রসুনের গুণাগুণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখন ল্যাবরেটরীর টেস্টটিউব বা পরীক্ষানলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। জগৎ জোড়া এখন রসুনের জয়কয়কার। রসুনকে ‘বিস্ময়কর ওষুধ’ বলা হয়। আর এই রসুনে রয়েছে একশরও বেশি রাসায়নিক উপাদান। এতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি-ভাইরাল, এন্টি ফাংগাল এবং এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৬০০ গ্রাম রসুন খেলে রক্তে কোলেস্টরলের পরিমাণ উল্লেখ্যযোগ্য মাত্রায় কমে যায়।
রসুন ইনফেকশন ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। মুখের আঁচিল বা ত্বকের যত্নে রসুন খুবই উপকারী। রসুনে রয়েছে কাম-উদ্দীপক উপাদান। এটি রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক রাখে। রসুন ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক রাখে। রক্তে সুগারের পরিমাণও নিয়ন্ত্রণ করে রসুন। এটি দাঁতের ব্যথাও নিরাময় করে থাকে।
১৯৯০ সালের দিকে আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের ডক্টর জুডিথ ডস এবং আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ডাঃ ড্যানিয়েল নিক্সন-এর নিবন্ধ প্রকাশ পেয়েছিল।
অবশ্য এরা তাদের গবেষণা নিবন্ধের সঙ্গে অন্যান্য আরো বিজ্ঞানীর এ সম্বন্ধে অতীতের গবেষণার একশটি নিবন্ধের উলেখ করেছিলেন, যেখানে সেসব বিজ্ঞানী ও ক্যান্সার রোগী হিসাবে রসুনের গুণাগুণের বর্ণনা করেছিলেন। চল্লিশ বছরের দীর্ঘ সময়ে লেবরেটরী পরীক্ষায় রসুনের গুণাগুণ দেখা হয়েছিলো, ইতর প্রাণীতে এর হিতকরী প্রভাব পড়েছে ক্যান্সার নিরাময়ের ক্ষেত্রে। মানুষের মধ্যে এর পরীক্ষা তত লক্ষ্যণীয় নয়।
১৯৮০ সালে অবশ্য চীন দেশের একটি গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছিলো চীনে যেসব অঞ্চলে লোকজন রসুন বেশি খান (দিনে তিন চতুর্থাংশ আউন্স) পাকস্থলীর ক্যান্সার সেখানে অন্যত্র স্থলের চেয়ে এক দশমাংশ কম।
১৯৮৯ সালে চীন দেশ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট যৌথভাবে গবেষণা করে একই ফলাফল লক্ষ্য করেছেন। পাকস্থলী ক্যান্সারের হারকে লক্ষ্য করেই পরিচালিত হয়েছিলো গবেষণাঃ যেসব অঞ্চলে রসুন, পেঁয়াজ এসব লোকজন বেশি খান এদের মধ্যে পাকস্থলী ক্যান্সারের হার অন্য অঞ্চলের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম।
ডাঃ ড্যানসন ও নিক্সন আরো রিপোর্ট করেছেন, যারা রসুন ও পেঁয়াজ বেশি বেশি খান সেসব জাপানী-হাওয়াইবাসীদের মধ্যে মলাশয়-মলান্দ্র ক্যান্সারের হার কম। বেলজিয়ামে প্রচুর পেঁয়াজ যারা খেয়েছিলেন এদের মধ্যে মলাশয় ও মলান্দ্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কম দেখা গেছে।
এর অনেক আগে ১৯৫৮ সালে ক্লিভল্যান্ডের ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছিলো, রসুনের একটি উপকার এলিসিন’র মত যৌগ উৎপাদন করে একে ইদুরের মধ্যে প্রয়োগ করে ক্যান্সার রোগীর প্রভাব দেখা গিয়েছিলো। ১৯৮৭ সালে ফ্লোরিডা ক্লিনিকের একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছিলো, যেসব লোকজন দিনে দুই থেকে তিন কোয়া রসুন গ্রহণ করেছিলেন নিয়মিত তিন সপ্তাহ, এদের রক্তের শ্বেতকনিকা ন্যাচারাল কিলার সেলের সংখ্যা ও কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছিলো।
প্রাকৃতিক লতাগুল্ম ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন এসব ভেষজ ও খাদ্যদ্রব্য যদি রোগ প্রতিরোধে বড় অবদান রাখার সমতা রাখে, তা হলে এদেরকে অবহেলা করার মধ্যে কোনও যুক্তি নেই। রসুন খেলে মুখে দূর্গন্ধ হতে পারে। কাঁচা রসুন খাওয়া মাকরুহ তানজিহী সেজন্য পাক করে খেতে হয়। রসুন খুব বেশি খেলে কারো পেটে সামান্য ব্যাথা হতে পারে।
রসুন দুদীর্ঘ কাল হতেই ভোজ্য, আহার্য। তাই একে সাদরে গ্রহণে আপত্তি থাকার কথা নয়।
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতে “এখানে ক্লিক করুণ” তুলে ধরুন নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। ]]