• Mon. Dec ২, ২০২৪

আমিওপারি ডট কম

ইতালি,ইউরোপের ভিসা,ইম্মিগ্রেসন,স্টুডেন্ট ভিসা,ইউরোপে উচ্চ শিক্ষা

ঘুরে আসুন পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল

ByNAJMUL HUSSAIN

Jun 28, 2013

নাজমুল হোসেন………………

পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সোন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। পাহাড়, অরণ্য, হাওড় আর সবুজ চা বাগান পরিবেষ্টিত এই শ্রীমঙ্গল। আছে আদিবাসী বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি। চা শিল্পের জন্য শ্রীমঙ্গলের সুনাম বিশ্বব্যাপী। পাহাড়বেষ্টিত এ উপজেলার চারদিকে চিরসবুজের সমারোহ। দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি দেশ হিসেবেও শ্রীমঙ্গলের রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। ৪২৫ দশমিক ১৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জনপদের সঙ্গে সারা দেশের রেল ও সড়কপথে রয়েছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।


মৌলভীবাজার জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এ উপজেলায় রয়েছে ৪৪ টি চা বাগান। সবুজের নির্সগভরা এসব চা বাগানের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রতিনিয়তই পর্যকটদের আকৃষ্ট করছে। আর শ্রীমঙ্গল শহর মূলত চা শিল্প কেন্দ্রিক হওয়ায় একে চায়ের রাজধানীও বলা হয়ে থাকে। এসব চা বাগানগুলোতে কর্মরত রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার চা শ্রমিক। প্রকৃতি ও বাগানে কাজ করা চা শ্রমিকদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা চা বাগানের নান্দনিক সৌন্দর্যে যে কোন মানুষেরই মন কাড়বে। উঁচু-নিচু পাহাড়ে সারি সারি ঘন সবুজ চা বাগান। দেখলে মনে হবে কেউ যেন সবুজ চাদর বিছিয়ে রেখেছে। বাগানের চা গাছগুলোকে রোদের উত্তাপ থেকে বাঁচাতে চা বাগানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি। এ গাছগুলো ছায়াবৃক্ষ নামে পরিচিত। প্রতিটি চা বাগানের চা শ্রমিকদের বিশেষভাবে পিঠে কাপড় বেঁধে একটি কুঁড়ি দু’টি পাতা তুলে আনা, চায়ের কুঁড়ি সংগ্রহ করে বিকেলে মাথায় করে শ্রমিকদের লাইন ধরে ঘরে ফেরা-নান্দনিক এসব দৃশ্য দেখলে শুধু চোখ নয়, মনও ভরে যায়। এছাড়া নানান জাতের পাখির কলরব, বাগানের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি ঝর্ণার ছলছল শব্দ। আবার অনেক বাগানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন লেক। পাহাড়ের চূড়ো থেকে লেকের নীল জলরাশি দেখতে গেলে চোখ ফেরানো দায়।
সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে কোদালায় প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষ শুরু হয়। তবে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষের গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৯৫৫ সালে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানে। ১৯৮০ সালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বালিশিরা উপত্যকায় একের পর এক চা বাগান গড়ে ওঠতে থাকে।


চায়ের উৎপাদন ও গুণগত মান উন্নয়ন সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ১৯৫৭ সালে শ্রীমঙ্গলে চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। দেশের একমাত্র চা গবেষণা কেন্দ্রটি এখন পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে রূপ নিয়েছে। ইনস্টিটিউটিট ভবনটির সামনে রয়েছে অপরূপ ফুলের বাগান, শত বছরের চা গাছ, সারিবদ্ধ পাম, ইউক্যালিপটাস, চা পরীক্ষানাগার, চা নার্সারি, চা ফ্যাক্টরি, নয়নাভিরাম লেক, লেকের স্বচ্ছ পানিতে ফুটন্ত জলপদ্ম, এরাবিশ ও রোবাস্টা কাফ গাছ, নানান জাতের অর্কিডসহ ভেষজ বাগান। প্রতিদিনই এখানে পর্যটকদের ঢল নামে।
সূত্র আরও জানায়, ১৯৮০ সালে উপজেলার ভানুগাছ সড়কের পাশে ভাড়াউড়া চা বাগান অংশে বাংলাদেশ চা পুনর্বাসন প্রকল্পে ব্রিটিশ পরামর্শকদের থাকার জন্য এনেক্র ভবন গড়ে তোলা হয়। এই ভবনটি বেশিরভাগ মানুষের নিকট ব্রিটিশ কারিগরি নামে পরিচিত। ১৯৯২ সালে চা পুনর্বাসন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এনেক্র ভবনটি দেশি- বিদেশি পর্যটকদের নিকট অতি পরিচিত স্থান হয়ে ওঠে। ২০০৪ সালে এই ভবনটি ‘টি রিসোর্ট’ নাম ধারণ করে বাংলাদেশ চা বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে।
চা শিল্পের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের সাথে চা শিল্পকে পরিচয় করে দিতে চা বাগানে ব্যবহৃত প্রায় দেড়’শ বছরের পুরনো বিভিন্ন সামগ্রি দিয়ে টি রিসোর্ট এর ভিতর ২০০৯ সালে টি মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করা হয়। রিসোর্টের টিনসেড ঘরের চারটি কক্ষে এ মিউজিয়ামটি স্থাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন শ্রীমঙ্গলের নন্দরানী চা বাগান পরিদর্শনে গিয়ে যে চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করেছিলেন সেগুলোও মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও ব্রিটিশ আমলে চা শ্রমিকদের ব্যবহত বিশেষ কয়েন, কম্পাস, ঘড়ি, পাম্প টিউবওয়েল, ব্রিটিশ আমলের ফিল্টার, চা গাছের মোড়া ও টেবিল, পাথর হয়ে যাওয়া গাছের খ-, প্রোনিং চাপাতি, প্লান্টিং হো, দিক নির্ণয়ক যন্ত্র, ফসিল, লোহার পাপস, ঘটি, ইংরেজ আমলের ফ্যান, গহনা, কাটা কোদাল, টাইপ রাইটার, কয়েন পাথরের পেস্নট, লোহার ফ্রেম টেবিল, প্রোনিং নাইফ, ইলেকট্রিক ফ্যান, ফর্ক, সার্ভে চেইন, রেডিও, সিরামিক ঝাড়, ড্রয়ারের অংশ, বাট্টার ডিল, রাজনগর চা বাগানের নিজস্ব কয়েন, ইংরেজ আমলে লন্ডন থেকে আনা ওয়াটার ফিল্টার, রিং কোদাল, তীর-ধনুক, ব্রিটিশ আমলের বিমানের যন্ত্রাংশ, কেরোসিনচালিত ফ্রিজ, পাকিসত্মানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের ব্যবহ্নত গাড়ির চেসিজসহ বিভিন্ন সামগ্রি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। পাহাড়ের টিলার ওপর নির্মিত নয়নাভিরাম এই টি রিসোর্টটি দেখতে প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানে আসছেন।
শ্রীমঙ্গল শহরের প্রবেশমুখ মুছাইবাজারের পাশে আলীয়াছড়া পানপুঞ্জির সামনে ২০০৯ সালে স্থাপন করা হয়েছে চা কন্যা ভাষ্কর্য। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আঁকাবাঁকা দীর্ঘ পথ। দু’পাশে ছড়ানো ঘন সবুজ চায়ের বাগান। এমন মনোমুগ্ধকর আরণ্যক পরিবেশে রাসত্মার এক কোণে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে চা কন্যা। এতে এক চা কন্যার একটি পাতা দু’টি কুঁড়ি সংগ্রহের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‘চায়ের দেশে স্বাগতম’ শীর্যক দৃষ্টিনন্দন এই ভাষ্কর্যটি শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকদের প্রবেশপথেই চায়ের শহরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
চা বাগানে এসব নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও এখানে রয়েছে দিগন্ত জোড়া হাইল হাওর। যার নীল ঢেউয়ের ছন্দে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। হাওরের অফুরন্ত মূল্যবান জলজ সম্পদ ও শীতের সময় আসা অতিথি পাখিরা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে বারবার। এছাড়াও রয়েছে বন্যপ্রাণী সেবা আশ্রম, ডিনস্টন সিমেট্রি, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসকূপ, খাসিয়াপুঞ্জি, নির্মাই শিববাড়ি, বধ্যভূমি ৭১’র মনুমেন্ট, লেবু, আনারস ও রাবার বাগান। পর্যটকদের রাত্রি যাপনের জন্য এখানে ব্যক্তি মালিকানাধীন কয়েকটি হোটেল, রিসোর্ট, রেস্ট হাউজ ও কটেজ গড়ে উঠেছে। চা বাগানগুলোতেও রয়েছে কোম্পানী বাংলা। যেখানে পর্যটকরা রাত্রি যাপন করে প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে অবলোকন করার সুযোগ পান। এছাড়া রয়েছে খাসিয়া, মণিপুরী, টিপরা, উড়িয়া, সাঁওতালসহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র, সংস্কৃতি পর্যটকদের বারবার শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে উৎসাহিত করে।
সম্প্রতি পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে শ্রীমঙ্গলে একটি মোটেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ফিনলে টি কোম্পানী কর্তৃপড়্গের দায়ের করা মামলার কারণে বর্তমানে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য এখনো আলাদা করে পর্যটন পুলিশ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তবে আগত পর্যটকদের বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখানোর জন্য এখানে রয়েছে বেশ ক’জন ইকো-ট্যুর গাইড।

[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতেএখানে ক্লিক করুণতুলে ধরুন  নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান ]]

NAJMUL HUSSAIN

আমি ইতালির মিলান এনটিভি প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করছি | পাশাপাশি বর্তমানে পাঠকদের জনপ্রিয় অনলাইন কিছু পত্রিকার সাথে টুক টাক লেখা লেখির চেষ্টা করি | সাংবাদিকতা আমার পেশা না,তবে সংবাদ সংগ্রহ করে পাঠকদের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করি লেখালেখির মাধ্যমে |চেষ্টা করবো প্রবাসের কমিউনিটির কথা গুলো পত্রিকায় প্রকাশ করতে |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *