আমরা যারা ইউরোপে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি তাদের অনেকেই নিজ নিজ সন্তানদের নিয়ে স্কুলে যাওয়া থেকে শুরু করে আরো অনেক কাজ করে থাকি। এখানে অনেক অভিভাবকদের দেখা যায় তারা এমন কিছু কাজ করে থাকেন যাতে করে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে ইউরোপিয়ান দের কাছে। এবং সাবচাইতে বড় কথা এর বেশি প্রভাব পড়ছে আপনার সন্তানদের উপর। কেননা ওরা কিন্তু আপনাকেই লক্ষ্য করে। কাজেই আমরা কিন্তু চাইলে কিছু কিছু জিনিস লক্ষ্য করে পরিত্যাগ করলে ইউরোপিয়ানদের কাছে দেশের সুনাম ধরে রাখতে পারি এবং আমাদের সন্তানেরাও আমাদের কাছ থেকে ভালো কিছু শিখে আমাদের সন্মান রক্ষা করতে পারে। কাজেই আপনাদের অবগতির জন্য নিচে কিছু জিনিস তুলে ধরা হোল, যা আমরা চাইলেই পারি।
অনুমতিঃ আমাদের বাংলাদেশী ভাবীরা সন্তানকে স্কুলে আনতে বা রাখাতে যাওয়ার সময় ভীরের মধ্যে অনেক সময় অন্য অভিভাবকদের ঠ্যালা দিয়ে বা ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করেন, যা কোনো ভাবেই ঠিক না। কাউকে অতিক্রম করতে হলে অবশ্যই সামনে যে থাকবেন তার কাছে ‘পেরমেচ্ছ’ বা অনুমতি চাইতে হবে।
মোবাইল ফোনঃ স্কুল চত্তরে দারিয়ে, বাচ্চা কে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বা বাসায় আনার সময় কোনো ভাবেই মোবাইল ফোনে কথা বলা যাবে না। খুব জরুরী হলে যতোটা সম্ভব সংক্ষেপে এবং নিচু গলায় কথা শেষ করতে হবে।
মিটিং- স্কুলের সকল মিটিং এ অবশ্যই যোগ দিতে হবে। মিটিং এর আলোচনা মনোযোগ দিয়ে (না বুঝলেও) শূনতে হবে এবং প্রয়জনে নোট করে নিতে হবে। মিটিং এ থাকা কালিন সময় কোনো অবস্থাতেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কথা বা হাসাহাসি করা যাবে না। অযথা হাসাহাসিতে মানুষের বেক্তিত্বহীনতা প্রকাশ পায়। চেয়ারে পা তুলে বসা যাবে না।
থুতু ফেলাঃ রাস্তায় চলাচলের সময়, স্কুলে গিয়ে বা ঘরের বাইরে কোথাও যখন তখন থুতু ফেলা যাবে না। উচ্চ শব্দে গলা ধাকরানি দেয়া যাবে না। আপনার বাচ্চা যদি এমন করে তাকেও না করার জন্য বুঝিয়ে বলুন। হেঁসে বা অবহেলা করে উড়িয়ে দিবেন না।
নাক,কান খোঁচানঃ অন্য কারো জন্য অস্বস্থি হতে পারে এমন ভাবে যেখানে সেখানে নাক,কান,চোখ বা অন্য কোনো অঙ্গ খোঁচাবেন না। খুব বেশি দরকার হলে একটু আড়াল করে নিবেন এবং টিস্যু ব্যবহার করবেন। হ্যাঁই উঠলে মুখের সামনে হাত নিবেন, বাচ্চাকেও শেখাবেন। খাওয়ার মধ্যে বা পরে শব্দ করে ‘ঢেকুর’ দিবেন না। দাঁত খোঁচানোর দরকার হলে হাত দিয়ে আড়াল করে নিবেন। দাতের সাথে লেগে থাকা খাদ্য কনা ‘থু’ করে বাইরে ফেলবেন না।
বসাঃ ইউরোপের মেয়েরা পা ফাঁক করে বসে না। পা ফাঁক করে বসা মেয়েদের জন্য সাস্থ সম্মত নয়, দেখতেও ভালো দেখায় না।আমাদের ধর্মীয় দৃষ্টিতেও ঠিক নয়।সুতরাং কোথাও বসার সময় অবশ্যই দুই ‘উরু’ এক সাথে মিশিয়ে বসবেন। আপনার মেয়েকেও শেখাবেন। কোথাও বসে পায়ের উপর পা তুলে হাত দিয়ে পা কচলাবেন না। অযথা পা দোলাবেন না। পার্কে বা মানুষ চলাচল করে এমন জায়গায় বেঞ্চের উপর পা উঠিয়ে বসবেন না। যেখানে সেখানে হেলান দিয়ে দারাবেন না। কোনো অবস্থাতেই দেয়ালের গায়ে পা ঠেকিয়ে দারাবেন না।
ময়লা ফেলাঃ যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না। স্কুলে বা বাইরে নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলবেন। আপনার বাচ্চা কেক,চকলেট বা অন্য কোনো খাবার খেলে খেয়াল রাখবেন যেন খাবারের খোসা বা প্যাকেট সেখানে ফেলে না রাখে, আপনিও রাখবেন না। প্রয়োজন হলে আপনার হাত ব্যাগের মধ্যে রেখে দিবেন। যখন ময়লা ফেলার ঝুরি পাবেন তখন ফেলে দিবেন।
কম্পিতিঃ স্কুল থেকে আপনার সন্তানকে যে কম্পিতি বা হোম ওয়ার্ক দেয়া হয় তা সে ঠিক মতো করল কি না তা প্রতিদিন দেখভাল করুণ। না বুঝলেও দেখুন। টেলিভিশন, মোবাইল বন্ধ রেখে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় সন্তানের লেখা পড়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাকে সময় দিন।
সন্তানকে স্কুলে দেয়ার সময়ঃ প্রতিদিন সকালে আপনার সন্তানকে স্কুলে দেয়ার সময় বা ছুটিতে বাসায় আনার সময় নিজেকে একটু পরিপাটি করে নিন। চুল পরিপাটি করুন, হাতে মুখে ক্রিম ব্যবহার করুন, নিজের পোষাকের দিকে খেয়াল রাখুন। যে পোষাক পরে কিচেনে থাকেন বা শুয়ে থাকেন সেই পোষাক পরে কোনো অবস্থাতেই বাইরে যাবেন না। সকালে আপনার সন্তান স্কুলে যাওয়ার আগে তার পোষাক, চুল ও স্কুলের ব্যাগ নিজে হাতে গুছিয়ে দিন। তার ব্যাগে কিকি আছে,কিকি নেই তা লক্ষ্য করুন। সকালে কড়া করে ডিম বা অন্য কোনো ভাজা জিনিস বাচ্চাকে খাওয়াবেন না। খাওয়ার পরে অবশ্যই বাচ্চার দাঁত ব্রাস করে দিবেন। খাওয়ার সময় ব্যবহারিত পোষাক পরে বাচ্চাকে বাইরে স্কুলে যেতে দিবেন না খাওয়ার পরে পোষাক পালতে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠান।
হাঁসি খুশিঃ হাঁসি খুশি থাকুন। অন্য মায়েদের সাথে অন্তত শুভেচ্ছা বিনিময় করুন। বাইরের কারো সামনে বাচ্চাকে বকা-ঝকা করবেন না।
অভিযোগঃ স্কুল থেকে কোন চিঠি বা চিরকুট দিলে তা গুরুত্বসহকারে দেখুন। আপনার অবগতির জন্য ছোট কাগজে কোনো কিছু লিখে দিলে তা অবশ্যই বোঝার চেষ্টা করুন। নিজে বুঝতে অসুবিধা হলে অন্য কারো সহযোগিতা নিন। কোনো অবস্থাতেই আবহেলা করবেন না।
সামগ্রীঃ আপনার সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রি (খাতা,কলম,পেনসিল রং ইত্যাদি) কিনুন এবং তা ব্যবহার করতে শেখান। স্কুলে গিয়ে যেন আপনার সন্তান কে অন্যের কোনো কিছু ব্যবহার করতে না হয় সে দিকে খেয়াল রাখুন। অন্য বাচ্চাদের খাবার খেতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। আপনি যদি আপনার সন্তানকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রী না দেন তাতে তার মন ছোট হয়ে যাবে। মানবিক ভাবে তার বিকাশ হবে না। মনে রাখবেন দামি মোবাইল,প্রসাধনী বা দামি পোষাক ব্যবহারের চেয়ে এগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কাজেই এই সামান্য কাজ গুলো যদি প্রতিটি অভিভাবক নিজে করেন এবং অন্যকে অগ্রহি করেন তাতে করে ইউরোপিয়ানদের কাছে আমাদের নিজেদের ভাবমূর্তি সহ আমাদের সন্তানের জন্য অনেক বড় ভুমিকা পালন করবে। কাজেই আসুন আমরা সকলে চেষ্টা করা যাতে করে এই কাজ গুলো করতে পারি এবং এই লেখাটা বেশি বেশি করে সকলের কাছে শেয়ার করে পৌঁছে দেই যাতে করে সবাই এক সময় বলতে পারে যে, এখন আমিও পারি। ধন্যবাদান্তে আমিওপারি ডট কম ও ভেনিস বাংলা স্কুল। উল্লেখ্য আপনার সন্তান ইতালিতে আসার আগে ও পড়ে আপনার করনিও কি? তা নিয়ে আমাদের সাইটে একটি গাইড রয়েছে চাইলে এই লেখার উপর ক্লিক করে পড়ে নিতে পারেন।
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে এই লেখায় ক্লিক করে জানুন এবং তুলে ধরুন। নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। আর আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে রয়েছে অনেক মজার মজার সব ভিডিও সহ আরো অনেক মজার মজার টিপস তাই এগুলো থেকে বঞ্চিত হতে না চাইলে এক্ষনি আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে লাইক দিয়ে আসুন। এবং আপনি এখন থেকে প্রবাস জীবনে আমাদের সাইটের মাধ্যমে আপনার যেকোনো বেক্তিগত জিনিসের ক্রয়/বিক্রয় সহ সকল ধরনের বিজ্ঞাপন ফ্রিতে দিতে পাড়বেন। ]]