মাঈনুল ইসলাম নাসিম : অস্ট্রেলিয়ার বাজারে বাংলাদেশী পন্যের চাহিদা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশাল এই দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানী বানিজ্যও অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে অতি সম্প্রতি। সদ্য শেষ হওয়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশের রপ্তানী বানিজ্যের লক্ষমাত্রা অর্জিত হবার পাশাপাশি ২২ শতাংশ বেশি বানিজ্যের সুসংবাদটি জানালেন ক্যানবেরাতে দায়িত্বরত বাংলাদেশের হাইকমিশনার কাজী ইমতিয়াজ হোসেন। এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নানান বিষয়াদি নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি। ক্যানবেরাস্থ হাইকমিশন থেকে থেকে নিউজিল্যান্ড এবং ফিজিরও দায়িত্ব পালন করছেন এই জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক।
হাইকমিশনার কাজী ইমতিয়াজ হোসেন জানান, “বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই আমাদের দু’দেশের মধ্যকার বাইল্যাটেরাল ট্রেড এক বিলিয়ন ইউএস ডলারের অধিক পরিমাণ। ট্রেড ব্যালেন্স যদিও অস্ট্রেলিয়ার সামান্য অনুকূলে তথাপি গত অর্থবছরে প্রায় ৬শ’ মিলিয়ন ইউএস ডলারের সমপরিমাণ পন্য আমরা বাংলাদেশ থেকে এখানে রপ্তানী করতে সক্ষম হয়েছি, যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বাইরে আমাদের যতগুলো মিশন রয়েছে তাদের সবাইকে প্রতি অর্থবছরে যে টার্গেট দেয়া হয় তার মধ্যে আমাদের ক্যানবেরা হাইকমিশন তথা অস্ট্রেলিয়াই একমাত্র দেশ যেখানে যেখানে লক্ষমাত্রার তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি এক্সপোর্ট হয়েছে”।
অভিজ্ঞ কূটনীতিক কাজী ইমতিয়াজ হোসেন আরো বলেন, “বাংলাদেশের বিজনেস সেক্টরে যাঁরা আছেন উদ্যোক্তা এবং রপ্তানীকারক হিসেবে, সব কৃতিত্ব মূলতঃ তাঁদেরই। তবে রপ্তানী বানিজ্যের এই অভাবনীয় সাফল্যের পথ পরিক্রমায় তাঁদেরকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য যা যা করণীয়, আমাদের হাইকমিশনের তরফ থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যথাসময়ে সবকিছুই করা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই অস্ট্রেলিয়াতে আমাদের রপ্তানী বানিজ্য ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আজকের এই ‘রেকর্ড ব্রেক’ অগ্রগতি ক্যানবেরা মিশনের জন্য তৃপ্তির বিষয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এখানকার মার্কেটের প্রতি আগে আমাদের ততোটা মনোযোগ ছিল না, যতটা ছিল নর্থ আমেরিকা ও ইউরোপের প্রতি। মাত্র ৫ বছর আগের কথাই ধরা যাক। ২০০৯-১০ অর্থবছরে অস্ট্রেলিয়াতে আমাদের এক্সপোর্ট ছিল মাত্র ১১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার”।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০৩ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার বাজারে ‘ডিউটি এন্ড কোটা ফ্রি’ সুবিধা পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানীর সিংহভাগ যথারীতি আরএমজি তথা রেডিমেইড গার্মেন্টস। এছাড়া বোনা কাপড়, নীটওয়্যার, টেক্সটাইল ম্যানুফেকচারার্স, হোম টেক্সটাইল, চামড়াজাত পন্য ও জুতা, প্রক্রিয়াজাত খাবার, মাছ ও পাটজাত পন্য অস্ট্রেলিয়াতে রপ্তানী করে আসছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে যাচ্ছে গম, ভেজিটেবল, ডাল, মিল্ক ক্রিম সহ অন্যান্য ডেইরি প্রোডাক্ট, কটন, সার, তৈল বীজ, প্লাস্টিক দ্রব্যাদি, মেশিনারি এন্ড ট্রান্সপোর্ট ইকুইপমেন্ট, স্ক্রেপ এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিভিন্ন কাঁচামাল। গত অর্থবছরে অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশের এই আমদানীর পরিমাণ প্রায় ৫শ’ মিলিয়ন ইউএস ডলার ছিল বলে জানান হাইকমিশনার।