হার্ট অ্যাটাকের ভয় পান না, এমন মানুষ বোধহয় জগত সংসারে নেই। এই ঘাতক ব্যধি এই আধুনিক চিকিৎসার যুগেও বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ। প্রতিবছর পৃথিবীর বুকে রোগের কারণে যেসব মানুষ মারা যান, তাদের একটা বড় অংশের মৃত্যুর কারণ এই হার্ট অ্যাটাক। এবং তাদের মাঝে অনেকেই স্রেফ এই কারণে মৃত্যুবরণ করেন যে হার্ট অ্যাটাককালীন সময়ে তিনি ছিলেন একা। সঠিক সময়ে কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলেই মানুষটিকে বরণ করে নিতে হয় মৃত্যু।
জীবনের প্রয়োজনে আমাদের অনেককেই আজকাল একা থাকতে হয়। কিংবা ধরুন কোথাও বেড়াতে গিয়েছেন, কিংবা বাসায় কেউ নেই এই মুহূর্তে, কিংবা নিজের অফিস কক্ষে একা আছেন, অথবা বাথরুমে গিয়েছেন… এমন কত ছোট খাট মুহূর্তে আমরা একলা থাকি, তাই না? অসুখ তো আর সময় বুঝে আসবে না, ধরুন সেই একলা থাকার মুহূর্তেই হলো আপনার হার্ট অ্যাটাক?
ইউরোপিয়ানদের তুলনায় ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তিন গুণ বেশি। ভারতীয় উপমহাদেশের অধিবাসীদের মধ্যে তরুণরা অল্প বয়সেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারে। আবার এটাও সত্য নয় যে, যারা মোটা তাদেরই হৃদরোগ হবে। আপনারা যদি হৃদরোগ হাসপাতালের একটি ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন যেখানে বাইপাস হয়েছে এমন রোগীদের রাখা আছে তাহলে দেখবেন যে, সেখানে মোটা মানুষের সংখ্যা খুবই কম। বরং দেখা যাবে যে তাদের বেশিরভাগই হালকা-পাতলা গড়নের মানুষ। সুতরাং, হালকা-পাতলা, চিকন স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া মানে এই নয় যে, আপনি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে পরিত্রাণ পেয়েছেন।
বিপদের কথা কেউ বলতে পারে না, তাই আসুন জেনে রাখি হার্ট অ্যাটাক করলে কি করবেন। কিংবা কি করলে বাড়তি কয়েক মুহূর্ত জীবনের জন্য লড়াই করতে পারবেন।
হার্ট অ্যাটাকের সাধারণ লক্ষণগুলো-
— বুকে অস্বস্তি কিংবা ব্যথা।
— শরীরের ওপরের দিকে অস্বস্তি বা ব্যথা, বিশেষ করে হাতে, পিঠে ও চোয়ালে বা পেটে।
— একটুতে হাঁফিয়ে ওঠা, হঠাত্ ঘাম, বমি বমি ভাব, মাথা হালকা লাগা বা ঘোরা।
পুরুষের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা বা অস্বস্তিটা হার্ট অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণ। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে মাত্র ৩০ শতাংশ বুকে ব্যথা বোধ করে। অনেক সময়ই মেয়েদের লক্ষণগুলো এমন যে, সেগুলো উপেক্ষিত হয়ে যায়। অনেকেই মনে করেন সাধারণ শরীর খারাপ লাগছে।
হার্ট অ্যাটাক হয়েছে অনুভূত হলে কি করবেন?
যদি উপরের লক্ষণ গুলো অনুভব করেন নিজের শরীরে, কিংবা মনে হয় যে হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে… সেক্ষেত্রে প্রথম উপদেশ হচ্ছে ঘাবড়ে যাবেন না। ঘাবড়ে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে। জ্ঞান হারাবার আগে ১০ সেকেন্ডের মতন সময় পাবেন, এই ১০ সেকেন্ডের মাঝেই নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা করতে হবে।
আমাদের হার্ট যখন অপর্যাপ্ত এবং অনিয়মিতভাবে রক্ত সঞ্চালন করে তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। হার্ট অ্যাটাকের ১০ সেকেন্ডের মধ্যে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। আপনি অজ্ঞান হবেন কি হবেন না সেটি তো আর এখনি বলে দেয়া যায়না। আর তাই হার্ট অ্যাটাক অনুভূত হলে বা হার্ট বিট অনিয়মিত অনুভূত হলে সাথে সাথে (১০ সেকেন্ডের মাঝে) খুব দ্রুত, জোরে এবং ঘন ঘন কাশি দিতে থাকুন। এমন ভাবে কাশতে থাকুন যেন কাশির সঙ্গে কফও বের হয়ে আসে। প্রতিবার কাশি দেয়ার আগে লম্বা করে বুক ভরে শ্বাস নিন। এভাবে ঘন ঘন কাশি এবং লম্বা নিঃশ্বাস প্রতি দুই মিনিট পর পর করতে থাকুন। এতে করে আপনার হার্ট কিছুটা হলেও নিয়মিতভাবে রক্ত সঞ্চালন করতে শুরু করবে। অর্থাৎ আপনি ঘটনা স্থলেই প্রাণ হারাবেন না, অন্তত কেউ আসার আগ পর্যন্ত নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন। এবং এই কাশির ফাঁকেই নিজের অবস্থান পরিবর্তন করুন। দাঁড়িয়ে থাকলে বসে পরুন, বসা থাকলে শুয়ে পরুন।
প্রত্যেক সাধারণ মানুষের জন্য এই টিপস জেনে রাখা অতি আবশ্যক। হাসপাতালে নেয়ার আগে এই টিপস অনেকখানি সাহায্য করবে রোগীকে। কারণ লম্বা নিঃশ্বাস নেয়ার ফলে আমাদের শরীরে অক্সিজেন পরিবহন বেশি হয়। আর ঘন ঘন এবং জোরে কাশি দেয়ার ফলে বুকে যে চাপের সৃষ্টি হয় তাতে করে হার্ট পর্যাপ্ত ও নিয়মিতভাবে রক্ত সঞ্চালনের জন্য প্রস্তুত হয়। মনে রাখবেন, লম্বা নিঃশ্বাস আর জোরে জোরে কাশি… হার্ট অ্যাটাকের সময় এই দুটো জিনিস আপনার সুযোগ দিবে নিজেকে রক্ষা করবার।
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতে “এখানে ক্লিক করুণ” তুলে ধরুন নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। ]]