মায়ের সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের আগে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে কাঠ পেন্সিল এবং মলদ্বারে রড ঢুকিয়ে নির্যাতনের মামলায় নিউইয়র্কের এক বাংলাদেশি যুবক ও তার মাকে গ্রেপ্তারের ঘটনাএখন ‘টক অব দ্য কমিউনিটি’। কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টের উদ্ধৃতি এবং নির্যাতিতা সেই তরুণী বধূর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানানো এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা গতকাল প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঠিকানায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। তরুণী বধূ এবং তার দুই শিশু কন্যার পাশে দাঁড়িয়েছে বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং নিউইয়র্ক সিটি সমাজসেবা দপ্তর।
নিউইয়র্কের পুলিশও তৎপর রয়েছে বর্বরোচিত আচরণকারীদের শায়েস্তার জন্যে। তরুণী বধূকে এভাবে নির্যানের অভিযোগে স্বামী সাঈদ ইশতিয়াক চৌধুরী (৩৪) এবং তার মা হুসনে আরা বেগম (৬৫)-কে ২৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্যাতিতা রোজী আকতার তন্বীর (২৩) আশপাশে আসতে ঐ দু’জনের বিরদ্ধ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মাননীয় আদালত। কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, শিশুর নিরাপত্তাহীনতা এবং অকথ্য নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ১৫ জুলাই তাদের মামলার শুনানির তারিখ বলে কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড এ ব্রাউন ‘ঠিকানা’-কে জানিয়েছেন। নিউইয়র্ক সিটির এস্টোরিয়ায় ৩৪ স্ট্রিটের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের নিচতলায় এক বেডরুমের ঐ বাসায় গিয়ে স্বামী-শাশুড়ির নিষ্ঠুর নির্যাতনে ভীত-সন্ত্রস্ত তন্বীর সঙ্গে কথা বলেন ‘ঠিকানা’র বিশেষ প্রতিনিধি।
সে সময় জানা যায়, গত সাড়ে ৪ বছরের জিম্মি দশার করুণ কাহিনী। কারো সাথে কথা বলা এবং মেলামেশা নিষেধ ছিল। সন্তান প্রসবের সময় হাসপাতালে যাওয়া এবং সন্তানের অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনুযায়ী স্বামী আর শাশুড়ির সাথে চিকিৎসকের কাছে যাতায়াতের সময়ে তন্বী নিউইয়র্ক সিটির রাস্তা আর যানজট প্রত্যক্ষ করেছেন। শুধু তাই নয়, তার আড়াই বছর এবং দেড় বছরের দুই কন্যা শিশুর জন্যে স্বাস্থ্য দপ্তর দেয়া উইক প্রোগ্রামের চেক দিয়েও শিশুর খাদ্য আনা হতো না। পরিচিত দোকানীর সহায়তায় শাশুড়ি এবং স্বামীর পছন্দের মাছ-মাংস আনা হয়েছে। তন্বীকে কখনোই মাংস কিংবা মাছের তরকারী খেতে দেওয়া হতো না। অথচ রান্না করতে হয় তন্বীকেই। শিশু সন্তানের দৈহিক বৃদ্ধি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম হওয়ায় প্রতিবারই চিকিৎসক বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তন্বীর সাহস হয়নি শাশুড়ির নির্দয় আচরণের তথ্য প্রকাশের।এক বেডরুমের বাসায় থাকেন শিশু দুই সন্তান নিয়ে স্বামী-স্ত্রী এবং শাশুড়ি। ৬ মাস আগে শশুরের মৃতু্য হয়েছে। তিনিও বাস করতেন এ ঘরেই। তন্বী জানান, ২০০৮ সালে রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ বাড্ডার আলাতুন নেসা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশের পরই বিয়ে হয় সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে। সাঈদ চৌধুরী তন্বীকে আমেরিকায় এনে লেখাপড়া করাবেন বললেও পরে তিনি তার কথা রাখেননি। স্বামীর স্পন্সরে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে আসেন তন্বী। এরপর আর দেশে ফেরা হয়নি।
এমনকি সিটিজেনশিপ গ্রহণের সময় কখন অতিবাহিত হয়েছে সেটিও বুঝতে পারেননি। তার পাসপোর্ট এবং গ্রিনকার্ড সরিয়ে রাখা হয়। তন্বী বলেন, শ্বশুর মারা যাওয়ার পর আমার স্বামী তার মায়ের সাথে এক খাটে ঘুমান। এয়ারকন্ডিশন তাদের রুম। দুই কন্যা নিয়ে প্রচন্ড গরমে সারারাত ছটফট করি। একইভাবে শীতের রাতেও আমাকে গরম কাপড় দেয়া হয় না। তারপর এ বছরের ২৭ জুন শাশুড়ি তাকে পেটায়। এরপর স্বামী আরেক দফা মারধর করেন। সে সময় স্বামীর পরনে কোনো কাপড় ছিল না। মায়ের নির্দেশে তিনি ওড়না দিয়ে তন্বীর দু’হাত পিঠমোড়া করে বাঁধে। এরপর তাকে নগ্ন করে মায়ের নির্দেশ অনুযায়ী ধর্ষণ করে যেন আরেকটি সন্তান হয় আর এতে ট্যাক্স রিটার্নের পরিমাণ বাড়বে। ধর্ষণের আগে তন্বীর যৌনাঙ্গে কাঠ পেন্সিল এবং মলদ্বারে রড ঢুকায়। তীব্র ব্যথায় তন্বী চিৎকার করলেও ঘরের দরজা-জানালা সব বন্ধ থাকায় তা বাইরে কেউ শুনতে পায়নি। বাচ্চারাওঐ ঘরেই ছিল। তন্বী জানান, দেশে আমার মা-বাবাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। স্বামী এবং শাশুড়িকে ছাড়িয়ে না আনলে নাকি আমাকেও শীঘ্রই মেরে ফেলা হবে। দু’মাস আগে শাশুড়ি ঢাকায় গিয়েছিলেন।
সে সময় আমার বিয়ের সময় মা-বাবার দেয়া স্বর্ণের সমস্ত অলংকার নিয়ে যান এবং তা রেখে এসেছেন তার ছোট কন্যার কাছে। সে সময় আমার মা-বাবা তাকে প্রায় দু’লাখ টাকার জিনিসপত্র কিনে দিয়েছেন। তারা ভেবেছেন, সেগুলো পেলে শাশুড়ির মন নরম হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বাসায় পুলিশ আসার পরই আমার গ্রিনকার্ড এবং পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি। সাঈদ চৌধুরীর বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জে। তিনি আগে একটি লন্ড্রিতে কাজ করতেন। গত কয়েক মাস ধরে লিভারি কার চালাচ্ছেন। তন্বীর দুই প্রতিবেশি ভদ্রমহিলার বলেন, এই বাসায় ছোট্ট দুটি শিশুর এমন বেহাল অবস্থা যা কখনো দেখিনি। এমনকি শিশুদের মায়ের সঙ্গেও কোনোদিন দেখা হয়নি। পুলিশ আসার পর জানলাম, কী নিষ্ঠুর আচরণের ভিকটিম ছিলেন এই তরুণী বধূটি। এহেন আচরণের জন্যে দায়ীদের কঠোর শাসি্ত কামনা করেন তারা। এদিকে, কমিউনিটির অসহায় মহিলাদের কল্যাণে কর্মরত নাহার আলম সাক্ষাৎ করেছেন তন্বীর সাথে। এহেন নির্যাতনের কঠিন শাস্তি চান তিনি।