ভাইয়া আমার বাসার ম্যাডাম আমাকে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া দেয় না। আটকে রেখে মারপিট করে। বাড়িতে ফোন করতে দেয় না। ফোন করতে গেলে ফোন কেড়ে নেয়। এই জায়গা থেকে উদ্ধার করা না হলে আমি আত্মহত্যা করব।’মোঃ তারা মিয়ার বোন ফোনে কান্নাকাটি করে ওমান থেকে এ রকমই বার্তা দেন শরীয়তপুরের সখিপুর থানার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের বাড়িতে।তারা মিয়া বাংলাদেশি অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বমসা) কাছে দেয়া অভিযোগপত্রে বলেন, তার বোনকে অসত্ উদ্দেশ্যে পাচার করে বিদেশে বিক্রি করে দিয়েছে নীলুফা বেগম, খোরশেদ আলম ও সিরাজুর নামের দালালরা। তার ছোট বোন লিজা (ছদ্মনাম) হাউসম্যাট হিসেবে ওমানে যান ১ জুলাই ২০১১ সালে। ৬০ হাজার টাকা খরচ করে তার বোন সেখানে যায়।তিনি মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ প্রবাসীকল্যাণ সোসাইটির (বিপিকেএস) কাছে এই লিখিত অভিযোগ করেন। সোসাইটির কাছে তার বোনকে উদ্ধারের আবেদন করেন তিনি। তাদের সহযোগিতায় দেশে ফিরে এসেছেন লিজা।
আরেক তরুণী যশোর কোতোয়ালি থানার ফরিদপুর গ্রামের। স্বামীর ঘর করা হয়নি। ৪০ হাজার টাকা খরচ করে বাহরাইনে যান। তার স্বামীর অভিযোগ, তিনি জানতেন না তার স্ত্রী বিদেশ চলে যাচ্ছে। বিমানে ওঠার একদিন আগে তিনি জানতে পারেন। বাহরাইনে গিয়ে তার স্ত্রী জানান, নিয়োগকর্তা তার ওপর শারীরিক নির্যাতন করছে। ঠিকমতো খাবার দিচ্ছে না। যৌন নির্যাতনেরও অভিযোগ রয়েছে তার কণ্ঠে। এরপর বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি সংস্থা বিপিকেএসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি তরুণীটি দেশে ফিরে আসে। জানা যায়, প্রবাসে নারীকর্মীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বাড়ছেই। শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতন চলে তাদের ওপর। যৌন নির্যাতনও চালায় অনেক নিয়োগকর্তা।নির্যাতিত কর্মীরা গড়ে প্রতি মাসে ৩৫টি অভিযোগ করেন বাংলাদেশি অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বমসা) কাছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কাছেও মাসে গড়ে এ ধরনের ১০ থেকে ১২টি অভিযোগ আসছে। এ রকম সমস্যার কারণে বছরে পাঁচ শতাধিক নারীকর্মী দেশে ফেরত আসেন বলে বমসা সূত্রে জানা গেছে।দেশে প্রবাসী নারীকর্মীদের নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি বেসরকারি সংগঠনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা এ তথ্য জানান। নারীকর্মীদের ওপর বেশি নির্যাতনের অভিযোগ আসে দুবাই, লেবানন, ওমান, জর্ডান, বাহরাইন ও সৌদি আরব থেকে।
এ ব্যাপারে বিএমইটি পরিচালক আবদুল লতিফ খান প্রবাসে নারীকর্মীদের এ ধরনের অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, অনেক সময় আমাদের দূতাবাস তাদের সেভ হোমে নিয়ে আসে। ক্ষেত্রবিশেষে দেশে ফেরতও আনা হয়। দূতাবাসকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া আছে।বমসার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শেখ রোমানা। মালয়েশিয়া থেকে নিজেই ১৯৯৮ সালে দেশে ফিরে এসেছেন। তিনি বললেন, ‘মানুষ হিসেবে বিদেশি মালিকরা মোটেই গণ্য করেন না নারীকর্মীদের। নির্যাতন চালান। ঠিকমতো বেতন দেন না। যৌন নির্যাতনও চালায় কোনো কোনো নিয়োগকর্তা। নারীকর্মীরা দেশে-বিদেশে দুই জায়গাতেই দালালদের খপ্পরে পড়ে। আবার নারীকর্মীদের বিদেশে ভাষাগত সমস্যায় পড়তে হয়। শিক্ষার অভাবে তারা দালাল ও নিয়োগকর্তার মাধ্যমে শোষিত হন।’বিপিকেএসের নির্বাহী পরিচালক হারুনুর রশীদ বলেন, ‘প্রবাসে টাকা রোজগার করতে গিয়ে একজন নারীকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়ে ব্যথিত চিত্তে দেশে ফিরে আসেন। তা ভোলার মতো নয়।’বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১২ সালে ৩৭ হাজার ৩০৬ নারীকর্মী বিদেশে গিয়েছে। তার আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ৫৭৯ জন। ১৯৯১ থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত মোট দুই লাখ ৪৬ হাজার ৯১৩ নারীকর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যান। চলতি বছর গেছেন ২৭ হাজার ৫১ জন। তবে বিএমইটির কাছে ফেরত আসা কর্মীদের হিসাব নেই বলে জানান মহাপরিচালক বেগম শামছুন নাহার।
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে এই লেখায় ক্লিক করে জানুন এবং তুলে ধরুন। নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। আর আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে রয়েছে অনেক মজার মজার সব ভিডিও সহ আরো অনেক মজার মজার টিপস তাই এগুলো থেকে বঞ্চিত হতে না চাইলে এক্ষনি আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে লাইক দিয়ে আসুন। এবং আপনি এখন থেকে প্রবাস জীবনে আমাদের সাইটের মাধ্যমে আপনার যেকোনো বেক্তিগত জিনিসের ক্রয়/বিক্রয় সহ সকল ধরনের বিজ্ঞাপন ফ্রিতে দিতে পাড়বেন। ]]