খুব জ্বর হলো, ডায়রিয়া বা বড় কোন সার্জারি বা ব্যাপার যাই হোক- ডাক্তার আপনাকে ওষুধ দিলেন অ্যান্টিবায়োটিক, তিনদিন বা এক সপ্তাহ খেতে হবে। দুদিন পরই রোগ সেরে গেল। বাহ! কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক তো বেজায় দামী ঔষধ, রোগ যখন সেরেই গেছে আর খেয়ে কী লাভ? এসব সাতপাঁচ ভেবে বাদ দিয়ে দেন, তাই না?
আপনি কি জানেন কি ক্ষতি করছেন নিজের? শুধু তাই নয়, আসলে ক্ষতি করছেন কাদের? জানেন এর প্রভাবে কী হতে পারে? আর কতখানি সুদূরপ্রসারী এর ফল সেটা কি আন্দাজ করতে পারছেন? পারছেন না? আসুন, আপনাকে আমি একটু সাহায্য করি।
অ্যান্টিবায়োটিক কী?-অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে সেইসব ঔষধ যারা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা পরজীবী ধ্বংস করে অথবা এদের বিষক্রিয়াকে নষ্ট করে। ব্যাকটেরিয়াজনিত বিভিন্ন রোগে অ্যান্টিবায়োটিক একটি বহুল ব্যবহৃত সফল ঔষধ। গ্রিক ভাষায় অ্যান্টি মানে বিরুদ্ধে, বায়ো মানে জীবন। অর্থাৎ এটি জীবিত মাইক্রোঅর্গানিজমের বিরুদ্ধে কাজ করে।
এখন বলি, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্স সম্পর্কে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্স কী?-যদি এমন কোন ঔষধের বিরুদ্ধে জীবাণুর প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে ওঠে যার প্রতি একসময় জীবাণুটি সংবেদনশীল ছিল ( মানে ঔষধটি জীবাণুর বিষক্রিয়া নষ্ট করতে পারত), তখন সেই প্রতিরোধক্ষমতাকে বলা হয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্স।
এর গুরুত্ব কী?-যদি কোন জীবাণু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্ট হয়ে যায়, তখন তাকে সহজ ভাষায় বলা যায় ড্রাগ রেজিস্টেন্ট হয়ে যাওয়া। এর মানে হচ্ছে, তখন সেই জীবাণুর উপর সাধারণ কোন ঔষধ কাজ করতে পারবে না।
কখন হয়, কেন হয়?-যেহেতু এটা কোন বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ নয়, তাই খুব সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলি। জীবন যার আছে, তারই একটা ধর্মও আছে, যাকে বলা হয় অভিযোজন ক্ষমতা। অর্থাৎ যে কোন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া। এটা মানুষের যেমন আছে, সব প্রাণীরই আছে।আপনি যখন অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন, তখন প্রথমেই কিন্তু জীবাণু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে না। প্রথমেই ঔষধের ক্রিয়ায় জীবাণুর বংশবৃদ্ধি বন্ধ হচ্ছে। তাই আপনি একটু সুস্থ হলেন।তারপর, জীবাণুর কার্যক্ষমতা একটু একটু করে নষ্ট করে দেবে ঔষধ। তখন আপনি মোটামুটি সুস্থ হয়ে গেলেন।কিন্তু সুস্থ হওয়া মানে এই না যে জীবাণু পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। সাধারণত, আমরা এই সময়েই ঔষধ খাওয়া বন্ধ করে দেই। তখনও কিন্তু জীবাণু নষ্ট হয়নি। তখন সে সেই ঔষধের ক্রিয়ার সাথে পরিচিত হয়ে যায়। ফলে ঔষধের বিরুদ্ধে নিজের দেহে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আমরা আক্রান্ত হলে যা করি ঠিক তাই। এর ফলে জীবাণুটি হয়ে গেল, ড্রাগ রেজিস্টেন্ট। এর ফলে সে শক্তিশালী হয়ে একটা নির্দিষ্ট সময় পর আবার আপনাকে আক্রমণ করবে, আপনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
প্রভাবঃ
এই জীবাণুরা ড্রাগ রেজিস্টেন্ট হয়ে গেলে কী ক্ষতি হবে জানেন?
- ১) সাধারণভাবে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক এদের উপর আর কাজ করবেনা।
- ২) নতুন ড্রাগ তৈরি করতে হবে যা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং সমগ্র চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য হুমকি।
- ৩) চিকিৎসা হয়ে যাবে ব্যয়বহুল এবং জটিল, অনেকক্ষেত্রে সাধারণের হাতের নাগালের বাইরে।
- ৪) চিকিৎসা ফলপ্রসূ হবে না, রোগী দীর্ঘদিন যাবত সংক্রমিত থাকতে পারে, অন্যকে সহজে সংক্রমিতও করতে পারে।
- ৫) বড় বড় সার্জারি, অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট যা এখন অনায়াসে হচ্ছে, সেগুলো হয়ে যাবে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ।
করণীয় কী?
- প্রথমত, যখনই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে, অবশ্যই পুরো কোর্সটি সম্পন্ন করতে হবে।
- দ্বিতীয়ত, আপনার চিকিৎসকের কাছ থেকে ভালো করে এই ঔষধ কটা খেতে হবে, কদিন জেনে নিন, বুঝে নিন।
- তৃতীয়ত, কিছুতেই ঔষধ বাদ দেবেন না, সম্পূর্ণ সজাগ থাকুন।
এই লেখাটি সম্পূর্ণ সরল ভাষায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানানোর জন্য এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন সব বয়সের সকল পেশার মানুষ বুঝতে পারেন, এটি বিজ্ঞানের কোন তথ্যপত্র নয়।
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতে “এখানে ক্লিক করুণ” তুলে ধরুন নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। ]]