আমাদের পরিবার জানে আমার স্বামী অ্যামেরিকাতে একটা কলেজে পড়ায়। পিএইচডি করছে। আমিও তাই জানি। কিন্তু অ্যামেরিকায় আসার পর বুঝলাম প্রবাস কি!!
অ্যামেরিকায় আসার এক মাস পরই আমাকে উপার্জনের জন্য বাইরে যেতে হল। ওর একার উপার্জনে অ্যামেরিকার মত শহরে থাকা অসম্ভব। “ও আমায় তাই বোঝাল”।ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত একটা সুপার শপে, আর বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত একটা ফাস্ট ফুড শপে কাজ করতাম। সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করতাম । হাতে টাকা আসতে লাগল। ওর সাথে দেখাই হয় না। আমি যখন ফিরি তখন সে ঘুমিয়ে থাকে। আর যখন আবার কাজে যাই সে বাসায় থাকে না। একদিন ছুটি পাই তাও ওকে পাই না। ও বলে পিএইচডি কি এত সোজা ! অনেক পড়াশুনা করতে হয়। এখন আমোদ ফুর্তির টাইম না। আমি মেনে নেই।
কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠি। কাজ শেষ করে বাসায় যখন ফিরি হাত-পা আর চলতে চায় না। এরই মাঝে ওর খাবার, পোশাক আরও আনুসাঙ্গিক সব রেডি রাখতাম সবসময়। আমার প্রতি ওর কখনোই কোন অভিযোগ ছিল না।ও পিএইচডি করছে তাই ওর অনেক টাকা লাগে। ইতিমধ্যেই আমার অ্যাকাউন্ট প্রায়ই খালি হয়ে যায়। আমি কিছু বলি না। থাক না ! পয়সাইত যাচ্ছে । আমার স্বামী অনেক বড় হোক। এর চেয়ে আরও দিগুন পয়সা আসবে।
এভাবে ২ বছর কেটে যায়। আমি হাঁপিয়ে উঠি। ওকে বলি তোমার আর কত দিন লাগবে!! সে বলে এইতো প্রায় শেষ। সামনেই পরীক্ষা। এক কাজ কর, তুমি দেশ থেকে ঘুরে আসো। আমিও নিশ্চিন্তে পরীক্ষাটা দিয়ে দেই। আমি বুঝি না কিছুই।
শেষ পর্যন্ত এক মাসের জন্য দেশে যাই। এক মাসে বড় জোর দুই দিন ওর সাথে কথা হয়। ওর পরীক্ষা তাই বিরক্ত করতে নিষেধ করে। আমি এক মাস পরে ফিরে যাই। এয়ারপোর্টে কাউকে খুঁজে পাই না। ভাবলাম ও হয়ত কোথাও আটকে পরেছে। আমি একাই বাসায় রওনা হলাম। চাবি দিয়ে দরজা খুলতে যাই কিন্তু খুলে না। কলিং বেল দেই। একজন চাইনিজ উকি মারে। আমি অবাক। সে বলে এটা তার বাসা সে তিন সপ্তাহ আগে কিনে নিয়েছে।
আমার মাথা ঘুরতে থাকে। ওকে ফোন দেই। ফোন ধরে না। ওর এক বন্ধুকে ফোন দেই। সে আসে। তার বাসায় যাই। তার কথা শুনে আমি হুশ হারাই।
আমার স্বামী আরেকটা বিয়ে করেছে। আর কোন পিএইচডি সে করছে না। সারাদিন ঐ বিদেশিনীর সাথে থাকতো। ওর পেছনে টাকা নষ্ট করত। আমাকে সে শুধু মাত্র ব্যাবহার করেছে।
আমি পারতাম দেশে ফিরে যেতে। পারতাম আরও একটা বিয়ে করতে। পারতাম গলায় ফাঁস দিতে। কিছুই করিনি। আমাকে দাড়াতে হবে। আমি আবার কাজে যোগ দিলাম। একা থাকছি। পাশাপাশি পড়াশোনা শেষ করার চেষ্টা করছি। দেখি না জীবনটা কতটা রঙ্গ করে আমাকে নিয়ে। এ ছাড়া আর কি করতে পারি বলেন???
[ অ্যামেরিকা থেকে পাঠানো এক বোনের লিখা ] আপনি চাইলে আপনার জীবনী তুলে ধরতে পারেন এতে করে অন্তত আপনাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য আসতে পারে কেউ না কেউ, পালটিয়ে দিতে পারে আপনার জীবন।
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতে “এখানে ক্লিক করুণ” তুলে ধরুন নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। ]]