ড্রাগ (drug) শব্দটি ওষুধ বা medicine-এর সমার্থক একটি শব্দ। কিন্তু বর্তমানে এই আশাব্যঞ্জক শব্দটি একটি নেতিবাচক শব্দে পরিণত হয়েছে। এখন ড্রাগ বলতে সেই সব রাসায়নিক পদার্থকে বোঝানো হয় যা মাদকতা বা নেশা অর্থাত্ আসক্তি ও নির্ভরতা সৃষ্টি করে। এই নির্ভরতা শারীরিক এবং মানসিক – দুই ধরনেরই হতে পারে। তবে ড্রাগ যে শুধু নেশা বা আসক্তিতেই সীমাবদ্ধ নেই। আজকাল প্রায়ই দেখা যায় যে খেলোয়াড়রা শারীরিক শক্তি বাড়ানোর জন্য বেআইনিভাবে বিশেষ কিছু রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করেন, এগুলোও ড্রাগের অন্তর্ভুক্ত। মোটকথা, যেসব রাসায়নিক পদার্থ শরীরকে সুস্থ্য রাখার উদ্দেশ্যে নয় বরং অন্য কোনো অশুভ বাসনা পূরণের জন্য ব্যবহার করা হয় তা সবই ড্রাগের অন্তর্ভুক্ত।
আপাতদৃষ্টিতে ড্রাগ মাদকতা সৃষ্টির কারণ হলেও ক্ষেত্রবিশেষে তা শরীরের জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে, তখন এগুলোকে ড্রাগ হিসেবে অভিহিত করা যায় না। যেমন – অপারেশনের পর বা তীব্র ব্যথায় কাতর কোনো রোগীকে যখন পেথিডিন ইনজেকশন দেয়া হয়, তখন কিন্তু তা ‘ড্রাগ’ নয়! কিন্তু ওই রোগী যদি কয়েকবার পেথিডিন ব্যবহার করার পর আসক্ত হয়ে পড়েন এবং চিকিত্সার স্বার্থে ব্যবহারের প্রয়োজন না থাকলেও পেথিডিন ব্যবহার করেন, তখন একে ‘ড্রাগ’ বলা হবে। তাই চিকিত্সাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘ড্রাগ নেয়া’ বলতে চিকিত্সার প্রয়োজন ছাড়া বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ বা ওষুধের অপব্যহারকেই (drug abuse) বোঝায়।
নেতিবাচক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা ড্রাগগুলোকে বোঝার সুবিধার্থে দুভাগে ভাগ করা যায়- হার্ড ও সফট। হার্ড (hard) ড্রাগ ব্যক্তিকে খুব দ্রুত শারীরিক ও মানসিকভাবে তার ওপর নির্ভরশীল করে তোলে এবং সক্রিয় থাকার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। যেমন- আফিম ও আফিমজাত মাদক, হেরোইন ইত্যাদি। সফট (soft) ড্রাগ শারীরিক নির্ভরতা খুব একটা সৃষ্টি করে না, তবে মানসিক নির্ভরতা প্রবলভাবে সৃষ্টি করে। যেমন – ঘুমের ওষুধ, গাঁজা, মদ, কোকেন, ক্যাফেইন ইত্যাদি। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহারে এসব ড্রাগও শারীরিক নির্ভরতা সৃষ্টি করতে পারে।
ড্রাগকে অভ্যাস সৃষ্টিকারী ও আসক্তি সৃষ্টিকারী- এ দুভাগেও ভাগ করা যায়। অভ্যাস সৃষ্টিকারী (habit forming) ড্রাগ মানসিক নির্ভরতা বা অভ্যাস সৃষ্টি করলেও তা নেয়া বন্ধ করলে তেমন কোনো শারীরিক কষ্ট (abstinence syndrome) দেখা দেয় না। অন্যদিকে আসক্তি সৃষ্টিকারী (addicting) ড্রাগ টানা গ্রহণ করার পর বন্ধ করলে নানা ধরনের শারীরিক কষ্ট দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে আসক্তি বা নেশা (addiction)-এর অর্থ হলো শারীরিক বা ঔষধগত নির্ভরতা (physical or pharmacological dependence) সৃষ্টি করা। এ ধরনের ড্রাগ বেশিদিন ব্যবহার করলে শরীরের নিজস্ব শারীরিবৃত্তীয় ক্রিয়া অস্বাভাবিক যায় এবং ওই ড্রাগের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে তা বন্ধ করার পর কম বেশি শারীরিক কষ্ট দেখা দেয়। একেই বলা হয় abstinence syndrome, বাংলায় যাকে ‘বিরতি লক্ষণ’ বলা যেতে পারে।
ড্রাগের নেশা বা নির্ভরতার ক্ষেত্রে উত্তরণ বা escalation-ও ঘটতে পারে। ড্রাগ নির্ভর ব্যক্তিরা যদি সফট ড্রাগ ব্যবহার করতে করতে হার্ড ড্রাগ ব্যবহার শুরু করে তাহলে তাকে উত্তরণ বা escalation বলে। ব্যাপারটি যতটা না শারীরিক কারণে ঘটে, তারচেয়ে বেশি ঘটে সামাজিক, পরিবেশগত ও মানসিক কারণে। কখনো কখনো উলটো ব্যাপারটিও ঘটে। নানা ধরনের ড্রাগ ব্যবহার করতে করতে এদের সম্পর্কে বিভ্রান্তিই (disillusion) এর কারণ।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ড্রাগ নির্ভরতার নানা ধরন বা types বর্ণনা করেছেন। যেমন –
১. Morphine type : এতে শারীরিক ও মানসিক নির্ভরতা খুব দ্রুত ও তীব্রভাবে দেখা দেয়।
২. Barbiturate type : শারীরিক ও মানসিক নির্ভরতা অতিমাত্রায় তীব্র হয়। ধীরে ধীরে ব্যবহারের মাত্রা বাড়তে থাকে।
৩. Amphetamine type : মানসিক নির্ভরতা তীব্র হলেও শারীরিক নির্ভরতা খুব ধীরে ধীরে সৃষ্টি হয়। ব্যবহারের সময় মানসিক বিভ্রমও দেখা দেয়।
৪. Cannabis type : কিছু মানসিক নির্ভরতা হয়, তবে শারীরিক নির্ভরতা সৃষ্টি করে কিনা তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
৫. Cocain type : মানসিক নির্ভরতা ব্যাপকভাবে হয়।
৬. Alcohol type : তীব্র মানসিক নির্ভরতা তৈরি হয়। দীর্ঘদিন ধরে বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে শারীরিক নির্ভরতাও সৃষ্টি হয়।
৭. Tobacco type : অত্যন্ত শক্তিশালী মানসিক নির্ভরতা সৃষ্টি হয়। সে তুলনায় শারীরিক নির্ভরতা খুবই সামান্য।
৮. Mixed drug type : শারীরিক ও মানসিক – দুই ধরনেরই নির্ভরতা সৃষ্টি করে।
বিভিন্ন ধরনের ড্রাগ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে তার শিকারে পরিণত করে। জায়গা ও পরিবেশ-পরিস্থিতি ভেদে এর কম বেশি হয়। কিন্তু এ সমস্যা এখন সারা বিশ্বজুড়েই প্রকটভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতে “এখানে ক্লিক করুণ” তুলে ধরুন নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। ]]