• u. Nov ২১, ২০২৪

আমিওপারি ডট কম

ইতালি,ইউরোপের ভিসা,ইম্মিগ্রেসন,স্টুডেন্ট ভিসা,ইউরোপে উচ্চ শিক্ষা

ইতালি থেকে ব্রিটেনে আসা বাংলাদেশীরা!

ByLesar

Oct 18, 2014

বাংলাদেশী যেসব অভিবাসী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তাদের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে এক নতুন প্রবণতা। এদের অনেকেই এখন দেশ বদল করে ইংল্যান্ডে – বিশেষ করে লন্ডনে চলে আসছেন।ইউরোপের বিভিন্ন দেশেই এখন বেশ বড় সংখ্যায় বাংলাদেশী অভিবাসী বসবাস করছেন। গত দু দশকে ইটালি, জার্মানী, ফ্রান্স, গ্রীস, অস্ট্রিয়া, স্পেন বা পর্তুগালে বেশ বড় বাংলাদেশী কমিউনিটি গড়ে উঠেছে।কিন্তু এখন এদের অনেকেই পাড়ি জমাচ্ছেন ব্রিটেনে। তারা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ইউরোপে চাকরিবাকরির অভাব, সন্তানদের ইংরেজি শেখানোর আকাঙ্খা, আর নিজস্ব সংস্কৃতির মধ্যে তাদের বড় করার ইচ্ছা – এমনি নানা কারণ এই ঠিকানা বদলের পেছনে কাজ করেছে।

কিন্তু ব্রিটেনে এসে সেই আকাঙ্খার কতটা পূরণ হচ্ছে তাদের? ইতালি থেকে লন্ডনে আসা এমনি কিছু পরিবারের সাথে কথা বলেছিলাম আমি।পূর্ব লন্ডনের ফরেস্ট গেট এলাকায় এক পূর্ব পরিচিতের বাড়িতে দেখা পেলাম ইটালির মিলান থেকে আসা খালিদ নূরের। ইতালি থেকে আজই লন্ডনে এসে এখানে উঠেছেন তিনি।তিনি ইটালিতে ছিলেন ২৪ বছর। কিন্তু এখন খালিদ নূর ভাবছেন, পরিবার নিয়ে ব্রিটেনে চলে আসবেন কিনা। সেজন্যই লন্ডনে আসা, উদ্দেশ্য – স্থায়ীভাবে আসার আগে লন্ডনের হালচাল একটু জেনে নেয়া।

গত ১০ বছরে এরকম শত শত বাংলাদেশী পরিবার ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছেন ইউরোপের নানা দেশ থেকে। কেউ ইতালি থেকে, কেউ জার্মানি, কেউ ফ্রান্স, কেউ গ্রীস এমন কি অস্ট্রিয়া থেকেও অনেকে এসেছেন।এরা দেড় দু’দশক আগে বৈধ-অবৈধ নানা পথে ইউরোপের নানা দেশে এসেছিলেন উন্নত জীবনের আশায়। এর পর নানা রকমের কাজ করে টাকাপয়সা জমিয়েছেন, এক সময় স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন।তবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নাগরিকত্ব পাবার পর এদের অনেকেই আবার ইংল্যান্ডে চলে আসছেন দ্বিতীয়বার দেশ বদল করে।

কেন?……. প্রায় পাঁচ বছর আগে ইতালি থেকে লন্ডনে আসা ফরহাদ খান বলছিলেন, ইতালিতে তাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করলে তারা ইংরেজি শিখবে না, উচ্চশিক্ষার সুযোগও সীমিত। মি. খান মনে করেন, তারা সবসময়ই চেয়েছেন ছেলেমেয়েদের ইংরেজি ভাষায় শিক্ষিত করতে, তা না হলে তারা কেরিয়ারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে বলে তাদের ধারণা।

ফরহাদ খানের সাথে যেদিন কথা হচ্ছিল – সেদিনই তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। তিনি বলছিলেন, ইতালিতে থাকলে এটা হয়তো নাও হতে পারতো। কারণ সেখানকার রীতি অনুযায়ী বেশীর ভাগ ছেলেমেয়েই হাইস্কুল শেষ করেই চাকরিজীবনে ঢুকে পড়ে। তা ছাড়া উচ্চশিক্ষা সেখানে অত্যন্ত ব্যয়বহুল।কথা হচ্ছিল ইতালি থেকে আসা বাংলাদেশী আরেকটি পরিবারের গৃহিণী মনিকার সাথে। তিনি বলছিলেন, তার আজীবন স্বপ্ন ছিল বিদেশে থাকলে কোন ইংরেজীভাষী দেশেই থাকবেন। দীর্ঘ দিন ইতালি থাকলেও সেখানে তার মন বসেনি, ইংল্যান্ডে এসে তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

আরেকটা কারণের কথা প্রায় সবাই বলছেন। ছেলেমেয়েদের নিজ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মূল্যবোধের মধ্যে বড় করা – ধর্মীয় শিক্ষা, আরবি শিক্ষা, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া – এসবের সুযোগ ব্রিটেনে বেশি। ব্রিটেনে আসার এটাও একটা বড় কারণ তাদের কাছে।

ইতালি থেকে ঠিক কত বাংলাদেশী ব্রিটেনে এসেছেন তা বের করা খুব কঠিন।

একটি সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায় এ ২০১৩-র মার্চ থেকে এবছর মার্চ পর্যন্ত এক বছরের মধ্যেই ইতালি থেকে আসা মোট ৯ হাজার অভিবাসী ব্রিটেনের জাতীয় বীমার জন্য নিবন্ধন করিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যে কতজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তা জানা যায় না।

তবে এটা স্পষ্ট যে ইতালি বা ইউরোপের অনেক দেশের বাংলাদেশী-রা যখনই ওই সব দেশের পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেন -তখনই তারা পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোন দেশে গিয়ে থাকার অধিকার পাচ্ছেন , এবং সেই সুত্রেই তাদের মধ্যে ব্রিটেনে আসার হিড়িক পড়েছে।

লন্ডনে সরকারি অভিবাসী কল্যাণ কাউন্সিলের পরিচালক হাবীবুর রহমান বলছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংবিধানে ইইউভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের অবাধ চলাচলের অধিকার দেয়া হয়েছে। এই সুযোগ ইউরোপের সবার জন্য। ইউরোপের নানা দেশের লোকেরা যেমন ব্রিটেনে আসতে পারেন, তেমনি ব্রিটেনের বহু লোকই এখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

তবে ইউরোপ থেকে এই অভিবাসীদের ব্রিটেনে চলে আসার হিড়িক ইতিমধ্যেই ব্রিটেনের রাজনীতিতে এক বিরাট ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত নির্বাচনে ইমিগ্রেশনকে কেন্দ্র করে লেবার পার্টি হেরেছে, অতিসম্প্রতি ইমিগ্রেশনবিরোধী ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি বা ইউকিপের উত্থান সব বড় বড় পার্টিকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

ইমিগ্রেশনবিোধী মনোভাবের ব্রিটিশরা মনে করে অভিবাসীরা তাদের কাজের সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে, বা কোন কাজ না করে সরকারি ভাতায় আরাম আয়েশে জীবন কাটাচ্ছে । এর ফলে কনসারভেটিভ পার্টি ক্ষমতায় এসেই সবরকম সরকারি ভাতায় কাটছাঁট করতে শুরু করেছে।বলা বাহুল্য কাজ না করে বেনেফিটসের ওপর জীবনযাপন করা – এ অভিযোগ বাংলাদেশী অভিবাসীদের বিরুদ্ধেও অনেকে করেন।তবে যাদের সাথে আমার কথা হয়েছে তারা এ অভিযোগ স্বীকার করেন না। বলেন, সরকারি যে ভাতা তারা পান তাতে সংসার চলে না, সবাইকেই কিছু না কিছু কাজ করতেই হয়।

কথা হচ্ছিল ইলফোর্ড এলাকার আবদুল হাইয়ের সাথে – তিনি একসাথে দুটো চাকরি করছেন।তিনি বলছিলেন, এমন ধারণা নিয়ে ইউরোপ থেকে অনেকে বাংলাদেশী এসে থাকতে পারেন। এটা ঠিক যে এখানে একজনের চাকরি না থাকলেও একেবারে পথে বসতে হয় না, সরকারি ভাতার ওপর টিকে থাকা যায়। ইতালিতে সে সুযোগ এখন আর নেই।কিন্তু ব্রিটেনে জীবনযাত্রার ব্যয় অত্যন্ত বেশি বলে শুধু সরকারি ভাতার ওপর নির্ভর করে জীবনধারণ করা কঠিন।

বিবিসির হোম এফেয়ার্স এডিটর মার্ক ইস্টন বলছেন, সরকার ইমিগ্রেশন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, আর রাজনীতিতেও এটা এক নম্বর ইস্যু হয়ে উঠেছে। তাই সরকারি ভাতায় কাটছাঁট আরো হবে।”কেউ কেউ হয়তো ভাতার ওপর নির্ভর করে থাকছেন – তবে এর সংখ্যা অতি নগণ্য। আর যারা এর আকর্ষণে ব্রিটেনে আসার কথা ভাবছেন – তাদের এটা জানা দরকার যে ইতিমধ্যেই সরকারি ভাতার নিয়মকানুন কঠোর করা হয়েছে এবং তা আরো কাটছাট হবে – যার ফলে বেকার থাকাটা লাভজনক থাকবে না।”সুতরাং এমনটা হতেই পারে যে ইউরোপ থেকে ব্রিটেনে আসা অভিবাসীদের জন্য সামনে সময় আরো কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

আবদুল হাই বলছিলেন, এ কারণে অনেক বাংলাদেশী ব্রিটেনে কিছু দিন থেকে আবার ইতালি ফিরেও গেছেন।খালিদ নূর অবশ্য এখনো ফিরে যাবার কথা ভাবছেন না। তিনি কিছুদিন থেকে ভালো করে বুঝতে চান লন্ডনে চলে আসাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে কিনা।তবে তাদের সাথে কথা বলে বুঝেছি যে ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, গ্রিস – এরকম অনেকগুলো দেশের বাংলাদেশী অভিবাসীরা অপেক্ষায় আছেন – তাদের পাসপোর্ট হলেই ব্রিটেনে চলে আসবেন।তবে ততদিনে ব্রিটেনের পরিস্থিতি তাদের স্বপ্ন পূরণের অনুকুল থাকবে কিনা তা বলা সত্যি কঠিন। সুত্রঃ বিবিসি

আর যারা আপনাদের ফেসবুকে আমাদের সাইটের প্রতিটি লেখা পেতে চান তারা এখানে ক্লিক করে আমাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন।তাহলে আমিওপারিতে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা আপনার ফেসবুক নিউজ ফিডে পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।

Lesar

আমিওপারি নিয়ে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত একজন সাধারণ মানুষ। যদি কোন বিশেষ প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে ফেসবুকে পাবেন এই লিঙ্কে https://www.facebook.com/lesar.hm

২ thoughts on “ইতালি থেকে ব্রিটেনে আসা বাংলাদেশীরা!”
  1. অসংখ্য ধন্যবাদ। বাংলা ভাষায় প্রথিবীতে এ ধরণের কোন ওয়েব সাইট নাই। শুধু তাই না, কোন রকম বিনিময় ছাড়া, ফ্রি উপদেশ, নির্দেশ, করণীয় এবং অনেক সাহায্য পাই এ ওয়েব পর্টাল থেকে।
    ওয়েব সাইটের গেটআপ আরও উন্নত হলে ভাল হতো।

    1. জি আমরা চেষ্টা করছি। আসলে এই পোর্টাল এর সকলেই প্রবাসে বসবাস করে এবং সবাই নিজ নিজ কাজের ফাকে ফাকে আপনাদের জন্য বিভিন্ন ধরণের সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে। তাই আমাদের অনেক কিছুর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও করে উঠতে পারি না। তাই এর জন্য আমাদের আরও সময়ের প্রয়োজন। ধন্যবাদ আপনার মতামত জানানোর জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version