• Fri. Nov ২২, ২০২৪

আমিওপারি ডট কম

ইতালি,ইউরোপের ভিসা,ইম্মিগ্রেসন,স্টুডেন্ট ভিসা,ইউরোপে উচ্চ শিক্ষা

ফ্রান্সে সত্যিকার শিশুকন্যা মোগলির কাহিনী

ByNAJMUL HUSSAIN

Jun 13, 2013

নাজমুল হোসেন,ইতালি থেকে………

বনের বাঘ, ভল্লুক আর সিংহের কথা যেমন সবার মুখে মুখে থাকে ঠিক তেমনি বনের রাজা টারজান, শিশুকন্যা মোগলির কাহিনী এখনো সবার মনে জীবন্ত, কি গল্পের বইয়ে অথবা চলচ্চিত্রে। ইদানীং আরেক মোগলি কন্যার সন্ধান মিলেছে। আর সেই মোগলি কন্যা কিন্তু পড়াশোনাও চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে।আধুনিক প্রযুক্তির এ সময়টাতে এরকম মোগলির কথা সবার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকলেও বাস্তব কিন্তু তাই। দ্বিতীয় সেই মোগলি কন্যার নাম টিপ্পি বেনজামিন ওকান্তি দিগরি। তাকে আদর করে টিপ্পি নামেই ডাকে পরিবারের সদস্যরা। বাবা আর মায়ের সাথে এখন সে ফ্রান্সেই বসবাস করছে। দ্বিতীয় মোগলির বনের রাজত্ব আর অজানা সব অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘দি রিয়েল মোগলি’ শিরোনামে সচিত্র একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক মেইল অনলাইন। এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সত্যিকারের এক মোগলি কন্যার অজানা কাহিনী ও ছবি প্রথমবারের মতো প্রকাশ পেলো। আর এ মোগলি কন্যা তার জীবনের শুরুর দশটি বছর কাটিয়েছে আফ্রিকার বিভিন্ন জঙ্গল ঘুরে ঘুরে। টিপ্পির এ কাহিনী আমাদের রুডইয়ার্ড কিপলিং এর লেখা দ্য জঙ্গল বুকের সেই প্রধান চরিত্র মোগলির কথাই মনে করিয়ে দেয়।

টিপ্পির পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়, টিপ্পি নামের এই কন্যা দক্ষিণ আফ্রিকার নামিবিয়া দেশে জন্মগ্রহণ করে। সে তার জন্মের পর থেকেই ঘুরে বেড়িয়েছে বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন জঙ্গলে। তার অদ্ভুত এ জীবনে সেসব সমর্থন পেয়েছে তার বাবা সিলভি রবার্ট ও মা অ্যালেন দিরগির কাছ থেকে। তার বাবা-মা দুজনই বন্যপ্রাণীর পেশাদার আলোকচিত্রী। বলতে গেলে তারা তিনজন মিলেই আফ্রিকায় অবিশ্বাস্য সব ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের সময় কাটিয়েছেন।নিজের মোগলি কন্যা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাবা সিলভি রবার্ট বলেন, সে নিজেকে তার পরিবেশে খুব মানিয়ে নিয়েছিল, যেমন দুষ্ট বানরও তার কাছে রাখা বোতল চুরি করতো না। তিনি বলেন, আমরা তাকে খুব বেশি স্বাধীনতা দিতাম। একদিন একটি হাতিকে পাম গাছ খেতে দেখে সে তার মাকে বললো, মা, আমরা চুপ থাকি। নয়তো হাতিটা ঘাবড়ে যেতে পারে।তিনি বলেন, আমরা গভীর অরণ্যে তাঁবু করে বাস করতাম। টিপ্পি সব সময়ই সূর্য ওঠার সাথে সাথেই ঘুম থেকে ওঠে পড়তো। টিপ্পি জঙ্গলে অস্ট্রিক পাখির সাথে গলাগলি করে হাঁটাহাঁটি করতো, বিশাল হাতির সাথে নাচতো খেলতো আবার কখনো লোমশ ভেড়া প্রাণীর সাথে নির্দ্বিধায় ঘুমিয়ে পড়তো। আর এটি কেবল তখনি সম্ভব যখন ঐ প্রাণীর সাথে মানুষের আত্মিক মিল ও সমঝোতা তৈরি হয়।সিলভি বলেন, হোক না বাঘ অথবা সিংহ টিপ্পি সব প্রাণীর সাথেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতো। সে তার চোখ আর অন্তরের ভাষায় তাদের সাথে ভাববিনিময় করতে পারতো।তিনি বলেন, সবচাইতে অবাক করার মতো ঘটনা হলো, টিপ্পি শিশুমন আর কল্পনা দিয়ে বিশাল আকারের ‘আবু’ নামক আফ্রিকান হাতিদের তার বন্ধু বানিয়ে ফেলেছিল। কোন ভয় যেনই তার মনে নেই। ঠিক যেন মোগলি কন্যার মতোই। তিনি বলেন, তার তুলনায় হাতির বিশাল আকার যেন কোনো বিষয়ই ছিল না তার কাছে। সে আমার সাথে যেভাবে কথা বলে মনে হতো হাতির সাথে ঐভাবেই কথা বলে যাচ্ছে। পরিবেশটা এমন ছিলো যেন ছোট এক মেয়ে যেই কিনা প্রাণীদের সাথে কথা বলতে পারে! তিনি বলেন, টিপ্পি জঙ্গলের ভয়ংকর পশুদের সাথেও দৃঢ় বন্ধন গড়ে তোলে ছিলো। প্রাণীদের সাথে টিপ্পির চলতে কোনো সমস্যা না হলেও তার বাবা-মা সবসময়ই তার নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়াল রাখতেন। সিলভি বলেন, প্রাণীদের সাথে চাইলে সবাই এরকম আচরণ ও বসবাস করতে পারবে না। সাধারণত কোনো প্রাণী মানুষকে দেখামাত্রই হয় পালিয়ে যাবে নতুবা আত্মরক্ষার জন্য আক্রমণ করতে চাইবে।
২০০৬ সালে তারা যখন আফ্রিকায় যান সে সময় ও আফ্রিকার আদিবাসীদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে সিলভি বলেন, আমরা যখন গ্রামে গেলাম তার ঠিক ২ মিনিটের মধ্যেই সেখানকার লোকেরা তার সাথে মিশে গেল। এবং তাকে খুব মজা হিসেবে পেয়ে বসলো। তিনি বলেন, আফ্রিকানরা অন্য শিশুদের খুব পছন্দ করে। বিশেষ করা সাদা চামড়ার শিশুদের। তার চুলের আলাদা গঠন তাদের খুবই অবাক করতো। আমরা টিপ্পিকে তাদের সাথে দিন কাটানোর সুযোগ করে দিতাম যতক্ষণ পর্যন্ত না তার ঘুমানোর সময় হতো।
তিনি বলেন, তাকে আমরা আফ্রিকানদের পোশাকেই মেশার ও চলার সুযোগ দিতাম। কারণ আমি জানতাম সে যখন তার ইউরোপে নিজ দেশে ফিরবে এ পরিবেশ আর ফিরে পাবে না। তিনি বলেন, টিপ্পি যখন দশ বছর বয়সে ফ্রান্স ফিরে আসে তখন নগরজীবনে নিজেকে মানিয়ে নিতে তার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। প্রাণীদের সেই পুরনো পরিবেশকে সে ভীষণ মিস করতো। আমরা তাকে সেখানে একটি টিয়া পাখি এনে দেই। আর এ পাখিটি এখন সব সময়ই তার পাশে থাকে, যখন ঘুমোতে যায় তখনও তার পাশেই এটি থাকে। দ্বিতীয় এই মোগলি কন্যা টিপ্পি এখন ২৩ বছরে পা দিয়েছেন। সে এখন ফ্রান্সের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্রে তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন।
সিলভি বলেন, টিপ্পি আফ্রিকার জঙ্গল ছেড়ে আসলেও সে কিন্তু নতুন আরেকটি জঙ্গলেই আছেন। আর তা হলো শহর! পাঠকদের জন্য সুসংবাদ হচ্ছে দ্বিতীয় মোগলি কন্যা টিপ্পির জীবনের রোমাঞ্চকর এসব কাহিনী আর অভিজ্ঞতার সচিত্র দেখা পাওয়া যাবে তার লেখা ‘মাই বুক অব আফ্রিকা’ বইয়ের প্রতিটি পাতায়। আর পাঠকরাও দেখা পাবেন গল্পের নয় সত্যিকারের এক মোগলি কন্যার!

[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতেএখানে ক্লিক করুণতুলে ধরুন  নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান ]]

NAJMUL HUSSAIN

আমি ইতালির মিলান এনটিভি প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করছি | পাশাপাশি বর্তমানে পাঠকদের জনপ্রিয় অনলাইন কিছু পত্রিকার সাথে টুক টাক লেখা লেখির চেষ্টা করি | সাংবাদিকতা আমার পেশা না,তবে সংবাদ সংগ্রহ করে পাঠকদের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করি লেখালেখির মাধ্যমে |চেষ্টা করবো প্রবাসের কমিউনিটির কথা গুলো পত্রিকায় প্রকাশ করতে |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version