – এমন প্রশ্নের জবাবে ঐ কূটনীতিকের ৩ শব্দের জবাব, “বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই”। এদিকে রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে সরকারের নেতিবাচক সিদ্ধান্তকে চরম নেক্কারজনক আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এথেন্সের শীর্ষ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ।
ক্ষোভের সাথে তাঁরা বলেন, “সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে অসম্ভব বলে কিছু নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলছেন, তাঁকে ছাড়া সবাইকেই নাকি কেনা যায়, সেদেশের রাজনীতি ও প্রশাসনযন্ত্রে জবাবদিহিতার অভাবজণিত দেউলিয়াত্ব ও সুশাসনের আকালের ‘বলি’ হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আমাদের রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ। মীরজাফর-মোশতাক গং যুগে যুগে বাংলার মাটিকে কলংকিত করলেও ষড়যন্ত্রে সফল হয়েছিল ঠিকই। এথেন্সের দালালচক্র তাদেরই বংশধর”।
গ্রীসের কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ দৃঢ়তার সাথে বলেন, ‘‘দূতাবাসকে দুর্নীতিমুক্ত ও কলংকমুক্ত করে সফল রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ গ্রীসের বাংলাদেশ কমিউনিটির গৌরবজ্জ্বল অধ্যায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রইলেন, তবে কলংকিত হলো আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। প্রতারক দালাল সিন্ডিকেটের কাছে বাংলাদেশ সরকারের এ এক নৈতিক পরাজয়। গ্রীসের দালাল সিন্ডিকেটকে পুরষ্কৃত করার মধ্য দিয়ে গ্লোবাল ঠকবাজি ও প্রতারণাকে প্রমোট করার দায়ভার অবশ্যই মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারকে বহন করতে হবে”।