মাঈনুল ইসলাম নাসিম : এথেন্সে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন অভিযোগ এনে উভয় সংকটে নিপতিত হয়েছেন লায়লা এন্টিপাস। জনরোষের শিকার হবার আশংকায় গ্রীক পাসপোর্টধারী এই বাংলাদেশি নারী এখন রীতিমতো দুর্বিসহ দিনাতিপাত করছেন। কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ বলছেন, দূতাবাসকে দুর্নীতিমুক্ত করতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত যে দালাল সিন্ডিকেটের বিরাগভাজন হয়েছেন, তারাই নগদ অর্থ ধরিয়ে দেবার পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখিয়ে লায়লাকে বাধ্য করেছে আইওএম-এর নাম ভাঙিয়ে মিথ্যা অভিযোগনামা দায়ের করতে।
ইমিগ্রেশন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর গ্রীস ইউনিটে লায়লা সামান্য দোভাষির কাজ করলেও ঢাকার কয়েকটি পত্র-পত্রিকায় তাঁকে ঐ সংস্থার কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করায় যাঁরা তাকে এই কাজটি দিয়েছেন তাঁরা যারপরনাই বিব্রত হয়েছেন। এদিকে ২০০৯ সালে দূতাবাস প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অবধি গ্রীসে যা কিছু ঘটেছে তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ তদন্ত টিম এখন রাজধানী এথেন্সে অবস্থান করছে।
মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম এফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান, রিয়ার এডমিরাল (অব) খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি শনিবার সন্ধ্যায় এথেন্সে এসে পৌঁছে। টিমের অন্য ২ জন হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক আবদুস সবুর মন্ডল এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এডমিনিস্ট্রেশন উইংয়ের পরিচালক কাজী আনারকলি। গ্রীসে ৫ দিন অবস্থানকালে তাঁরা গত ৫ বছরের যাবতীয় অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা নেয়ার চেষ্টা করবেন। রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে আইওএম-এর দোভাষী লায়লা এন্টিপাসের করা অভিযোগও খতিয়ে দেখবে তদন্ত টিম।
তবে ঢাকা থেকে প্রতিনিধিদল আসার খবর কয়েকদিন আগে এথেন্সে জানাজানি হবার পর থেকেই অনেকটা গা ঢাকা দিয়েছেন লায়লা। খুব বেশি কাছের ও বিশ্বস্ত কয়েকজন ব্যতিত কারো ফোনই ধরছেন না। দিনের বেশির ভাগ সময় তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে, মাঝে মধ্যে অন করলেও কল রিসিভ করেননি লায়লা। জনরোষ এড়াতে নিজে থেকেই এড়িয়ে চলছেন অনেককে। তদন্ত টিমের সামনে হাজির হয়ে মুখে কিছু কথা বলা ব্যতিত লায়লা কোন তথ্য-প্রমাণ বা স্বাক্ষী এমনকি ন্যূনতম কোন আলামত উপস্থাপন করতে পারছেন না, এমন অস্থিরতায় নাজুক সময় অতিবাহিত করছেন এখন।
দু’একজন যারা অনেক চেষ্টা করে লায়লার সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছেন তারা তার মানসিক অস্থিরতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এই প্রতিবেদককে। একদিকে দালাল সিন্ডিকেট চক্রের প্রবল চাপ, অন্যদিকে দায়ের করা অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে অস্তিত্ব সংকটের পাশাপাশি আইওএম-এর দোভাষির কাজটি হারাবার সাথে সাথে এথেন্সে আরো অনেক কিছুই অপেক্ষা করছে তার জন্য, এমন আশংকায় লায়লার এখন নাভিশ্বাস।
গ্রীসের বাংলাদেশ কমিউনিটির শীর্ষ নেতৃত্ব, যাঁর মাধ্যমে লায়লার সুযোগ হয় আইওএম অফিসে দোভাষীর কাজ নেবার, তিনি শনিবার মুঠোফোনে লায়লার কাছে জানতে চান, আনীত অভিযোগের অনুকূলে কী প্রমাণ আছে তার কাছে। প্রমাণ না দিতে পারলে আইনের মুখোমুখি করা হবে এমনটা তাকে জানানো হলে কোন জবাব না দিয়েই দ্রুত ফোন রেখে দেন লায়লা।
এদিকে একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে মুখরোচক অভিযোগ এনে লাইমলাইটে চলে আসা লায়লার মূল পেশার আদ্যোপান্ত অনুসন্ধানে কেঁচো খুড়তে যেন সাপ বেরিয়ে আসছে। লায়লার অন্ধকার জগতের সব অপকর্মের সরব স্বাক্ষী এথেন্সে বসবাসরত স্বয়ং তার আপন বোন খালেদা। শুধুমাত্র ইউরোপীয় পাসপোর্ট পাবার পথ প্রশস্ত করতে বাবার বয়সি জনৈক গ্রীক নাগরিককে বিয়ে করে ক্ষান্ত হননি লায়লা, দেহব্যবসার এক সুবিন্যস্ত ও সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে আসছেন অত্যন্ত সফলতার সাথে।
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে লায়লা একপর্যায়ে এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেন যে, বোন খালেদাকে জোরপূর্বক দেহব্যবসায় রাজি করাতে না পেরে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেও পিছপা হননি। এনিয়ে অনেক তোলপাড় হয় এথেন্সে। এখানেই শেষ নয়, লেবানন থেকে আসা যেসব বাংলাদেশি মহিলারা এথেন্সে গত কয়েক বছর ধরে অবৈধ দেহব্যবসার সাথে জড়িত, তাদেরকে আইওএম-এর ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্যাশ কমিশন আদায় করে থাকেন লায়লা, বিষয়টি এথেন্সে অনেকেই জানেন।
লায়লার চারিত্রিক বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কমিউনিটির সাবেক এক প্রভাবশালী সভাপতি স্বয়ং। অন্ধকার জগত থেকে কালো টাকা সময়ে সময়ে হাতে এলেও রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ক্ষিপ্ত দালাল সিন্ডিকেটের প্রলোভনের জালে এ যাত্রায় আটকে গিয়ে কঠিন পরীক্ষায় আজ লায়লা এন্টিপাস। পাশ-ফেলও যথারীতি এখন সময়ের ব্যাপার।