উচ্চ রক্তচাপ একটি প্রাণঘাতী রোগ ।এই রোগ সম্পর্কে আমাদের এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে ।
কারন বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় ।একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ মি.মি মার্কারী। বয়সভেদে এই রক্তচাপ বাড়তে পারে বা কমতে পারে। কারো রক্তচাপ সব সময়ের জন্য যদি বেশি মাত্রায় থাকে (যেমন-১৩০/৯০ বা ১৪০/৯০ বা তারও বেশি) যা তার দৈনন্দিন কাজ বা স্বাভাবিক কাজকর্মকে ব্যাহত করে, তখনই এই অবস্থাটিকে আমরা উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলি।
কেন হয় :
প্রাপ্ত বয়স্কদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কারণ নির্ণয় করা যায় না। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তনের ফলে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হরমোন ও কিডনির ফাংশনজনিত জটিলতায় উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। অনিয়মিত লাইফ স্টাইল, অনিয়ন্ত্রিত ওজন, ধূমপান, এলকোহল, ফাস্টফুড খাবার গ্রহণ, রক্তে কোলেস্টেরল-এর আধিক্য এইসব কারণগুলোতে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ছোটদের ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদেরও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। জেনেটিক কারণে, ফ্যামিলিয়ার হাইপারটেনশনের ক্ষেত্রে (মানে বাবা-মায়ের আছে বাচ্চারও হতে পারে), কিডনির অসুখে, হৃৎপিন্ডের মহাধমনীর কোন একটি জায়গা সঙ্কুচিত থাকলে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়। কিডনির ওপরে এডরেনালগ্রন্থি ঠিকমত কাজ না করলেও উচ্চ রক্তচাপ হয়।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ :
-সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা।
-ঘাড় ব্যথা।
-চোখে দেখতে অসুবিধা হওয়া বা চোখে ঝাপসা দেখা।
-রাতে ঘুমাতে না পারা।
-সব সময় খিটখিটে মেজাজ থাকা।
ক্ষতিকর দিক :
দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিচের ব্যাধিগুলো হতে পারে।
(ক) স্ট্রোকঃ মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ।
(খ) হার্ট ফেইলিওর।
(গ) হার্ট অ্যাটাক, মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন।
(ঘ) কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়া।
চিকিৎসা :
উচ্চ রক্তচাপ এর চিকিৎসা দুইভাবে করা যায়। একটি ওষুধ ছাড়া অন্যটি ওষুধ দিয়ে।
ওষুধ ছাড়াঃ যাদের হাইপারটেনশনের মাত্রা খুব বেশি নয় কিংবা অল্প কিছুদিন হয় সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদের এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়।
-জীবনধারার পরিবর্তনঃ
-দুশ্চিন্তা পরিহার করা।
-অতিরিক্ত ওজন কমানো। শরীরের ওজন অতিরিক্ত হলে ধীরে ধীরে তা কমানো উচিত। এজন্য উচিত নিয়মিত হাঁটা এবং পরিশ্রম করা। অনেকেই ওজন কমানোর জন্য তাড়াহুড়ো করেন এটা কিছুতেই ঠিক নয়।
-পরিমাণ মতো খাওয়াঃ খাবার পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করা উচিত। অতিরিক্ত লবণ বা লবণ জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত। ফাস্টফুড বা ফ্রোজেন ফুড-এ লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। প্রাণীজ প্রোটিন ত্যাগ করে শাক-সবজি, সালাদের দিকে ঝোঁকা ভাল।
-ধূমপান, এলকোহল পরিত্যাগ করা উচিত।
প্রাথমিক অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে উপরের নিয়ম মানলে অনেকের রক্তচাপ ৩-৬ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসে। যদি এরপরও স্বাভাবিক না হয় তবে ওষুধের সাহায্য নিতে হয়।
উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিয়ে করা হয়। যেমন- ডাইইউরেটিক্স, বিটাবুকার, এসিই ইনহিবিটর, ক্যালসিয়াম চ্যানেল বøকার, ভ্যাসোডাইলেটর জাতীয় ওষুধ। ১টি ওষুধ দিয়ে এর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। প্রয়োজনবোধে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ধীরে ধীরে ডোজ বাড়ানো বা কমানো অথবা নিয়ন্ত্রণের জন্য একাধিক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু ওষুধ কখনোই বন্ধ রাখা যাবে না।
সতর্কতা :
-চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে প্রত্যেকেরই উচিত নির্দিষ্ট সময় পর পর রক্তচাপ পরীক্ষা করা।
-হঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ রাখা বা অনিয়মিতভাবে ওষুধ গ্রহণ না করা।
-ওষুধ গ্রহণ অবস্থায়ও অন্তত প্রতিমাসে একবার রক্তচাপ পরীক্ষা করা।
-একজন বিশেষজ্ঞের অধীনে থাকা এবং পরামর্শ অনুযায়ী চলা।
-আলগা লবণ, ফাস্টফুড, ফ্রোজেন ফুড খাওয়ায় সতর্ক থাকা।
-যেহেতু এ রোগে দীর্ঘদিন ওষুধ খেতে হয় কাজেই বছরে অন্তত একবার কিডনি এবং হার্টের পরীক্ষা অথবা শারীরিক সকল পরীক্ষা চেকআপ করানো উচিত।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন ছাত্র একটি ভিডিও বানিয়েছেন।
এখন থেকেই এই রোগের প্রতিরোধ করতে নিচের ভিডিওটি দেখুন এবং নিজে জানুন অন্যকে জানান।
[youtube 4bMB2bvwvlI nolink]
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতে “এখানে ক্লিক করুণ” তুলে ধরুন নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। ]]