মাঈনুল ইসলাম নাসিম : পলায়নপ্রবণ একশ্রেনীর সুবিধাবাদী বাংলাদেশীদের অপকর্মের খেসারতে গত প্রায় বছর তিনেক ধরে ইতালীর সিজনাল জব ভিসায় ব্ল্যাকলিস্টে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। অন্য সব দেশের নাগরিকরা আগের মতো যথারীতি এখনো সিজন শেষে যার যার দেশে ফিরে যায় এবং পরের বছর ফিরে আসে সসম্মানে। ব্যতিক্রম ছিল শুধু বাংলাদেশ। ২০০৮ থেকে ২০১২ এই ৫ বছরে প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশী মৌসুমি ভিসায় ইতালীতে প্রবেশ করলেও ফেরত যান হাতে গোনা মাত্র ৫১ জন। সঙ্গত কারণে তালিকায় সব দেশের নাম থাকলেও বাদ পড়ে বাংলাদেশ।
‘গোল্ডেন এগ’ থিওরিতে বিশ্বাসী বাংলাদেশীরা বিগত দিনে সোনার ডিম পাড়া হাঁসটিকে জবাই দিয়ে বসায় বিনষ্ট হয় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। কালো তালিকাভুক্ত হবার আগে ইতালীতে একদিকে যেমন ছিল মুখচেনা ও স্বীকৃত বাংলাদেশী দালালদের পৌষমাস, অন্যদিকে আম-জনতার মধ্য থেকেও নব্য-দালাল হিসেবে আবির্ভূত হয়ে অনেকেই ৫-১০-১৫-২০ এমনকি কেউ কেউ শ’-দেড়শ’ লোক এনে হয়ে যান আঙুল ফুলে কলাগাছ। জনপ্রতি গড়পড়তায় ৮-১০ লাখ টাকা দালালকে দিয়ে সিজনাল ভিসায় ইতালীতে পৌঁছানোর পর তাদের প্রায় শতকরা ৯৯ ভাগের বেশি যোগ দেননি সংশ্লিষ্ট কর্মস্থলে।
সিজনাল জব ভিসার মধ্যে কৃষিখামারের কাজ ছাড়াও পাহাড়-পর্বতে এবং সাগরপাড়ের হোটেল-রেস্তোঁরায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কাজের সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশী দালালরা মূলতঃ ক্ষেত-খামারের ইতালীয় মালিকদের অর্থের বিনিময়ে হাত করেই ভিসাগুলো বের করতো। এজন্য এর নামও দিয়েছিলো তারা ‘টমাটো ভিসা’। সোনার হরিণ ধরার আশায় এই টমাটো ভিসাতে বাংলাদেশ থেকে পেশাদার কৃষকরা আসেনি, এসেছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা লোকজন। কেস স্টাডিতে বহুবার দেখা গেছে, দেশে ছোটখাটো ব্যবসা-বানিজ্য ছিল এমন অনেকে এমনকি ব্যাংক-বীমা অফিস-আদালতের চাকরি ছেড়েও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক ইতালীতে সবজির খামারে কাজ করবেন দেখিয়ে ‘গুডবাই’ জানান বাংলাদেশকে।
২০০৮ থেকে ২০১২ যে ১৮ হাজার লোক বাংলাদেশ থেকে ইতালীতে প্রবেশ করেন তাদের অর্ধেকের বেশি আবার সেই টমাটো ভিসার মেয়াদ শেষ হবার আগেই পাড়ি জমান ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। ইতালীকে তারা ব্যবহার করেন শুধুমাত্র ‘ট্রানজিট কান্ট্রি’ হিসেবে। যারা ইতালী ছেড়ে যান তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন দেশে দেশে। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ইতালীতে ধরপাকড় তুলনামূলকভাবে কম থাকায় অনেকেই ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পর অবৈধভাবেই থেকে যান দেশটিতে। বাংলাদেশীদের উপরোক্ত ‘মেকানিজম’ ইতালীয় প্রশাসন পুরোপুরি জেনে যাবার কারণেই ৩ বছর আগে বাংলাদেশকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করা হয় অফিসিয়ালি।
এদিকে ইতালী-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এখন ঢাকা সফর করছেন ইতালীর উপ-পরাষ্ট্রমন্ত্রী বেনেদেত্তো দেল্লা ভেদোভা। ১৯ ফেব্রুয়ারি বৃহষ্পতিবার গনভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাত ছাড়াও একাধিক মন্ত্রনালয়ে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর সাথেও পৃথক পৃথক বৈঠক হয় তাঁর। সফরটি রোমের বাংলাদেশ দূতাবাসের রুটিন ওয়ার্কের ফসল হলেও ইতালীয় উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছেন রাষ্ট্রদূত শাহদৎ হোসেন। বৃহষ্পতিবার এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা আশা করছি এই সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের ব্যবসা-বানিজ্যের বহুমাত্রিক সম্প্রসারণের পাশাপাশি চলমান বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা নিরসনের পথও প্রশস্ত হবে”।
ইতালীয় উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর সিজনাল জব ভিসায় বাংলাদেশকে আবার সুযোগ দেবার ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে, এমনটাই মনে করেন রাষ্ট্রদূত শাহদৎ হোসেন। অতীতে মৌসুমি ভিসায় আসা বাংলাদেশীদের পলায়নপ্রবণতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি এবং যেহেতু ইতালীতে প্রতি বছরই সিজনাল ওয়ার্কারের প্রয়োজন হয় তাই একটি সুখবর এখন সবারই কাম্য। তবে অবশ্যই আগের সিস্টেমে আর নয়, সুযোগসন্ধানীদেরকে আগেকার স্টাইলে সেই সুযোগ আমরা আর দিতে চাই না”। রাষ্ট্রদূত জানান, “আমরা এমন একটি প্রক্রিয়া বের করতে চাই যাতে কর্মঠ বেকার লোকজন ৯ মাসের জন্য সিজনাল ভিসায় ইতালী আসবেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মস্থলে কাজ শেষে উপার্জিত ইউরো নিয়ে দেশে ফিরে ৩ মাস বিশ্রাম নেবেন”। উল্লেখ্য ইতালির সিজনাল ভিসায় বাংলাদেশ বাদ পড়ার কারন সম্পর্কে ইতালিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়োজিত রাষ্ট্রদূত শাহদৎ হোসেনের একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিলো আমিওপারিতে। সেই লেখাটি পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করে পড়ে আসতে পারেন।
প্রসঙ্গতঃ ইতালীর উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেনেদেত্তো দেল্লা ভেদোভা বৃহষ্পতিবার ঢাকায় প্রবাসী কল্যান ভবনে বৈঠক করেন বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সাথেও। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদশের মন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করেন ‘বিনা পয়সায়’ এবার তিনি বাংলাদেশ থেকে ইতালীতে লোক পাঠাবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিজনাল ভিসায় বাংলাদেশের ওপর থেকে চলমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও ‘বিনা পয়সায়’ যাবার সুযোগ হবে তখনই যদি বিমান ভাড়া ও ভিসা ফি বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে বহন করা হয়। কারণ ইতালীর এগ্রিকালচার সেক্টর পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে প্রাইভেট মালিকরা এবং তাদের খামারগুলোতে প্রতি বছর সিজনাল কাজ করতে আসা বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা নিজেদের খরচেই এসে থাকেন।
অভিজ্ঞ মহলের পরামর্শ, সরকারের শ্রমমন্ত্রীর পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে ‘বিনা পয়সায়’ ইতালীতে কর্মী প্রেরণের অবাস্তব-কাল্পনিক সব বেহুদা কথাবার্তা না বলে বরং শতভাগ নিশ্চিত প্রক্রিয়া খুঁজে বের করা, যাতে ব্যবসা-বানিজ্য বা অফিস-আদালতের চাকরি ছেড়ে কেউ সিজনাল ভিসায় ইতালী এসে লাল-সবুজ পতাকাকে ব্ল্যাকমেইল করতে না পারে। ইতালীতে পৌঁছার পর ক্ষেত-খামারে বা হোটেল-রেস্তোঁরায় যার যার কর্মস্থলে অবশ্যই যোগ দিতে হবে এবং সুনামের সাথে সিজন শেষ করে সসম্মানে দেশে ফিরতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এভাবে ফিরে গেলে পরের সিজনের জন্য তাদেরকেও সসম্মানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই ভিসা দেবে ইতালী। কিন্তু সব কথার শেষ কথা – সুযোগ হয়তো আসছে আবার বাংলাদেশের জন্য, কিন্তু সোনার ডিম দেয়া হাঁসের জবাই ঠেকানো যাবে কি ?
উল্লেখ্য ইতালি ও ইউরোপের যে কোন সঠিক তথ্য ও প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেতে আপনারা সরাসরি আমিওপারি টিম এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আর আমাদের সাথে যোগাযোগ করার বিস্তারিত জানার জন্য এখানে ক্লিক করুণ।
আর যারা আপনাদের ফেসবুকে আমিওপারির প্রতিটি লেখা পেতে চান তারা এখানে ক্লিক করে আমাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে আমিওপারিতে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা আপনার ফেসবুক নিউজ ফিডে পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।
ইতালির সিজনাল ভিসা কি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের?
বাংলাদেশ এর জন্য কি সিজনাল ভিসা খোলার কোন সম্ভাবনা আছে?২০১৫ সালে।
কোন সম্ভাবনা নেই।
ইতালির সিজনাল ভিসা কবে ওপেন হবে বাংলাদেশ এর জন্য?
ওহ..ok..Thanks a lot…আপনাদের ডিস্টার্ব করার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুখখিত।ভাল থাকবেন।
Thank you.