মাঈনুল ইসলাম নাসিম : সৌদি আরবের পর ইতালীর শ্রমবাজার নিয়েও এবার জঘন্য মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বাংলাদেশ থেকে মৌসুমী শ্রমিক নিতে আগ্রহী এবং বাংলাদেশের অনুরোধে কৃষি সহ বিভিন্ন খাতে শ্রমিক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইতালী – এমন তথ্যের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি ইতালীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অফিসিয়াল প্রেসনোটে এবং দেশটির শ্রম মন্ত্রনালয়ের অফিসিয়ালদের সাথে কথা বলে। গেল সপ্তাহে ইতালীর উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেনেদেত্তো দেল্লা ভেদোভা’র ঢাকা সফর শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের (ফার্নেসিনা) ওয়েবসাইটে ২০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রেসনোটে তাঁর ঢাকা সফরের গুরুত্ববহ বিষয়াদি তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশের শ্রমমন্ত্রী ঢাকার সাংবাদিকদের যেভাবে ব্রিফ করেছেন, শিগগিরই কোন্ খাতে কত কর্মী প্রয়োজন তা জানিয়ে প্রস্তাব দেবে ইতালী – এমন তথ্য সত্য নয় বলেই জানা গেছে ইতালীর সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে ক্রসচেক-ডাবলচেকের মাধ্যমে। ফার্নেসিনার বিশ্বস্ত সূত্র জানাচ্ছে, প্রথমতঃ বাংলাদেশ থেকে মৌসুমী শ্রমিকের সন্ধানে ঢাকায় যাননি উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেনেদেত্তো দেল্লা ভেদোভা এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফের সাথে তাঁর বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কোন প্রতিশ্রুতিও তিনি দেননি। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের মন্ত্রী তাঁকে প্রস্তাব দিয়েছেন চাহিদা মোতাবেক সরকারীভাবে শ্রমিক প্রেরণের এবং সৌজন্যের খাতিরে ইতালীয় উপ-মন্ত্রীও তাকে বলেছেন, রোমে ফিরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও দফতরকে তিনি বিষয়টি জানাবেন।
‘সিজনাল জব’ তথা মৌসুমী কাজের ভিসায় ইতালীতে গত ৩ বছর ধরে ব্ল্যাকলিস্টে থাকা বাংলাদেশ থেকে নতুন করে শ্রমিক নেয়ার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবেও কোন প্রকার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়নি – ইতালীর শ্রম মন্ত্রনালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রও এমনটাই নিশ্চিত করেছে এই প্রতিবেদককে। প্রসঙ্গতঃ কালো তালিকাভুক্ত হবার আগ পর্যন্ত ২০০৮ থেকে ২০১২ এই ৫ বছরে মৌসুমী ভিসায় প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশী ইতালীতে এলেও মৌসুম শেষে ফেরত যান হাতে গোনা মাত্র ৫১ জন। অর্থাৎ উক্ত ৫১ জন বাদে বাকি হাজার হাজার বাংলাদেশী দেশটির আইন অমান্য করেন এবং পাশ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যান। ফলে যৌক্তিক কারণেই ‘ব্ল্যাকলিস্টেড’ হয়ে যায় বাংলাদেশ।
বর্তমানে ইতালীতে বসবাসরত প্রায় ২ লক্ষ বাংলাদেশীর মধ্যে অর্ধেকই অবেধ। অবৈধদের বৈধ করার আশু কোন সম্ভাবনাও নেই। ইতালীয় শ্রম মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, “এমনিতেই আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এখানে বসবাসরত বৈধ-অবৈধ হাজার হাজার বেকার বাংলাদেশীদের নিয়ে। সিজনাল শ্রমিকদের বিষয়টি যদিও আলাদা কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সহ আমরা খুব ভালো করেই জানি যে, মৌসুমী ভিসায় অতীতে যারা এসেছে বাংলাদেশ থেকে তাদের সিংহভাগই ইউরোপের অন্যান্য দেশে পাড়ি জমাতে ইতালীকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করেছিল”। বাংলাদেশ থেকে নতুন করে মৌসুমী শ্রমিক নিতে ইতালীর আগ্রহ সংক্রান্ত যে কোন খবরকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন রোম ও মিলানের একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকর্তারাও। ঢাকার সরকারী দায়িত্বশীল পর্যায়ে থেকে ‘মিথ্যা তথ্য’ মিডিয়াতে প্রচার না করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
এদিকে ইতালীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, গত বছর অক্টোবরে বানিজ্যিক রাজধানী মিলানে অনুষ্ঠিত ‘আসেম’ সামিটে ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজি’র সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক এবং দু’দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই ঢাকা সফর করেন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেনেদেত্তো দেল্লা ভেদোভা। মিয়ানমার সফর শেষ করে রোম ফেরার পথে ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছাড়াও বৈঠক করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শ্রমমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সাথে।
ফার্নেসিনার প্রেসনোটে জানানো হয়, ঢাকা সফরকালে নোবেল বিজয়ী বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ মুহম্মদ ইউনুসের সাথেও ফলপ্রসু বৈঠক করেন ইতালীয় উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যাতে স্থান পায় বাংলাদেশ সহ এতদঞ্চলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন ইস্যু। বাংলাদেশে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছে ইতালী – দেশটির এমন সুষ্পষ্ট মনোভাব ঢাকার সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত না হলেও ইতালীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রেসনোটে তা সুষ্পষ্টভাবে জানান দেয়া হয়েছে। ফার্নেসিনার এতদসংক্রান্ত লিংকটি নিম্নে সন্নিবেশিত হল – এখানে ক্লিক করুন।
উল্লেখ্য ইতালি ও ইউরোপের মাইগ্রেশন থেকে শুরু করে যেকোনো বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে আপনারা সরাসরি আমিওপারি টিম এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আর আমাদের সাথে যোগাযোগ করার বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আর যারা আপনাদের ফেসবুকে আমিওপারির প্রতিটি লেখা পেতে চান তারা এখানে ক্লিক করে আমাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে আমিওপারিতে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা আপনার ফেসবুক নিউজ ফিডে পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।