গত একশ দশ বছর যাবৎ ইতালির ভাসমান শহর ভেনিসে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব শিল্পকলার সেরা আয়োজন ‘ভেনিস বিয়েন্নালে’. গোটা দুনিয়ার সেরা সেরা শিল্পী ও চিন্তাশীল, সৃজনশীল, যুক্তিবুদ্ধির আমোদি মানুষের ভাবনা চেতনা এবং সৃষ্টির প্রকাশ ঘটে এখানে। বিশ্বজোড়া হাজার হাজার জাতি গোষ্ঠীর ইতিহাস ঐতিহ্য, চিন্তা, চেতনা, রুচি এবং সমসাময়িক শিল্পভাবনার বিনিময় হয়। পৃথিবীর এপ্রান্তের মানুষ জানতে পারে ওপ্রান্তের মানুষের শিল্পচিন্তা। পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। চেনা জানার পরিধি বিস্তর হয়। যা বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি দুই বছর অন্তর আয়োজিত ভেনিসের আর্ট বিয়েন্নালে আরম্ভ হয় জুনের শুরুতে, শেষ হয় নভেম্বরে। এবছরও শুরু হয়েছে ১ জুন, টানা ৬ মাসের মাথায় শেষ হবে নভেম্বরের ২৪ তারিখ। ২০১৩ সালের ৫৫তম এ বিশ্ব আয়োজনে দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশ ন্যাশনাল প্যাভিলিয়নের মর্যাদা নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে। এর আগে ২০১১ সালের ৫৪তম ভেনিস বিয়েন্নালে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে ঢাকার বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের পৃষ্ঠপোষকতায়। ‘সুপার ন্যাচারাল’ শিরোনামের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে স্থান পেয়েছে আটজন শিল্পীর শিল্পকর্ম। অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন, মোখলেসুর রহমান, মাহাবুব জামাল শামিম, জাহিদুল মুস্তফা, লালা রুখস সেলিম, উত্তম কুমার কর্মকার, ঢালি আল মামুন, অশোক কর্মকার এবং ইয়াসমিন জাহান নূপুর। এছাড়া বাংলাদেশের পটমণ্ডপে দুজন অতিথি শিল্পী ও যশোরের চারুপিঠ স্কুলের শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। অতিথি শিল্পীরা হলেন, সাউথ আফ্রিকার গাভিন রেইন ও ভেনিসের জানফ্রাংকো মেজ্জাতো। বাংলাদেশ ন্যাশনাল প্যাভিলিয়নের কিউরেটর, কমিশনার প্রফেসর ফ্রানসেসকো এলিসেই ও ফাবিও আনসেলমি।
মে’র ৩০ তারিখে বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করা হয়। এতে ঢাকা থেকে বাণী প্রেরণ করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। তিনি তার লিখিত বাণীতে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অনেক অর্জন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এদেশকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশকে বলা যায় অপার সম্ভাবনার দেশ, দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির দেশ। আমাদের শিল্পকলাও সেদিক থেকে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের শিল্পকলা আজ বিশ্ব দরবারে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। ভেনিস বিয়েনালে বাংলাদেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণ সেদেশে তাদের মেধা, সৃজনশীলতা ও মননশীলতার পরিচয় তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্বসভায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি সচিব রনজিৎ কুমার বিশ্বাস, সহকারী সচিব পরাগ, রাষ্ট্রদূত শাহাদত হোসেন, শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালক লিয়াকত আলি, ড. নীলিমা ও সচিবের একজন ব্যক্তিগত সহকারী। ভেনিসের স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকে মাত্র ৩ জন প্রবাসী বাংলাদেশি এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। জানা যায় ইতালির ভেনিসে এতবড় একটি বিশ্বমেলায় বাংলাদেশ যোগ দিয়েছে অথচ রোমের বাংলাদেশ মিশন থেকে ভেনিসের বাংলাদেশি কমিউনিটির কাউকে কিছু জানানো হয়নি। কোনো প্রকারের প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। যে তিনজন প্রবাসী উপস্থিত হয়েছিলেন- তারা শিল্পীদের ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। উপস্থিত তিন প্রবাসী রাষ্ট্রদূত শাহাদত হোসেনের কাছে মুহুর্মুহু ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের একজন বেশ উত্তেজিতভাবে বলেন, ভেনিস এবং এর আশপাশের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী বসবাস করেন। অথচ তারা কেউ জানেন না, তাদের কাউকে জানানো হয়নি। তথ্যের অভাবে ১৫ জনেরও উপস্থিতি ঘটেনি। এ ব্যর্থতা এবং লজ্জার দায় কার? ভেনিসে বাংলাদেশি শিশু কিশোরদের জন্য মাতৃভাষা বাংলা শিক্ষা ও বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতি শিক্ষা দেয়ার জন্য বাংলা স্কুল আছে। সেখানে প্রায় শতাধিক শিশু কিশোর মাতৃভাষা এবং নিজের সংস্কৃতি শিক্ষা নেয়। যদি আগে থেকে জানানো হতো- বিদেশে বড় হওয়া আমাদের প্রজন্ম শিশু কিশোররা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে এখানে উপস্থিত হতে পারত। শেকড়ের সঙ্গে পরিচিত হতে পারত। নিজেদের শিল্প সংস্কৃতিক ঐতিহ্য দেখার সুযোগ পেত। শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেত। তাদের ভেতরে অনুপ্রেরণা জাগত। গর্ব করার মতো আমাদের কিছু নেই, আমরা গরিব দেশের মানুষ, এই হীনম্মন্যতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারত। কিন্তু তা সম্ভব হলো না শুধু বাংলাদেশ মিশনের দায়িত্বহীনতার কারণে। রোমের বাংলাদেশ মিশনের কাজ কি? ব্যাংকিং পদ্ধতি এড়িয়ে নগদ টাকায় প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়ন করা আর চড়া মূল্যে সার্টিফিকেট প্রদান করা? উপস্থিত ৩ জন প্রবাসী সরাসরি রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চান কেন দূতাবাস থেকে কমিউনিটিকে জানানো হলো না? এই অবহেলার কারণ কি? তাদের ঝাঁজালো ক্ষোভ, অভিযোগ এবং প্রশ্নের বিপরীতে রাষ্ট্রদূত শাহাদত হোসেন কোনো কথা বলেননি। ভালো মন্দ একটি কথাও বলতে দেখা যায়নি তাকে। মনে হয়েছে, লেবার শ্রেণীর মানুষের এসব ফালতু কথা শোনার বা গুরুত্ব দেয়ার সময় তার নেই। তিনি ব্যস্ত ছিলেন সচিব তোষামোদে। উদ্বোধনী সেমিনার শেষে রাষ্ট্রদূত দ্রুত সচিবসহ ঢাকা থেকে আসা অতিথিদের নিয়ে প্যাভিলিয়ন ত্যাগ করেন।
ঢাকা থেকে আগত অতিথিদের উপস্থিতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। বলা হয়, রাষ্ট্রীয় টাকা খরচ করে তারা ৫/৬ জন ঢাকা থেকে এসেছেন, কেন? তাদের কাজ কি? শুধু সেমিনারে ৩ মিনিটের একটা বক্তৃতা করতে এতগুলো মানুষ আসার দরকার হয়? সামান্য একটা প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করার জন্যও রাষ্ট্রের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে ব্যক্তিগত সহকারী নিয়ে আসতে হয় ইউরোপে? তারা সহকারী ছাড়া এক কদমও নড়তে পারেন না? এই যদি হয় দেশের কর্তাব্যক্তিদের চরিত্র তবে সে দেশের উন্নতি হবে কিভাবে? কি উন্নতি করবেন এই সব কর্তারা? তিনজন অতিথি সেমিনারে বক্তৃতা করেন, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে সবাই একই কথা বললেন। সরকারের প্রশংসা আর কিউরেটরকে ধন্যবাদ দেয়া- এরই মধ্যে সীমাবদ্ধ তাদের জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা। আমাদের শিল্প সংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে তাদের কোনো কথা নেই। সমসাময়িক শিল্প ভাবনা বা শিল্পীদের মূল্যায়নমূলক কোনো বক্তব্য নেই। দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধুত্ব নিয়েও না। তাদের সব ব্যস্ততা সেমিনার শেষের বুফে পার্টিতে ফাও প্রসেক্কো, (ইতালিয় স্যামপেন) দামি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা, শপিং আর পরিচিত প্রবাসীদের খুঁজে বের করে বিনা খরচে ঘোরা এবং ছবি তোলার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর বাইরে কেউ কেউ তাদের ব্যক্তিগত এনজিও বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঢাক বাজিয়ে সময় পার করেন। তাদের কারও কারও ইংরেজির দখল এবং উচ্চারণ ভঙ্গি উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে হাসির খোরাক জুগিয়েছে। অতিথিদের একজন (নারী) গতবারের বিয়েন্নালে এসেছিলেন, এবারও এসেছেন। গতবার কেন এসেছিলেন এবং এবারই বা কেন এসেছেন, কি ভাবে এসেছেন, কাকে ম্যানেজ করে এসেছেন তার কোনো উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্যাভিলিয়নের উদ্বোধনী প্রটোকলের কোথাও তার নাম গন্ধ পাওয়া যায়নি। সেমিনারে বক্তৃতা করারও সুযোগ দেয়া হয়নি। কিন্তু এসেছেন, পটেরবাবু সেজে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করেছেন। দেশের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার শিরাদ্ধ করে তারা এতগুলো মানুষ না এসে একজন বা সর্বোচ্চ দুইজন আসতে পারতেন। বাকি টাকায় আমাদের দেশের শিল্প সংস্কৃতির ইতিহাস ঐতিহ্য, আমাদের শিক্ষা সমৃদ্ধি, আমাদের শ্রমিকদের সততা নিষ্ঠা, আমাদের সৃষ্টি উৎপাদন, শিল্পীদের যোগ্যতা মূল্যায়নসহ ইতিবাচক কিছু প্রকাশনা করে নিয়ে আসতে পারতেন। প্রায় সব দেশের প্যাভিলিয়নে নিজ নিজ দেশের শিল্প সংস্কৃতির ইতিহাস বিকাশ এবং সমসাময়িক শিল্পচিন্তা, গবেষণা, সমালোচনা বিষয়ক প্রকাশনা রয়েছে। ইতালীয় এবং ইংরেজির পাশাপাশি নিজের ভাষায় আর্ট নিউজ পেপার প্রকাশ করা হয়েছে। প্রচারের জন্য তা ভেনিসের সকল হোটেলসহ অতিথিশালাগুলোয় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। অথচ আমাদের তেমন কিছুই নেই। দেশকে ইতিবাচক ভাবে তুলে ধরার, দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরার তেমন কোনো প্রয়াস নেই। সবাই ব্যস্ত বিনে পয়সায় সাদা চামড়ার দেশ দেখার সুযোগ ষোলো আনায় উসুল করতে। প্রকাশনা যা আছে তা হলো, প্যাভিলিয়নের মালিক বা কিউরেটর কর্তৃক প্রকাশিত পোস্টার এবং অল্পসংখ্যক ব্রসিউর।
অফিচিনা দেল্লে যাত্তেরে গ্যালারিতে নির্মিত বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্যাভিলিয়নের চার নম্বর চেম্বারে প্রদর্শিত হচ্ছে ‘রুদ্ধশ্বাস শহর’ শিরোনামে কয়েকটি প্রমাণ সাইজের পেইন্টিং। দুর্বোধ্য হলেও সুন্দর এই পেইন্টিংগুলো করেছেন প্রবাসী শিল্পী উত্তম কুমার কর্মকার। তার একটি কাজে বেশ স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে আমাদের লোকজ চিত্র। ঝুড়ি, কোদাল, কাস্তে, লাঙ্গলের এক দারুণ সমন্বয় ঘটেছে সে ছবিতে। মুন্সিগঞ্জের এই শিল্পী ইতালির রোমে বসবাস করেন। সেখানে তিনি পেশাগত ভাবেই শিল্পকর্মের সঙ্গে নিজেকে ধরে রেখেছেন। বাংলাদেশের বাইরে ইতালির রোম, ফ্রোসিনোনে, পাদোভা, পেরুজা, তারানতো, ফিরেন্সে, লা’কুইলা, মিলানো, কাতানিয়া এবং কোসেনছা শহরে তার শিল্পকর্মের প্রদর্শনী হয়েছে। এছাড়াও ইংল্যান্ড, চীন, জাপান, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডে তার প্রদর্শনী হয়েছে। তিনি লন্ডন, রোম, কোবে (জাপান) সহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ ক’টি এওয়ার্ড এবং শিল্প সনদ অর্জন করেছেন। একই চেম্বারে রয়েছে চাঁদপুরের শিল্পী ঢালি আল মামুনের বিশাল শিল্পকর্ম ‘বর্জন’. গ্রাম দেশের কুটোর গাদার আদলে তৈরি এ শিল্পকর্ম আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত নারীদের কথা বলছে। হানাদারদের অত্যাচারের কথা বলছে। নির্যাতিতাদের হাত-পা মাথার চুলগুলো যেন এক একটি প্রতিবাদের ভাষা হয়ে ফুটে উঠেছে। আল মামুনের শিল্পের বেশকিছু দেয়াল চিত্রও এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে। ঢাকার বাইরে জাপান, ফ্রান্স, ইন্ডিয়া, ইজিপ্ট, চীন, ডাচল্যান্ড এবং আমেরিকায় তার শিল্প প্রদর্শিত হয়েছে। চারুপিঠ স্কুলের একটি চমৎকার চিত্রও রয়েছে এই চেম্বারে। গ্রাম্য মেলা, ষাঁড়ের লড়াই, নৌকা বাইচ, হালখাতাসহ অনেক কিছুই ফুটে উঠেছে এক ছবিতে। শহুরে বৈশাখী র্যালিও দেখানো হয়েছে। সময়ের সঙ্গে যে আমাদের উৎসব উদযাপনে পরিবর্তন এসেছে বা শহুরে উৎসব আর গ্রাম্য উৎসব এক ভাবে উদযাপন করা হয় না, সেকথাই মনে করে দেয় ছবিটি।
তিন নম্বর চেম্বারে শোভা পাচ্ছে বিশাল আকারের এক বিশ্ব মানচিত্র। ‘সীমান্ত অতিক্রম’ শিরোনামের এই অসাধারণ কাজটি করেছেন ইয়াসমিন জাহার নূপুর। সুঁই সুতায় এত মিহিভাবে আঁকা হয়েছে বিশ্ব মানচিত্র যা দেখলেই ভালো লাগে। মানচিত্রে রঙের খেলাও খেলেছেন চমৎকার। তন্তু শিল্পে অসাধারণ পারদর্শিতা ফুটিয়ে তুলেছেন এই শিল্পী। পটমণ্ডপ উদ্বোধনের সময় এই তন্তুশিল্পী তার গোটা মুখমণ্ডলে লাল সুতা পেঁচিয়ে এবং সুঁই ফুটিয়ে উপস্থিত সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। রাজ্জের মানুষের দুঃখকষ্ট নিজের কাঁধে তুলে নিলে চেহারায় যে কষ্ট ফুটে ওঠে তিনি লাইভ পারফরমেন্স করে তা দেখাতে চেয়েছেন। দেশের বাইরে সিরিয়া, ইজিপ্ট, পাকিন্তান, চীন এবং মরিসাসে নূপুরের শিল্প প্রদর্শনী হয়েছে। একই চেম্বারে প্রদর্শিত হচ্ছে লালা রুখস সেলিমের ‘লাইফ অন দি ডেলটা’ ও ‘জাঙ্গল অব হিউম্যনিটি’ শিরোনামে মাহবুব জামালের শিল্প। লালা তার শিল্পে ব্যবহার করেছেন চিকন চাল, লাল মরিচ, নাড়া (কুটো), বঠি ও কাঠের নারী দেহ। জামাল খবরের কাগজ দিয়ে ভালো লাগার মতো একটি দেয়াল চিত্র করেছেন। সঙ্গে ছোট বড় বেশকিছু মাটি পাথরের মূর্তি।
দ্বিতীয় চেম্বারে প্রদর্শিত হচ্ছে শরিয়তপুরের শিল্পী মোখলেসুর রহমানের বিখ্যাত ‘আমার দেশ’. শাড়ির জমিনে তিনি এঁকেছেন গ্রাম বাংলার রূপ বৈচিত্র্য। মায়ের শরীরে যে শাড়ি থাকে- সেই শাড়ির বুকে ফুটিয়ে তুলেছেন সবুজে ঘেরা বাংলাদেশ। মা আর দেশের মধ্যে কোনো ব্যবধান রাখতে চাননি শিল্পী। এছাড়াও গ্রামের মেহনতি মানুষের নিত্য সঙ্গী ঝড় বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের তাণ্ডব এবং তার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা, নতুন করে শুরু করা দেখিয়েছেন শিল্পী। মানুষকে সামাজিক ও প্রাকৃতিক বৈরিতার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার মন্ত্র দিয়েছেন। মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে উৎসাহ জুগিয়েছেন তার ছবিতে। বাংলাদেশের বাইরে জার্মানি, জাপান, ইন্ডিয়া, ফ্রান্স এবং ইতালিতে মোখলেসুর রহমানের শিল্প প্রদর্শনী হয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইলের শিল্পী একেএম জাহিদুল মুস্তফার একটি ডিজিটাল চিত্রশিল্পসহ প্রথম এবং দ্বিতীয় চেম্বারে দু‘জন অতিথি শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। পটমণ্ডপের ঢোকার মুখেই প্রদর্শিত হয়েছে অশোক কর্মকারের ‘যোগাযোগ কোর্ড’. গোবরের ঘুটের মতো করে তিনি গোল গোল চাকা বানিয়ে দেয়ালে সেঁটে রেখেছেন।
ভেনিস বিয়েন্নালের মূল এরিয়া থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত অফিচিনা দেল্লে যাত্তেরে’য় নির্মিত বাংলাদেশের এবারের পটমণ্ডপ-২০১১ সালের প্রথম পটমণ্ডপের চেয়ে শতগুণ সুন্দর এবং মানসম্পন্ন। প্রথম পটমণ্ডপ নির্মিত হয়েছিল অত্যন্ত গরিবি হালতে। ভেনিসের ফোন্দামেন্তা সান্তা আনার ভিয়া গারিবালদিতে জীর্ণশীর্ণ ধুলায় আচ্ছাদিত একটি পোড় বাড়িতে বাংলাদেশের প্রথম প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রচার প্রসারের কোনো উদ্যোগ ছিল না। বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন ৫ জন শিল্পী, সে সময়ের পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস, বেঙ্গল গ্যালারির পৃষ্ঠপোষকসহ বেশ ক’জন। প্যাভিলিয়নের সব দুর্বলতা বা গরিবিপনা ঢাকা পড়ে যেত যদি সৃজনশীল শক্তিশালী শিল্পের উপস্থিতি থাকত। কিন্তু তা ছিল না, বরং বাংলাদেশি শিল্পের চরম দেউলিয়াত্ব ফুটে উঠেছিল। বাংলাদেশের নামে প্যাভিলিয়ন ছিল কিন্তু প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশ ছিল না। প্রথম চেম্বারেই প্রদর্শন করা হয়েছিল চামড়া দিয়ে তৈরি কতগুলো শূকর। শূকরের গায়ে নিয়ন আলো দিয়ে লিখে রাখা হয়েছিল ‘মা’. অন্য একটি চেম্বারে লটকে রাখা হয়েছিল মেটাল (ব্লেড) দিয়ে তৈরি নারীর অন্তর্বাস। মুক্তিযুদ্ধের নামে রাখা হয়েছিল ফটোশপে এডিট করা যুদ্ধকালের কিছু ছবি। শিল্পীদের মেধা এবং বিশ্ব আয়োজনে অংশ নেয়ার মতো যোগ্যতা নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে মোটা দাগের প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন দেখে অত্যন্ত বিরক্ত কয়েক জন প্রবাসী বলেছিলেন, বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশ কোথায়? শূকর বা নারীর অন্তর্বাসের সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির সম্পর্ক কি? ইউরোপীয়দের এমন কি দায় পড়েছে- শূকর আর অন্তর্বাস দেখতে তারা বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে আসবে?
এবারও যে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে আহামরি কিছু আছে তা নয়। তবে প্রথম বারের সঙ্গে তুলনা করলে বলতেই হয় অনেক ভালো। এবারের বিয়েন্নালে যে আট জন শিল্পী যোগ দিয়েছেন তারা সবাই যে আন্তর্জাতিক শিল্প মেলায় অংশ নেয়ার মতো যোগ্য তা বলা যাবে না কোনো ভাবেই। তাদের অনেকেই সার্বক্ষণিক শিল্পীই নন। শিল্প চর্চা তাদের পার্টটাইম জবের মতো। জীবিকার প্রয়োজনে বা অন্য যে কোনো কারণে হোক শিল্প চর্চাকে যারা প্রথম সারি থেকে সরিয়ে দ্বিতীয় সারির কাজ হিসেবে গণ্য করেন তাদের দ্বারা আর যাই হোক- বিশ্বমানের শিল্প সৃষ্টি হতে পারে না। তবে দুই তিন জন যোগ্য শিল্পী যারা আছেন তারা বাকিদের দুর্বলতা কিছুটা হলেও পুষিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে তারা বাংলাদেশকে প্রেজেন্ট করতে পেরেছেন। যদিও আন্তর্জাতিক বিবেচনায় তা খুবই দুর্বল। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- সঠিকভাবে উপস্থাপন করা। অনেক সময় সুস্বাদু খাবারও সঠিক উপায়ে, সুন্দরভাবে পরিবেশনের অভাবে ভোজন রসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়। তেমনি বাংলাদেশের শিল্পীদের উচিত কোনো বিশ্ব আয়োজনে অংশ নেয়ার আগে তার শিল্পের সঠিক এবং সুন্দর উপস্থাপন শিখে নেয়া। নইলে বিশ্ব মানের শিল্পবোদ্ধা, শিল্পসমালোচক, শিল্পব্যবসায়ী, কিউরেটরদের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যাবে বাংলাদেশের ঐতিহ্যপূর্ণ শিল্প। বিশ্ব দরবারে অগ্রহণযোগ্য থেকে যাবে শিল্পীর শিল্পশ্রম।
সত্যি বলতে কি জাতিগত ভাবেই আমরা কেমন যেন! সব জাগায় রাজনীতি স্বজনপ্রীতি এবং অনৈতিক অর্থ উপার্জনের ধান্দা। কোথাও যোগ্যতাকে আমরা প্রধান মাপকাঠি হিসেবে দেখতে পারি না। স্বজনপ্রীতি, রাজনীতি বা টাকার প্রভাব পৃথিবীর সব জায়গায় আছে, তাই বলে যোগ্যতাকে উপেক্ষা করে নয়। যদি একটা কাজের জন্য ১০ জন যোগ্য মানুষ থাকে, তখন দেখা হয় ১০ জনের মধ্যে কেতত্ত্বাবধায়ক বা ক্ষমতাবানের কাছের মানুষ। অর্থবিত্ত কার বেশি। কিন্তু আমাদের দেশের মতো যোগ্যতাকে উপেক্ষা করে রাজনীতি, স্বজনপ্রীতি, অনৈতিক অর্থ প্রাধান্য দেয়ার মতো আত্মঘাতী কাজ উন্নত বিশ্বের কোথাও করা হয় না। এবারের বিয়েন্নালে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের শিল্পীদের বেলায়ও যোগ্যতার চেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে অন্যকিছু। অংশগ্রহণকারী আট শিল্পীর মধ্যে অন্তত ৫ জন শিল্পীই উত্তম কুমার কর্মকারের ছাত্র সময়ের বন্ধু। তারা একই সঙ্গে পড়াশুনা করেছেন। পরবর্তীতে পাঁচ তারকা নামে একটি সংগঠনও করেছেন। আর প্রবাসী শিল্পী উত্তম কুমার হলেন কিউরেটরের বন্ধু। দেশেও তার খুঁটির জোর একেবারে ফেলনা নয়। বিভিন্ন সময় দেশের অনেক রুই কাতলা রোমে এসে তার বাসায় আতিথেয়তা গ্রহণ করেন।
ভেনিস বিয়েন্নালের মতো একটি আন্তর্জাতিক আয়োজনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছে, অথচ অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী একজন শিল্পীও নেই। এবারও না, গতবারও না। বিষয়টি খুবই বিস্ময় এবং উদ্বেগের। ভেনিস বিয়েন্নালে অংশগ্রহণের বিষয়টিকে হাসাহাসির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে আমাদের শিল্প সংস্কৃতির দৈন্যতা ফুটে উঠেছে নিদারুণ ভাবে। অথচ কাইয়ুম চৌধুরী, মুস্তাফা মনোয়ার, রফিকুন নবী, মাহমুদুল হক, হাশেম খান, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, আবুল মনসুরদের মতো বিদগ্ধ শিল্পী আমাদের দেশে আছেন। তাদের একজনকেও আমরা উপস্থাপন করতে পারিনি আমাদের বিশ্ব প্যাভিলিয়নে। সবাই সবার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে, থাকছে। এক্ষেত্রে একটা কথা মনে পড়ে যায়- ২০০৭-৮ সালের মইনুদ্দিন ফখরুদ্দীন সরকারের সময় ফ্রান্সের গিমে জাদুঘরে বাংলাদেশের পুরাকীর্তির প্রদর্শনী হওয়ার কথা ছিল। প্রদর্শনীর বিজ্ঞাপন দিয়ে গিমে জাদুঘর প্রায় দুই লাখ টিকেট অগ্রিম বিক্রি করে ফেলেছিল। ঠিক তখনি বাংলাদেশ মোচড় দিয়ে বসে, পুরাকীর্তি দেবে না। যুক্তি হলো গিমে জাদুঘর আমাদের মূর্তি ফেরত দেবে না। চুরি করবে। কতোটা হাস্যকর এবং খোঁড়া যুক্তিতে ফ্রান্সের মতো দেশে বাংলাদেশের পুরাকীর্তির আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। অথচ ফ্রান্স বলেছিল, আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ দিয়ে কীর্তিগুলো পরীক্ষা করে রাখুন। ছবি তুলে রাখুন, ভিডিও করে রাখুন। ঠিক যে ভাবে পুরাকীর্তি আমরা নিব সেভাবেই ফেরত দিব। আমাদের অতি দেশপ্রেমিক (অ) শিল্পী (কু) বুদ্ধিজীবীরা ফ্রান্সের মতো দেশের কথায় ঈমান রাখতে পারেননি। তারা সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ফ্রান্সে বাংলাদেশের পুরাকীর্তির প্রদর্শনী বন্ধ করতে। সে সময় বাংলাদেশের একজন নামকরা ব্যারিস্টারের-ব্যারিস্টার কন্যা ফ্রান্সে এসে প্রবাসীদের উস্কানি দিয়েছিলেন প্রদর্শনীর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করতে। প্রবাসী মিডিয়া কর্মীদের মোটা অঙ্কের লোভ দেখিয়েছিলেন প্রদর্শনী, বিরোধী প্রপাগাণ্ডা করতে। আমার খুব পরিচিত একজন সাংবাদিককে বলেছিলেন, রোজগার সারা জীবন করা লাগে না, সময় বুঝে এক দুইবার করলেই জীবন চলে যায়। আসলে সবই ছিল ষড়যন্ত্র। ইন্ডিয়া দাবি করে উপমহাদেশের মধ্যে তারাই শিল্পে এবং সংস্কৃতিতে একমাত্র সমৃদ্ধ দেশ। ফ্রান্সের গিমে জাদুঘরে যদি বাংলাদেশের পুরাকীর্তির প্রদর্শনী হতো তবে তাদের দাবি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়ে যেত। বিশ্বের কাছে প্রকাশ হয়ে যেত গরিবের ঘরেও সুন্দরী বউ আছে বা থাকতে পারে। ইন্ডিয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন আমাদের দেশের কিছু উচ্ছিষ্ট ভোগী (অ) শিল্পী (কু) বুদ্ধিজীবী। সুযোগের সঠিক ব্যবহার করেছিল ইন্ডিয়া। অগ্রিম টিকেট বিক্রি করে বেকায়দায় পড়া গিমে জাদুঘরকে তখন ইন্ডিয়া প্রস্তাব দেয় তাদের দেশ থেকে পুরাকীর্তি নিতে। ইন্ডিয়ার নামে প্রদর্শনী করতে। বাধ্য হয়ে গিমে কর্তৃপক্ষ তাই করে। বিশ্ব দরবারে ইন্ডিয়ার দাবি পাকাপোক্ত হয়। উপমহাদেশে ইন্ডিয়া ছাড়া অন্য কেউ শিল্প সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ নয়। কতটা কপাল পোড়া জাতি আমরা- ফ্রান্সের মতো দেশ সরকারিভাবে প্রতিশ্রুতি দিল যেমন পুরাকীর্তি নেবে, ঠিক তেমনি ফেরত দেবে। আমরা বিশ্বাস করতে পারলাম না। বর্তমানের মিডিয়া এবং প্রযুক্তির সময়ে এত সহজ কোনো দেশের সংস্কৃতি চুরি করা? একি বাংলাদেশ ভারতের বর্ডার যে আঁচলের তলে লুকিয়ে পুরাকীর্তি পাচার করলে কেউ দেখবে না বা দেখার কেউ নেই! গিমে জাদুঘরে একবার বিশ্বপ্রদর্শনী হওয়ার পরে ফ্রান্স কি কোনোভাবে বলতে পারত ওগুলো তাদের! কেউ বিশ্বাস করত? আর ফ্রান্স যদি চুরিই করবে তবে ইন্ডিয়ারগুলো চুরি করল না কেন?
প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব সংস্কৃতির ভিড়ে বাংলাদেশের মতো একটি ন্যাচারাল সংস্কৃতির দেশের অংশগ্রহণকে ভেনিস বিয়েন্নালে কর্তৃপক্ষ ইতিবাচকভাবেই দেখছে। নতুন একটা দেশের অংশগ্রহণে থাকবে নান্দনিক নতুনত্ব এমনটাই তাদের প্রত্যাশা। বাকি দায়িত্ব আমাদের, আমাদের সরকারের, শিল্প বোদ্ধাদের। আমরা যদি যোগ্য শিল্পীদের ‘কাজ’ দিয়ে আমাদের শিল্প সংস্কৃতির সঠিক উপস্থাপন করতে না পারি তবে হয়ত কখনই বিয়েন্নালের মূল অংশে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া যাবে না। দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে না বড় বড় কিউরেটর এবং শিল্প ব্যবসায়ী, শিল্প সমালোচকদের। পড়ে থাকতে হবে কানা ঘুপচিতে। কিউরেটর দুই একজন যারা আছেন তারাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন লাখ লাখ ইউরো খরচ করে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন করতে।
palashrahman@libero.it
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে এই লেখায় ক্লিক করে জানুন এবং তুলে ধরুন। নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। আর আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে রয়েছে অনেক মজার মজার সব ভিডিও সহ আরো অনেক মজার মজার টিপস তাই এগুলো থেকে বঞ্চিত হতে না চাইলে এক্ষনি আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে লাইক দিয়ে আসুন। এবং আপনি এখন থেকে প্রবাস জীবনে আমাদের সাইটের মাধ্যমে আপনার যেকোনো বেক্তিগত জিনিসের ক্রয়/বিক্রয় সহ সকল ধরনের বিজ্ঞাপন ফ্রিতে দিতে পাড়বেন। ]]