মাঈনুল ইসলাম নাসিম : ৭১১ থেকে ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৮শ’ বছর স্পেনে মুসলিম শাসনের বেদনাবিধুর অবসানের এক ভয়াবহ অধ্যায় রচিত হয়েছিল সেদিন পহেলা এপ্রিল। ইসলামের ইতিহাসে স্পেনে মুসলিম শাসন যেমন গৌরবময় তেমনি পতনও ছিল অত্যন্ত শোকাবহ। বিধর্মীদের চক্রান্ত আর নিজেদের অন্তঃকলহে ও ভুলের কারণে মুসলমানরা দেশটি থেকে নির্মূল হয়েছিল অত্যন্ত নির্মমভাবে। ইতিহাসের এই বেদনাবিধুর অধ্যায় রচিত হয়েছিল স্পেনে আরব সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র কর্ডোভা নগরীতে।
এর আগে ইউরোপ যখন ছিল অশিক্ষা-কুশিক্ষা অসভ্যতা আর কুসংস্কারের ভয়ানক অন্ধকারে নিমজ্জিত তখন তারিক বিন জিয়াদের নেতৃত্বে মুসলমানদের স্পেন জয়ের পর জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা-সংস্কৃতি ব্যবসা-বানিজ্য কৃষি-শিল্প শক্তি-ক্ষমতায় ধন-সম্পদে চারু-কারু স্থাপত্য-ভাস্কর্যে তথা সভ্যতার আধুনিক বিকাশের মধ্য দিয়ে মুসলমানরা স্পেনকে রূপ দিয়েছিল পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশে। বিশেষ করে কর্ডোভা ছিল ইউরোপ মহাদেশের সবচাইতে সুপরিকল্পিত ও সুসমৃদ্ধ নগরী।
লন্ডন-প্যারিসের রাস্তায় যখন সরকারী বাতি ছিলনা তখন কর্ডোভার রাস্তা মাইলের পর মাইল আলোকিত থাকতো। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সড়ক-সেতু, ৬শ’ মসজিদ, ৫০টি হাসপাতাল, ৮০টি বেসরকারী কলেজ, পৃথিবী বিখ্যাত কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয় সেই সাথে ৮৪ হাজার বিপণী, ৯শ’ গোসলখানা ও ২ লক্ষাধিক অট্টালিকা সমৃদ্ধ কের্ডোভা পরিণত হয় বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগরীতে। স্পেনের প্রতিটি ধূলিকনাই বিশ্ববাসীকে জানান দিচ্ছে মুসলমানেদের সেই গৌরবগাঁথা।
কিন্তু স্পেনের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় মুসলিম শাসকরা যখন ইসলামের সঠিক শিক্ষা থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে চরম অন্তঃকলহে লিপ্ত হলো তখন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে শুরু করলো বিধর্মী রাজারা। বেজে উঠে তখন স্পেনের মাটি থেকে মুসলমানদের পতন ঘন্টা। একে একে বিভিন্ন শহর মুসলমানদের হাতছাড়া হতে থাকে। খ্রিষ্ঠান রাজারা স্পেনকে পুনরায় খ্রিষ্ঠান ধর্ম ও সংস্কৃতির আওতায় ফিরিয়ে এনে সমগ্র স্পেনকে একীভূত করতে সংকল্পবব্ধ হয়। সেই সাথে রাজা ফার্ডিনান্ড ও রাণী ইসাবেলা স্পেন থেকে মুসলমানদের চিরতরে নির্মূল করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যেতে থাকে।
শেষ পর্যন্ত লক্ষাধিক মুসলিম পুরুষকে মসজিদে ঢুকিয়ে আগুণ জ্বালিয়ে দেয়া হলো আর লক্ষাধিক নারী ও শিশুদের সাগরে সলিলসমাধির সুবন্দোবস্ত করা হলো। ইতিহাসের সেই ভয়ানক কালো দিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল, যেদিন বোকা বানানো হয় লক্ষ লক্ষ মুসলমানদের। শত শত বছর পরও আজও আন্দালুসিয়া প্রদেশের ঐতিহাসিক কর্ডোভা নগরীর আকাশে বাতাসে ধ্বণিত হয় লক্ষ মুসলমানের আত্মার ক্রন্দন। বেদনাবিধুর বধ্যভূমিতে কান পাতলেই শোনা যায় সেই ক্রন্দন। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, ইতিহাস না জানার কারণে বাংলাদেশী অনেক মুসলমানকেও দেখা যায় ‘এপ্রিল ফুল’ উদযাপন করতে। আশাব্যঞ্জক হারে ইদানিং অবশ্য সচেতনতা বাড়ছে। প্রাসঙ্গিক লিংক : এখানে ক্লিক করুন।