২১ শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, আমাদের গর্ব নিঃসন্দেহে। সারা পৃথিবীর মানুষ গর্ভবোধ করছে কারন পৃথিবীতে প্রায় ৬০০০ ভাষার অস্তিত্তে ৩০০০ ভাষার বেশি বিলুপ্ত আজ, তবে ভাষার জন্য পৃথিবীতে কোন দেশ/জাতি বাংলা ভাষার জন্য এত প্রান ঝড়ায়নি, যদিও ১৯১৪ শনে ১ম বিশ্ব যুদ্ধ,১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এমন কি বর্বরতার চেঙ্গিশ খান, কিংবা হালাকু খান খানের সময়েও নয়। তাই ৪৫০০ বছরের ইতিহাসে বাংলা মায়ের ভাষা আজ ধন্য। তাই কি জন্য এবং কাদের জন্য এই বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষায় প্রকাশ তাদের স্মরণে আমার আজকের এই অনুভূতির লেখার কিছুক্ষণ।
১৯৭১ সালে প্রাদেশিক মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে মেয়র নওয়াব আলী সর্ব প্রথমে ভাষাপ্রশ্নে বলেছিলেন- মাতৃস্তন্যের ন্যায় বাংলাভাষা প্রিয় আমাদের কাছে। তাই মাতৃস্তন্যের এই ভাষা রক্ষায় বাংলা ভাষা কে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব ব্রিটিশ সরকারের কাছে ১৯২১ সালে প্রস্তাব করেন, কালের বিবর্তনে ১৯৪৭ সালে ১৪ই আগস্ট ইন্ডিয়া থেকে পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পর আমরা একই দেশের পূর্ব পাকিস্থান নামে ছিলাম অন্যটি পশ্চিম পাকিস্তান। মাত্র তিন মাসের মাথায় ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে করা শিক্ষা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষার আন্দোলন শুরু হয়, সে সম্মেলনে পাকিস্থানের রাস্ত্রভাষা উর্দুকে প্রস্তাব গৃহীত হয়।
আর তখনি শুরু হয় তীব্র ক্ষোভ ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রভাষা উর্দুর বিরুদ্ধে, এবং ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী পূর্ব বাংলার প্রতিনিধি ধিরেন্দ্র নাথ দত্ত পূর্ব বাংলার প্রতিনিধি হয়ে একটি সংগঠনী প্রস্তাব আনেন যে, উর্দু এবং ইংরেজির সাথে বাংলাকেও গনপরিষদের সাথে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হোক।
১৯৪৮ সালে ১১ই মার্চ সংগ্রাম পরিষদ ধর্মঘট ডাক দিলে খাজা নাজিমউদ্দিন প্রচণ্ড বিক্ষোভের মুখে ছাত্রদের সাত দফাচুক্তি নামী সাক্ষর করেন। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ কায়ছে আজম জিন্নাহ কে সংবর্ধনা দেওয়া হয়, যখন তিনি উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করায় তখন উপস্থিত অনেকেই না-না বলেন এবং প্রতিবাদ শুরু হয়।
২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহ আবারো বলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হবে উর্দু, অন্য কোন ভাষা নয়। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারী খাজা নজিম উদ্দিন পল্টন ময়দানে উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা আবারো ঘোষনা দেন।তাই ৪ ফেব্রুয়ারী ঢাকাতে ২১ ফেব্রুয়ারী সারা প্রদেশব্যাপী ধর্মঘট শুরু হয়। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা জারি করে এবং ৪ জনের বেশি একত্রে সমাবেশ করা যাবেনা। শুরু হয় প্রতিবাদ, মিছিল আর এই মিছিলেই পুলিশ বেপোরোয়া গুলি চালায়, নিহত হয় রফিক,সালাম,জব্বার, বরকত সহ অনেকেই।
১৯৭১ সালে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ ৯ মাস যুদ্ধের ফলে পূর্ব পাকিস্থান নামের দেশ আজ বাংলাদেশ। বাংলা ভাষায় কথা বলে, যে ভাষায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় পূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন জাতিসংঘের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ভাষায় প্রথম নোবেল পুরুস্কার পান।
তাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার পিছনে যাদের অবদান রয়েছে তাদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিব। ২১শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার প্রস্তাব করে ১৯৯৮ সালে ২৯ মার্চ তৎকালীন জাতীসংঘের সেক্রেটারি কফি খান এর কাছে একটি চিঠি পাঠান রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুসসালাম কানাডার প্রবাসী বাংলাদেশী। মাদার ল্যাংগুইয়েজ অফ ডি ওয়ার্ড নামের এই সংগঠনে সাফার করে- ফিলিপিনি,ইংল্যান্ড, মালয়, জার্মান, ভারত (হিন্দি) এবং বাংলাভাষা মা। সাত দেশ সাত ভাষায় সাধারন পরিষদে অ্যাপ্লাই করেছিল ৩০ লক্ষ্য মানুষের প্রান হানি বাংলায় ও মহিলা মা বোনের ইজ্জতের ইতিহাস। সহযোগিতা করেছিলেন উদ্যোক্তা হিসাবে ভাষা বিভাগের ইউনেস্কোর সদর দপ্তর আন্না মারিয়া। ১৯৯৯ এর ৩ মার্চ রফিকুল ইসলাম কে চিঠি লিখেন যার বাংলা ব্যক্তিগত ভাবে ওত্থাপনের কোন সুযোগ নাই। ইউনেস্কো পরিচালনায় কোন সদস্য রাষ্ট্রের সহযোগিতা নিতে হবে।
২৩ জুন ১৯৯৯ রফিকুল শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠন, উত্তরের অপেক্ষায়!! সময় ছিল ১০ আগস্ট ১৯৯৯ কিন্তু ভাগ্যের বিরম্বনা আমলাতন্ত্রের লাল ফিতায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার ফাইল আটকা পরলেও তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশে সব নিয়ম কানুন ওপেক্ষা করে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ সালে মাত্র ১৭ লাইনের একটি প্রস্তাব পাঠিয়ে দেন।
১৮০ টি দেশের সমর্থনে ইওনেস্কো কে বুঝাতে সমর্থন হয়েছিলো বিধায় প্যারিস ইওনেস্কোর ৩০ তম অধিবেশনে ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে সর্বসম্মত ভাবে ঘোষিত হয় বাংলা ভাষাকে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ শে ফেব্রুয়ারী কোটি কোটি বাঙ্গালীর আনন্দের শিহরন জেগে উঠে সেই দিনে। মোদের গর্ব মোদের আশা আ-মরি-বাংলাভাষা।