নাজমুল হোসেন………
ফিলিপিনো সহকর্মীর কাছ থেকে জানতে পারি প্রকৃতির সপ্তাশ্চর্য হিসেবে নির্বাচিত ‘পুয়ের্তো প্রিন্সেসা ভূগর্ভস্থ নদী’ সম্পর্কে। তখন থেকে মনে সুপ্ত বাসনা জাগে, প্রকৃতির আশ্চর্যতম সৃষ্টি মাটির নিচের এই নদীকে দেখতে হবে।অবশেষে সুযোগ এল অফিসের এক প্রস্তাবে। এক বন্ধের দিন কিছু সহকর্মীসহ রওনা দিলাম নদীর উদ্দেশে। শহর থেকে অফিসের গাড়িতে সমুদ্রতীরে। একজন একটি যন্ত্রচালিত নৌকা ভাড়া করল। তারপর সে নৌকায় ভূগর্ভস্থ নদীর মুখের পার্ক পর্যন্ত গেলাম। ওখানকার ভ্রমণ অফিস থেকে নদীতে যাওয়ার পাস নিয়ে একজন গাইডসহ নিরাপত্তা জ্যাকেট, হেলমেট, একটি বড় ব্যাটারির সাহায্যে প্রজ্বলিত আলো নিয়ে বইঠা বাওয়া নৌকায় রওনা দিলাম নদীর পথে।
সামনে উঁচু পাহাড়। আমাদের নৌকা একটি সুড়ঙ্গ নদী দিয়ে এগিয়ে চলেছে পাহাড়ের পেটের মধ্য দিয়ে। একটু পরই এল ঘন অন্ধকার। সম্বল আমাদের ওই আলোটুকুই। গাইড আলো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখাচ্ছেন চারপাশ। আমরা সবাই চুপচাপ, হয়তো সবার মধ্যেই ভয় বিরাজ করছে, মাথার ওপর বিশাল পাহাড় আর তার নিচে অন্ধকারে পানির মধ্যে একটু ভয় পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না অথবা মুগ্ধ হয়ে দেখছে সৃষ্টিকর্তার অসীম সৃষ্টি। বইঠার শব্দ আর গাইডের কথার মধ্যে হঠাৎ শব্দ করে উড়ে যায় কিছু বাদুড়, সেদিকে আলো ফেলতেই দেখলাম অসংখ্য বাদুড় ঝুলে আছে চারপাশে। মাঝেমধ্যে কিছু ছোট সাপও দেখা যাচ্ছে। পাথরের বিভিন্ন আকৃতি আর রঙে কল্পনায় ভেসে ওঠে বিভিন্ন পরিচিত দৃশ্য। দেখতে দেখতে আমরা দুই কিলোমিটার পার হয়ে এসেছি। গাইড বললেন, এই নদীর দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ২ কিলোমিটার। নৌকা চলার নাব্যতা আছে চার কিলোমিটার পর্যন্ত আর সুড়ঙ্গটি প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। কিন্তু আমরা যেতে পারব ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। কারণ, আমাদের কাছে অক্সিজেন মাস্ক নেই। এরপর বাতাসের স্বল্পতা আছে। তাই সবাই ফিরে এলাম সেখান থেকে কিছু চির অম্লান স্মৃতি নিয়ে।