যুবরাজ শাহাদাতঃ এই বছর ফির নতুন করে সাইপ্রাস ইমিগ্রেশন ও কলেজ কর্তিপক্ষ ভিসা জটিলতার অবসান ঘটিয়ে নতুন আইনে ইন্টারভিউ ছাড়া ভিসা ইস্যু করবে বলে জানা গেছে। সো নতুন করে আরেক ছাত্রদেরকে জামেলায় না পরে যথা সম্বভ সাইপ্রাস যাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এখনও সাইপ্রাস এর ইমিগ্রেশন কর্তিপক্ষ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস দের পড়াশুনার পাশাপাশি যে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা বৈধভাবে কাজের অনুমতি ছিল সেটা বহাল আছে কি এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু ই জানান নি .তবে ২০০৩-২০০৮ সাল পর্যন্ত যারা ই সাইপ্রাস নামক দীপ রাষ্টে পড়াশুনা করতে গিয়েছে তারা আর্থিক ভাবে অনেক লাভবান হয়েছে এটা সত্য। ওই কালের গল্প সুনে যদি এইকালে কেউ সাইপ্রাস যেতে চান তাহলে সেটা হবে চরম ভুল। আগামী সেমিস্টার থেকে সাইপ্রাস নতুন করে কোনো ঝামেলা ছাড়া ( কোনো প্রকার ইন্টারভিউ , আই. ই এল. টি এস লাগবে না ) যাইহোক পার্সোনালি আমরা যারা আপনাদের সার্থে কিছু করার চেষ্টা করছি সেখানে আমাদের আপনাদেরকে ভুল তথ্য দিয়ে বিব্রান্তি করার কোনো উদ্দেশ্য নাই। আপনাদের কাছ থেকে আমরা কোনো ভাবে আর্থিক লাভবান ও হই না। সো যদি নিজের ভালো মনে করেন একটু বুঝে শুনে পা বাড়িয়েন। আর এই লিখাটা আমার লিখা অনেক গুলো পত্র পত্রিকা তে প্রকাশ হয়েছিল। দরকার হলে একটু পরে নিবেন সাইপ্রাস আসার আগে।
কেমন আছেন সাইপ্রাসে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা?
ভূমধ্যসাগরের বুকে ছোট্ট একটি দ্বীপ। অনেকটা গীটার আকৃতির ছোট দ্বীপটা শুধু দ্বীপই নয়। একটা দেশও। নাম তার সাইপ্রাস। সাইপ্রাস নামের একটা দ্বীপ বা দেশ আছে তা অনেক বাংলাদেশীর কাছেই অজানা। তবুও এই দ্বীপ এ রয়েছে হাজারও বাংলাদেশীর বসবাস।
প্রথমে সাইপ্রাস সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ ছোট এই দ্বীপ দেশটি আয়তনে অনেক ছোট। আমাদের দেশের এক দশমাংশের মত। তারপরও এটা আবার সমান দুই ভাগে বিভক্ত। এক অংশ স্বাধীন দেশ সাইপ্রাস নামে পরিচিত। এখানে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখের মত। তার মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশই বিদেশী। সাইপ্রাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয় ২০০৪ সালে ।মোট আয়তন ৯২৫১ বর্গ কিলোমিটার. তারও মধ্যে আবার ২ ভাবে বিভক্ত।একটি রিপাবলিক অব সাইপ্রাস যা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত।অন্য অংশ উত্তর সাইপ্রাস নামে পরিচিত হলেও অনেকে তূর্কী সাইপ্রাস হিসেবে জানে। কারন এটা তুরস্কের অধীনস্থ। ৬০% এরিয়া গ্রিক সাইপ্রাস এর দখলে র ৪০% এরিয়া উত্তর সাইপ্রাস বা নর্থ সাইপ্রাস এর অধীনে। ১৯৭৪ সালের যুদ্ধের পর দুই ভুখন্ড কে একত্রিত করতে অনেক কিছু হয় কিন্তু কেউ কারো প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আজ পর্যন্ত বিভক্ত ই রয়ে গেল।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী আসে উচ্চ শিক্ষার জন্য। ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সাধারনত দুর্লভ। তাই যারা অদুর ভবিষ্যতে সাইপ্রাসে লেখাপড়ার জন্য আসতে ইচ্ছুক তাদের জন্য কিছু দরকারি তথ্য এখানে রয়েছে। এখানে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য রিকয়ারমেন্ট ইউরোপের অন্য দেশের তুলনায় খুব বেশি নয়। এখানে লেখাপড়ার জন্য বাংলাদশের উচ্চ মাধ্যমিক পাস এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন। IELTS দরকার না থাকায় ভিসা খুব সহজ। তাই যারা এখানে পড়াশুনা করার জন্য আসতে চায় তাদের জন্য পরামর্শ হল, প্রথমে অন্য কোন দেশে চেষ্টা করেন অথবা সাইপ্রাসের কোন কলেজে পড়াশুনা করতে না এসে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন(যদি পারিবারিক আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকে)। সাইপ্রাসে কোন কলেজে পড়াশুনা করতে আসবেন না। কারন আমাদের দেশের কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় গুলো্র মান সাইপ্রাসের চেয়ে অনেক ভাল।
দ্বিতীয়তঃ কেউ যদি টাকা আয় করার জন্য আসতে চান সেটাও আপাতত না করাই ভাল। এক সময় অর্থ উপার্জনের জন্য সাইপ্রাস ইউরোপের অন্যতম ছিল। তার প্রমাণ পাওয়া যায় ২০০৭-২০০৮ বা তার আগের সময়গুলোতে। যখন বাংলাদেশের মোট রেমিটেন্সের একটি বড় অংশ যেত সাইপ্রাস থেকে কিন্তু ২০০৯ সালের পর থেকে সাইপ্রাস এর অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে .. ইউরোপিয়ান রুলস অনুযায়ী কোন ছাত্র ইউরোপে পড়াশুনার পাশাপাশি সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজের অনুমতি আছে আর গ্রীষ্ম কালীন ছুটিতে ৩৮ ঘন্টা পর্যন্ত কাজের অনুমতি আছে, সাইপ্রাসেও ছিল ২০১২ পর্যন্ত। সেটা স্টুডেন্টস দের রেসিডেন্ট পার্মিট এ লিখা ই ছিল। যাই হোক আসি বর্তমান সময়ের কথায়। ২০১২ সালের শুরু থেকে সাইপ্রাস ইমিগ্রেশন পুলিশ এই আইন পরিবর্তন করে। এর ফলে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস দের পড়াশুনার পাশাপাশি কাজের আর কোন সুযোগ থাকলো না। এমন কি ইমিগ্রেশন থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় কেউ যদি কোন ছাত্র কে অবৈধ ভাবে কাজে নেয় তাহলে মালিক পক্ষকে জরিমানা করা হবে। যার ফলে ছাত্র দের কে কেউ আর কাজে নিতে সাহস পায় না। আর সাইপ্রাস এর কাজের ক্ষেত্র তা একটো ভিন্ন, বেশির ভাগ ছেলেপেলে কাজ করে কৃষি কিংবা বিভিন্ন ফল পাড়ার কাজ। এক দিনে কাজের বিনিময়ে ২৫-৩৫ ইউরো পর্যন্ত মিলে থেকে-যা বাংলাদেশী তাকে ৩০০০-৪০০০ হয়, কেউ কেউ মাসে ৫-১২ দিন পর্যন্ত কাজ করতে পারে কেউ আবার কম বেশি। কিন্তু সমস্যা হলো এক দিকে কলেজ গুলোর বাড়তি টিউসন ফী অন্য দিকে কাজ করতে গেলে পুলিশ এর ভয় সব মিলিয়ে খুব খুব খারাপ অবস্থায় আছে বাংলাদেশী ছাত্ররা সাইপ্রাসে।
কলেজের ফী না দিলে কলেজ কর্তিপক্ষ নোটিশ জানিয়ে দিচ্ছে ইমিগ্রেশনকে। ফলে অনেকে অবৈধ হয়ে যেতে হচ্ছে। বর্তমান কাজের অবস্থা এতটাই খারাপ যে কেউ কেউ বাসা ভাড়ার টাকা ও ইনকাম করতে পারছে না। আর এখানে কলেজগুলোতে পড়াশুনা হয় শুধু নামমাত্র। কলেজের টাকা গুলো ঠিকই মোট দিতে পারলেই কলেজ কর্তিপক্ষের আর কোন মাথা ব্যাথা থাকে না, শুধু মাত্র পরীক্ষার দিনটা বন্ধুদের কাছ থেকে জেনে ওই দিন হাজির হলেই পরীক্ষার জামেলা শেষ। সাইপ্রাস এমন একটা জায়গা ছিল কিছু দিন আগে যেখানে অর্থ উপার্জন আর পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া দুটিই সম্ভব ছিল কিন্তু এখন তা করা যাচ্ছে না, না করতে পারছে পড়াশুনা না কাজ- ফলে যেই টাকা খরচ করে সাইপ্রাস আসে আর যেই স্বপ্ন নিয়ে আসা হয় তার কোন পূরণ করা সম্ভব হয় না। অবৈধ অবস্থায় কিছু টাকা পয়সা উপার্জন করে অনেকে আবার বাংলাদেশে চলে যাচ্ছে। এই তো আমার কিছু বড় ভাই ও ২০০৮ সাল থেকে সাইপ্রাস এ ছিলেন ভালোই চলসিলো কিন্তু বর্তমান ইকোনমিক ক্রাইসিস এর কারণে কোন কিছুর সাথে পেরে উঠে পারছিলেন না তাই নিজ ইচ্ছে দেশে চলে গেছেন। তার মত এমন আরো ১০ জন বন্ধুর নাম আমি জানি যারা সাইপ্রাস থেকে নিজের ইচ্ছায় দেশে ফিরে গেছেন। ইন্টার কলেজের সারুয়ার , নাদিম,শেহাব, আতাউর , নোমান ভাই আপেল মাহমুদ , শাহীন , CDA কলেজের কামরুল হাসান , সুমন, মোসারফ হোসেন, একরামুল এরা সবাই আমার পরচিত এখন সবাই দেশে চলে গেছেন।
কি করবে সাইপ্রাস এ থেকে? বাসা ভাড়ার টাকাও ইনকাম করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে , কলেজের টাকা দেবে কোথা থেকে ? সেখানে ৩-৫ হাজার স্টুডেন্টস সাইপ্রাস এ পড়াশুনা করত সেখানে এখন পুরো সাইপ্রাস এ ১০০-১৫০ জন পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। আর বাংলাদেশের মানুষ দেশে থাকতে বিদেশের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা থাকে না। কেউ যদি ইউরোপ থেকে বলে যে অমুক দেশের অবস্থা ভালো না ওই দেশে স্টুডেন্টস কিংবা জব ভিসায় আসা ঠিক হবে না তবে তারা বিশ্বাস করতে চায় না। দেশের মানুষ ভাবে আমরা ভালো পজিশনে আছি তাই তাদের কে আসতে বারণ করছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো ইউরোপ গামী সবাই তো আর সব ভালো দেশ গুলোতে অ্যাডমিসনের যোগ্য নয়। তাই যে করে ই হোক ইউরোপ আসতে চেষ্টা করে, ভিড় করে বাংলাদেশী ফার্মগুলোর মিষ্টি বিজ্ঞাপন দেখে।
Study in Cyprus – No IELTS ,Job gauranty ,100 % ভিসার নিশ্চয়তা ইত্যাদি লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে ছুটে চলে BSB , Visa World Wide ,Raihans Int এই রকম আরো শত শত ফার্ম যারা সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশের কাজ করে থাকে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চলে আসে সাইপ্রাসে। তখন দেখে বাস্তব সম্পুর্ন ভিন্ন! ফার্ম্গুলোর লেকচার এর সাথে কিছুই মিল নেই, এমন কি সাইপ্রাস কনস্যুলেট এর ভিতরে যারা কাজ করে তাদের অনেকের হাত থাকে ফার্ম গুলোর সাথে ভিসা করানোর ব্যাপারে। অনেকের সব কাগজ পত্র ঠিক থাকলে ভিসা পাচ্ছেন না আবার অনেকে নিজের নাম ঠিক মতে বলতে পারে না তার ভিসা হয়ে যাচ্ছে কারণ হছে ফার্ম মালিকরা ৫০ হাজার কিংবা ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভিসা করে নিচ্ছেন।
আমার অনেক বন্ধুরা ও টাকা দিয়ে ভিসা করিয়েছেন. যাই হোক বলতে গেলে অনেক কাহিনী! পরিশেষে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপগামী ছাত্র ভাইরা যারা আসতে ইচ্ছুক তারা খুব বুঝে শুনে আসবেন। আগের দিনের সেই স্বপ্নের লন্ডন কিংবা রুপকথা প্যারিস কিন্তু অনেকটাই বদলে গেছে। আর বিশেষ করে সাইপ্রাস এ যারা আসতে চান তাদের জন্য পরামর্শ যে টাকা দিয়ে সাইপ্রাস এ আসবেন? দয়াকরে দেশে কোন ব্যবসা বানিজ্য করুন। টাকার অনেক মুল্য সেটা সময় হারালে বুঝবেন, সাইপ্রাস ফেরত ভাই দের সাথে কথা বলতে পারলে বিষয় তা পরিষ্কার হতে পারবেন। সবশেষে সবাই ভালো থাকবেন।যদি এই ব্যাপারে কারো কোন কিছু জানার প্রয়োজন মনে হয় তাহলে যোগাযোগ করতে পারেন।
আর যারা আপনাদের ফেসবুকে আমাদের সাইটের প্রতিটি লেখা পেতে চান তারা এখানে ক্লিক করে আমাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে আমিওপারিতে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা আপনার ফেসবুক নিউজ ফিডে পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।