• u. Nov ২১, ২০২৪

আমিওপারি ডট কম

ইতালি,ইউরোপের ভিসা,ইম্মিগ্রেসন,স্টুডেন্ট ভিসা,ইউরোপে উচ্চ শিক্ষা

কিডনি রোগের খাদ্য সমাচার

Byadilzaman

May 12, 2013

আমাদের দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয় বরং আশঙ্কাজনকহারে বেড়েই চলেছে এটাই বলাই বাঞ্ছনীয়। সময়মতো কিংবা উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে অনেকের ক্ষেত্রে কিডনি ফেইলুরের ঘটনাও ঘটছে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ এবং ডায়বেটিস রোগই কিডনি ফেইলুরের অন্যতম কারন হলেও খাদ্যাভাস পরিবর্তনও বিরাট ভূমিকা পালন করে। তাই, কিডনি ফাংশন এবং ফেইলুরের ধাপ ও অন্যান্য অঙ্গের ফাংশন নিরূপণ করে উপযুক্ত খাদ্যতালিকা অনুয়ায়ী সুষম খাবার খেলে সহজেই নিয়ন্ত্রন করতে পারেন কিডনি সমস্যা, পেতে পারেন স্বাভাবিক জীবন।

কিডনি সমস্যায় আপনি প্রথমেই করতে পারেন ডায়েট। কিডনি রোগে ডায়েটের প্রয়োজনীয়তা আপনার এইজন্য প্রয়োজন হবে…

 

* সর্বোচ্চ পুষ্টিমান বজায় রাখা

* ইউরেমিক বিষাক্ততা কমিয়ে রাখা

* শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন ভেঙে যেতে বাধা দেওয়া

* রোগীর শরীর ভালো লাগা এবং কিডনি ফেইলুরের বর্তমান অবস্থান যেন আর এগোতে না পারে সেদিকে প্রভাব রাখা

* ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয়তার দূরত্ব কমিয়ে আনা।

 

যেসব খাদ্যমান জরুরীঃ

খাদ্যশক্তিঃ পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালোরি দিতে হবে। পর্যাপ্ত ক্যালোরি না দিলে শরীরের টিস্যু ভেঙে রক্তে ইউরিয়া এবং পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে কিডনির জন্য ওগুলো অপসারণ করা দুঃসাধ্য হবে। শ্বেতসারই খাদ্যশক্তির প্রধান উৎস এবং প্রোটিনের সঙ্গে একসঙ্গে খেতে হবে। সুতরাং খাদ্যশক্তির জন্য প্রোটিন ব্যবহূত হবে না। বেশি প্রোটিনমুক্ত শ্বেতসার এবং কম ইলেকট্রলাইট সাপ্লিমেন্ট করলে বেশি পরিমাণে খাদ্যশক্তি বাড়ে।

প্রোটিনঃ প্রোটিন ০.৬ গ্রাম শরীরের প্রতি কেজি আদর্শ ওজনের জন্য দিলে নাইট্রোজেন ভারসাম্য ভালো হয় এবং যাদের ডায়ালাইসিস হয়নি, তারা এর চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ করলে শরীর শুকিয়ে যায়। কম প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারযুক্ত (২৫ গ্রামের কম) এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড এবং কিটোসিড দিলে কিডনি ফেইলুর রোগীদের নাইট্রোজেন ব্যালেন্স ভালো হয়। হিমোডায়ালাইসিসের রোগীকে ১.০ গ্রাম প্রোটিন প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য দিতে হবে, হিমোডায়ালাইসিসে ক্ষতি হওয়া প্রোটিন মেটানোর জন্য।

তেল বা চর্বিঃ ক্রনিক কিডনি ফেইলুরে সাধারণত লিপিড প্রোফাইল বাড়ে। সুতরাং ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রাখতে হবে এবং পলিআনসেচুরেটেড তেল বেশি দিতে হবে।

 

পটাশিয়ামঃ অতিরিক্ত বা কম পটাশিয়াম দুইটাই রোগীর জন্য খারাপ। ক্রনিক কিডনি ফেইলুরে সাধারণত পটাশিয়াম বৃদ্ধি পায়। ডায়ালাইসিস হয়নি এমন রোগীদের ১৫০০ মিলিগ্রাম থেকে ২০০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম দিতে হবে। হিমোডায়ালাইসিস রোগীকে দিতে হবে ২৭০০ মিলিগ্রাম এবং পেরিটনিয়েল ডায়ালাইসিস হলে ৩০০০ মিলিগ্রাম থেকে ৩৫০০ মিলিগ্রাম।

সোডিয়ামঃ শরীরে রস, উচ্চরক্তচাপ ও হার্ট ফেইলুরের কারণে লবণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ডায়ালাইসিস হয়নি এমন উচ্চরক্তচাপসম্পন্ন রোগীকে এক গ্রাম সোডিয়াম দৈনিক দেওয়া যেতে পারে। তবে সোডিয়ামের অভাব থাকলে দুই গ্রাম দৈনিক দিতে হবে। হিমোডায়ালাইসিস রোগীদের দৈনিক ১.০ থেকে ১.৫ গ্রাম দরকার আর পেরিটনিয়েল ডায়ালাইসিস রোগীদের ২.০ থেকে ৩.০ গ্রাম। অনবরত চলমান ডায়ালাইসিস রোগীদের সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণ করার দরকার নেই। তবে রক্তচাপ কম হলে সোডিয়াম দিতে হবে।

ক্যালসিয়ামঃ কিডনি ফেইলুরে সাধারণত ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যায় এবং কিডনির ক্ষতি হয়। সাধারণত প্রোটিন ও ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার সীমিত করার কারণে ক্যালসিয়ামও কমে যায়। সেরাম ক্যালসিয়াম লেবেল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং এটা সাপ্লিমেন্ট করতে হবে ও স্বাভাবিক মাত্রায় আনতে হবে।

ট্রেস খনিজঃ শুধুমাত্র খাদ্যে আয়রন এবং ট্রেস মিনারেলসের চাহিদা মিটাতে পারে না। সুতরাং খনিজ সাপ্লিমেন্ট করতে হবে। কিডনি ফেইলুরে খাওয়ার অরুচি হয়। সে ক্ষেত্রে জিংক সাল্লিমেন্ট করলে রুচির পরিবর্তন ঘটে।

ভিটামিনসঃ ডায়ালাইসিসের সময় ভিটামিন ‘সি’ ও ‘বি’ ভিটামিন শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এই ভিটামিনগুলো কম খাওয়া হয়। কারণ কাঁচা শাকসবজি সীমিত করা হয় এবং খাদ্য অনেক পানির মধ্যে পাক করা হয় পটাশিয়ামের মাত্রা কমানোর জন্য। ফলিক এসিড এবং পাইরিডক্সিনের প্রয়োজনও বেশি হয় অন্যান্য ওষুধের বিপরীত কার্যকরতার জন্য। ভিটামিন ডি-এর বিপাক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে, কারণ ফেইলুর হওয়া কিডনি ভিটামিন ডিকে অ্যাকটিভ ফর্মে নিতে পারে না। সুতরাং সব ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট করতে হয়।

কিডনি রোগীরা যা খাবেন নাঃ

  • পানি খেতে হবে পরিমিত। প্রতিদিনের পস্রাবের পরিমানের ওপর নির্ভর করবে কতটুকু পানি রোগী খেতে পারবেন।
  • কিডনি রোগী মাছ, মাংস, দুধ, ডিম প্রভৃতি প্রাণীজ আমিষ সীমিত পরিমাণে খাবেন। রোগীর রক্তের ক্রিয়েটিনিন, শরীরের ওজন, ডায়ালাইসিস করেন কিনা, করলে সপ্তাহে কয়টা করেন তার ওপর নির্ভর করবে প্রতিদিন কত গ্রাম প্রোটিন খাবেন তার পরিমাণ।
  • উদ্ভিজ প্রোটিন বা দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিন যেমন-ডাল, মটরশুটি, সিমেরবীচি যে কোন বীচি ডায়েট চার্টে থাকবে না।
  • যে সমস্ত- সবজি খাবেননাঃ ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, ঢেঁড়শ, শিম, বরবর্টি, কাঠালের বীচি, শীমের বীচি, মিষ্টি কুমড়ার বীচি, কচু, মূলা এবং পালং, পুঁইশাক ইত্যাদি।

পানিঃ ক্রনিক কিডনি ফেইলুরে পানি গ্রহণ নিবিড়ভাবে মনিটর করতে হবে। যদি উচ্চরক্তচাপ বা ইডিমা না থাকে, তবে দৈনিক ৫০০ মিলিলিটার যোগ (+) যে পরিমাণ প্রস্রাব হয়, তা দিতে হবে। দেড় থেকে তিন লিটার পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে। ডায়ালাইসিস হওয়া রোগীর ওজন দৈনিক এক পাউন্ড পর্যন্ত বাড়তে দেওয়া যেতে পারে।

  • ফলের ক্ষেত্রেও আছে নানান রকম নিষেধাজ্ঞা। প্রায় সব ফলেই সোডিয়াম পটাশিয়ামের আধিক্য আছে বলে কিডনি রোগীদের জন্য ফল খাওয়া একটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। বিশেষ করে আঙ্গুর, কলা, ডাবের পানি। অল্প পরিমাণে আপেল এবং পেয়ারা তুলনামূলক নিরাপদ।

মেনে চলুন এই সুস্থতা বিষয়ক বটিকাগুলো। সুস্থ দেহ, সুস্থ মন তখন আর তাহলে খুব বেশি দুরের জিনিস মনে হবে না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version