সবাই জানে, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সিগারেটের প্যাকেটের গায়েও বেশ বড় বড় করে লেখা থাকে ‘ধূমপান ফুসফুস ক্যানসারের কারণ’ কিন্তু তার পরও ধূমপায়ীরা এই সিগারেটের নেশাটা ছাড়তে পারেন না। ধূমপান ছাড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্যক্তিও ‘আজকেই শেষ’, ‘এটাই শেষ’ বলতে বলতে সিগারেট খেতেই থাকেন। প্রশ্নটা হচ্ছে কেন? কেন তাঁরা ছাড়তে পারেন না এই সর্বনাশা নেশাটা?
সিগারেটে একবার টান দেওয়ামাত্রই প্রচুর পরিমাণ নিকোটিন মুহূর্তের মধ্যেই মস্তিষ্কে ক্রিয়া-বিক্রিয়া শুরু করে। নিকোটিনের অণুগুলো মস্তিষ্কের রিসেপটরগুলোকে আঁকড়ে ধরে এবং ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটায়। ফলে ধূমপায়ীরা একটা সুখানুভূতি পেতে শুরু করে। ডোপামিন ছাড়াও এটি এন্ডোজেনাস ওপিওড নামক একটি রাসায়নিক মস্তিষ্কে ছড়িয়ে দেয়। এতে করে ধূমপায়ীরা একটা ইতিবাচক অনুভূতি পেতে পারেন। ২০০৪ সালে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এসব তথ্য দেন।
সিগারেট কোম্পানিগুলোও ধূমপান ছাড়ার কাজটা অনেকগুণ কঠিন করে দিয়েছে। ২০১০ সালে ইউএসএ টুডের একটি রিপোর্টে দেখা যায়, কোম্পানিগুলো সিগারেটে সেসব দ্রব্যের সংযুক্তি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে, যেগুলোর ফলে শুরুর দিকের ধূমপায়ীদের কাছে এটা অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। আর দীর্ঘদিনের ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে নেশাটা আরও বেশি জাঁকিয়ে বসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অ্যামোনিয়ার কথা। সিগারেটে এর উপস্থিতির ফলে নিকোটিন মস্তিষ্কে পৌঁছায় অনেক তাড়াতাড়ি।
ধূমপানটা একেবারে ছেড়ে দিতে গেলে মস্তিষ্কের নিকোটিন গ্রাহকগুলো সক্রিয় হওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে ধূমপায়ীরা যে পরিমাণ ডোপামিন নিঃসরণে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, তার জোগানটাও কমে যায়। তৈরি হয় একটা অহেতুক ‘ফাঁকা ফাঁকা’ ভাব। এমনকি ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, সিগারেট ছাড়ার পর একটা কৃত্রিম হতাশা ও দুশ্চিন্তা মস্তিষ্কে কাজ করে প্রায় ৩১ দিন পর্যন্ত। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার কঠিন পণ করার পরও অনেকে আবার ধূমপান শুরু করেন।
নিকোটিনের প্রভাবটা কিশোরদের শরীরে অনেক বেশি। সে জন্যই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই অনেকে সিগারেটে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় চার হাজার কিশোর-কিশোরী প্রথমবারের মতো সিগারেট খাওয়ার অভিজ্ঞতা নিতে যায়। আর এদের মধ্যে এক হাজার জনের ক্ষেত্রেই এটা নেশায় পরিণত হয়।
যাঁরা ফিল্টারের সাহায্যে বা লাইট সিগারেট খেয়ে ভাবেন যে, এটা শরীরের পক্ষে কম ক্ষতিকর, তাঁদেরও সতর্কবার্তা শুনিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ধূমপানের এই বিকল্প ব্যবস্থাগুলোও শরীরের ক্ষতিকারক দিকগুলো এড়াতে পারে না। বরং এটা সিগারেট একেবারে বাদ দিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাকেই দমিয়ে রাখে।